জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

সখীপুরে বিজয়ের মাসে বীরনিবাসে উঠে পড়েছেন এক নারীসহ ৯জন বীরমুক্তিযোদ্ধা

sakhipurসিরাজুস সালেকীন সিফাত, সখীপুর (টাঙ্গাইল): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ওরা লড়েছিল। প্রাণের ভয় ওরা করেনি। ওই সময় ওরা ছিল সাহসী। যুদ্ধের ৪৬ বছর পর ওদের মনোবল না ভাঙলেও ওদের গায়ে-গতরে সে শক্তি নেই। ওরা অস্বচ্ছল। অনেকে ভূমিহীন। সখীপুরের সেই অকোতভয় এক নারীসহ নয়জন বীরের জন্য সরকার নয়টি পাকাবাড়ি করে দিয়েছেন। বাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বীরনিবাস’। ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ইতিমধ্যে নির্মাণাধীন এসব বাড়ির বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু বাড়ির টুকিটাকি কাজ বাকি থাকলেও বিজয়ের মাসেই ওই নয়জন বীর তাঁদের নতুন বাড়িতে অনানুষ্ঠানিকভাবেই উঠে পড়েছেন।

যাঁরা বাড়ি পেয়েছেন তাঁরা হচ্ছেন- উপজেলার একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা বহেড়াতৈল গ্রামের ফাতেমা বেগম, তক্তারচালা গ্রামের মহাদেব সরকার, বাঘেরবাড়ি গ্রামের আবদুল মান্নান, কালমেঘা গ্রামের নঈম উদ্দিন, আমতৈল গ্রামের মতিয়ার রহমান, ঘোনারচালা গ্রামের আফছার উদ্দিন, নলুয়া গ্রামের জিয়ারত হোসেন, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নূর মোহাম্মদ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন খান।

সখীপুর এলজিইডির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৭২ লাখ ২১ হাজার ৫৭০ টাকা ব্যয়ে বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সখীপুর উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ আল কুদ্দুছ জানান, ‘বীর নিবাস’গুলো ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার। লাল-সবুজের রঙে রাঙানো বাড়ির নাম ‘বীর নিবাস’ দেওয়া হয়েছে। ৫০০ বর্গফুটের বাড়িতে দুটি শোবার কক্ষ, একটি বসার কক্ষ, একটি রান্নাঘর এবং একটি বারান্দা রয়েছে।

এছাড়াও বাসস্থানের বাইরের দিকে রান্নাঘর সংলগ্ন একটি পাকা উঠান, টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন, লাইভস্টক-শেড এবং একটি  পোলট্রি  শেডেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ওসমান গণি প্রথম বলেন, ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আরও বলেন, শিগগিরই উপজেলায় আরও ৪ জন ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বীরদের জন্য চলমান ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের  লাল সবুজের একতলা ভবন ‘বীর নিবাস’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি একটি বিরল প্রকল্প’।

এক সপ্তাহ আগে বীরনিবাসে ছেলে- মেয়ে ও নাতি নাতনিদের নিয়ে উঠে পড়েছেন উপজেলার বহেড়াতৈল গ্রামের বাসিন্দা এবং সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা বেগম। তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তাঁর থাকার একটু জায়গাও ছিল না। প্রয়াত সাংসদ কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান তাঁকে কিছু জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে একটি পাকা বাড়িও করে দিলেন। যা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। ভাতা, জমি ও পাকাবাড়ি পেয়ে ফাতেমা দারুণ খুশি।

একইভাবে ‘বীর নিবাস’ পাওয়া অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও এ প্রতিবেদকের কাছে তাঁদের খুশি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

Related Articles

Close