জাতীয়বাংলাদেশরাজনীতিলাইফস্টাইলসর্বশেষ নিউজ
টাঙ্গাইলে আদালতে এমপি রানাকে হাজির : অভিযোগপত্র গঠন
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামী আমানুর রহমান খান রানা এমপিসহ ১৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে এ অভিযোগপত্র গঠন করা হয়।
বেলা ১১ টায় বিচারক আদালতে বসেন। আসামী পক্ষের করা মামলা পুনঃ তদন্তের জন্য আবেদনের শুনানী হয় প্রথমেই। এছাড়া রানা এমপির উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করা হয়। পুনঃ তদন্তের আবেদন আদালত খারিজ করে দেয়। উন্নত চিকিৎসার আবেদনের শুনানী শেষে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত করেন। রাষ্ট্র পক্ষ ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ৩০২/১২০/৩৪ দন্ড বিধি, মোতাবেক অভিযোগপত্র গঠন করেন। এ মামলায় ১৪ জন আসামী রয়েছে। ৩ জন জামিনে, ৪ জন জেল হাজতে ও বাকী আসামী পলাতক রয়েছে। এর আগে অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে কাশিমপুর কারাকর্তৃপক্ষ এমপি রানাকে আদালতে হাজির না করায় এই হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আটবার পিছিয়েছে। বুধবার সকাল ৯ টায় কাশিমপুর কারাগার থেকে এমপি রানাকে করা নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে টাঙ্গাইল আদালতে আনা হয়। এরপর বেলা ১১ টায় শূনানী শুরু হয়। আদালত চত্বরে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী মনিরুল ইসলাম খান জানান, আইনে বিধান রয়েছে আসামী কারাগারে থাকলে তার উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি করার। ফারুক হত্যা মামলার আসামী আমানুর যেহেতু কারাগারে রয়েছে এবং অভিযোগ গঠনের তারিখ গুলোতে অসুস্থ্যতার কথা বলে তাকে হাজির না করায় শুনানি সম্ভব হয়নি।
এ সময় তিনি জানান, গত ২৩ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে বুধবার সকালে এমপি রানাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আসামী পক্ষের করা উন্নত চিকিৎসার, মামলা পূর্ণ তদন্ত ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন না মঞ্জুর করেছেন আদালত। আগামী ১৮ অক্টোবর এ মামলার স্বাক্ষীর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট জহুরুল ইসলাম জহির জানান, আদালত এ মামলা পূর্ণ তদন্ত ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন না মঞ্জুর করলেও উন্নত চিকিৎসার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ টাঙ্গাইলে তাঁর কলেজপাড়া এলাকায় বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। প্রথমে থানা-পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত শুরু করে। ২০১৪ সালের আগস্টে এ মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন। আদালতে তাঁদের স্বীকারোক্তিতে এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর তিন ভাইয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর থেকে আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান। গত বছর ৩ ফেব্রæারি আমানুর, তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা সহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর এমপি রানা গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর এ আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন।