বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

ঝিনাইদহে রেল পথের জমি দফারফা : ১৬১ শতক জমির মধ্যে আছে মাত্র ৫ শতক!

ঝিনাইদহে রেল পথের জমি দফারফা ১৬১ শতক জমির মধ্যে আছে মাত্র ৫ শতকমোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : ঝিনাইদহে রেল পথের জমি দফারফা হয়ে গেছে। যে যেরকম পেয়েছে কাগজপত্র তৈরী করে ভোগদখল করে নিয়েছেন। সেই জমির উপর উঠেছে বিশাল বিশাল ভবন। এখন রেলপথটি হয়েছে মহাসড়ক, আর ষ্টেশনের জায়গা দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট ও বাড়ি।

দখলকারীরা ৯৯ বছরের ইজারার কাগজ দেখিয়ে জমিগুলো নিজেদের দাবি করছেন। আর রেলওয়ের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন তারা যে কাগজ দেখাচ্ছে তা ঠিক নয়। ইতিমধ্যে তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। মামলা ঠুকে বিলম্বিত করছেন দখলকারীরা। রেলওয়ে এই জমি ফেরত নিতে ইতিমধ্যে ৪২ টি আপত্তি মামলা দায়ের করেছেন।

তথ্য রিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন ঝিনাইদহ জে.জে রেল কোম্পানীর ষ্টেশনের জমির প্রায় ৫ একর (১৬১ শতক) জমি দখল করে রেখেছেন দখলকারীরা। কিছু জমি ইতিপূর্বে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাতিল হলেও দখলকারীরা জমি ছাড়েননি। বর্তমানে মাত্র ৫ শতক জমি আছে রেল বিভাগের।  এদিকে সম্প্রতি ঝিনাইদহ শহরের উপর দিয়ে রেলপথের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

স্থানিয়রা ফরিদপুর থেকে মাগুরা হয়ে মেহেরপুর মুজিবনগর পর্যন্ত ভায়া ঝিনাইদহে রেথপথ নির্মানের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। অনেকে পুরাতন রেলষ্টেশনের জমিও দখলমুক্ত করার প্রয়োজন বলে মনে করেন। এই আন্দোলনের আহবায়ক খন্দকার হাফিজ ফারুক বলেন, তারা আন্দোলন করছেন রেলপথ পুণঃস্থাপনের। তাহলেই রেলওয়ের সকল জায়গা ফেরত আসবে, ফেরত নিতে হবে বে-দখল হয়ে যাওয়া ষ্টেশনের জায়গা।

ঝিনাইদহ শহরের প্রবীন ব্যক্তি, রেলপথের দাবিতে চলমান আন্দোলনের নেতা বাবু নন্দ দুলাল সাহা জানান, এক সময় তারা ট্রেনে করে যশোর যেতেন। যশোর জেলা সদরে প্রশাসনিক কাজে যেতে হতো। ঝিনাইদহ থেকে ট্রেনে করে যশোর নিয়ে যেতেন জে. জে. আর (যশোর ঝিনাইদহ রেলওয়ে) কোম্পানী। যার ষ্টেশন ছিল শহরের শেরেবাংলা সড়কে। যেখানে বর্তমানে একাধিক মার্কেট গড়ে উঠেছে।

তিনি আরো জানান, ১৯৫০ সালের পরবর্তী সময়ে রেলপথের পাশ দিয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়। স্থানিয় কয়েক ব্যক্তি যাত্রী পরিবহনে এই বাস চালু করেন। তারা ট্রেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করেন। বাস মালিকেরা যাত্রী ধরতে যাত্রীদের নানা উপহারের পাশাপাশি যারা যশোর যেতে চাইতেন তাদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ট্রেন হেরে যায়। তুলে নেওয়া হয় চলাচলকারী ট্রেনগুলো। বিলুপ্ত হয়ে যায় জে. জে. আর কোম্পানী। পরবর্তী সময়ে বাস চলাচলের সুবিধার্থে রেলপথ উঠিয়ে সেখানে ইটের রাস্তা তৈরী করা হয়, যা বর্তমানে পিচঢালা পথ। ফলে রেলপথ হয় পাঁকা সড়ক, আর ষ্টেশনের জায়গা পড়ে থাকে।

ঝিনাইদহ পৌর ভুমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সিএস রেকর্ডে পূর্বে ঝিনাইদহ শহরের শেরেবাংলা সড়কে রেলওয়ের ষ্টেশনের ১৬১ শতক জমি ছিল। ১২৫ নম্বর ঝিনাইদহ মৌজায় ৮২৩/৮৭২, ৮২৩/৮৭৩, ৮২৩/৮৭৪, ৩১৮/৯০৬ সহ কয়েকটি দাগে ছিল এই জমি। পরবর্তীতে সিএস রেকর্ডে মাত্র ৬৩.৫০ শতক জমি রেলওয়ের নামে রেকর্ড হয়। সর্বশেষ আর.এস রেকর্ডে যা এসে দাড়ায় মাত্র ৫ শতক। সেটাও জমির শ্রেণীতে দোকান বলে উল্লেখ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই জমির মধ্যে জনৈক ফসিয়ার রহমানের ১৭ শতক, খয়বার আলীর ১৩ শতক, সালাউদ্দিন আহম্মেদের ৮ শতক, আবু জাফর মিয়ার ১০ শতক, জামাত আলী বিশ্বাসের ৮.৫ শতক, জামাত আলী ও আকবার আলীর ৭ শতক নামে রয়েছে। এছাড়া তথ্যের সন্ধানে দেখা গেছে ১৯৮৬ সালে শহরের শেরেবাংলা সড়কের বেশ কয়েকজন রেলওয়ের জমি বন্দোবস্তও নেন।

এর মধ্যে জালাল উদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা বেগম ১৬ শতক, শেখ হাবিবুর রহমান ৫ শতক, আবু জাফর গং ১২.৫ শতক, মৃত জামাত আলীর স্ত্রী জয়নব বিবি ৮.৫ শতক, গোলাম খয়বরের ১০ শতক, ফজলুল হক গং এর নামে ৬ শতক, জামাত আলী গং ৭ শতক, সালাউদ্দিন গং ৮ শতক, আব্দুল ওহাব এর ৮ শতক, ফসিয়ার রহমান ১৪ শতক রয়েছে।

২০০৮ সালের ৬ আগষ্ট ওই সকল বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে। আরো কিছু ব্যক্তির দখলেও কিছু জমি রয়েছে। যার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দখলে থাকা একজন আবু জাফরের পুত্র মোবারক হোসেন জানান, তার বাবা ১৯৬২ সালের পূর্বে এই জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেন। এ সময় ৯৯ বছরের জন্য দলিল করে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। যার উপর ভিত্তি করে তারা নামখারিজ করেছেন, এবং নিয়মিত খাজনা দিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৮৬ সালে আবারো বন্দোবস্তের কারন জানতে চাইলে বলেন, পূর্বের দলিল হারিয়ে যাওয়ায় নতুন করে নিতে হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ বন্দোবস্ত বাতিল হওয়ার বিষয়ে বলেন, এই বাতিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। যতদিন সমাধান না হচ্ছে ততদিন জমি তাদের। অবশ্য রেলওয়ের খুলনা অঞ্চলের কানুনগো জিয়াউল হক জানান, তারা এই জমি ফেরত নিতে পক্রিয়া শুরু করেছেন। ভুমি জরিপ অফিসে ৪২টি আপিল দিয়েছেন। আশা করছেন জমি ফেরত পাবেন। আর পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানান, দখলকারীরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে জমি দখলে রেখেছেন। এগুলো ফেরতের উগ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Tags

Related Articles

Close