অণুগল্পসাহিত্য

শূন্যতা…

shonnotaশাহরিয়ার রিপন ।। শুনেছি প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ কবি হয়। আমি কবি হতে পারিনি। কিন্তু জীবনকে বুঝতে শিখেছি, বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে শিখেছি।

বছর কয়েক হবে। ঈদের দিন আমার মনের মানুষ কথা’র সাথে দেখা করার কথা। তাই ঈদের কয়েক দিন আগ থেকেই তার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু। কিভাবে যে ঈদ এসে পড়লো তা টেরও পেলাম না। কথামতো ঈদের দিন বিকেল বেলা চললাম কথা’র সাথে দেখা করতে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সব কিছু গুছিয়ে ফেললাম আমি কী কী বলব। বেশ কয়েকবার তার ট্রায়ালও দিলাম। আজ যেভাবেই হোক কথা কে নিয়ে মনের মত করে ঘুরে বেড়াব। আজ আমি আমার কথাকে গান শোনাব, শোনাব আমার জীবনের স্বপ্নীল সব কল্পকাহিনী।

 

এত্ত্বসব ভাবতে ভাবতে নির্ধারিত জায়গায় হাজির। দেখলাম ঐ দূরে দু’জনকে দেখা যায়। অনুমান করতে অসুবিধা হলোনা আমার কথা আমাকে দেয়া কথা রাখতে যাচ্ছে। অবশেষে কথার দেখা মিলল। তার চাচাতো বোনকে নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির। সেদিন তাকে কেমন দেখিয়েছিল তার  বর্ণনা আমার পক্ষে দেওয়া বোধ করি কোন মতেই ঠিক হবেনা। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তার সুঢৌল দেহায়বয়ব আর দুচোখের চাহনি যে কোন পুরুষের মনকে আন্দোলিত করার পুরো সক্ষমতা রাখে। পরনে তার লাল শাড়ি। শাড়িতে বেশ কাজ করা। তাকে শাড়িতে এত্ত্ব মানিয়েছিল যে আজ অবধি আমার চোখে সেদিনের সেই কথার মত কেউ আমার মনে শিহরণ জাগাতে পারেনি। কথার সমস্ত শরীরে সুন্দরের ঝর্ণা ধারা বইলেও তার দু’চোখ অশ্র“তে টলমল করছিল। আমি তখনো বুঝতে পারিনি আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। আমি তখনো আমার স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ করছিলাম। হঠাৎ টলমল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল কথা। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল, “আমাকে ক্ষমা করো, তোমাকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারিনি”।

তখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি কথা কী বুঝাতে চাইল। কথার চাচাতো বোন যা বলল তাতে বুঝা গেল, ঈদের আগের দিন সরকারি কর্মকর্তার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সপ্তাহ খানেক পর বিয়ের অনুষ্ঠান। কথাটি শোনা মাত্র আমার মন পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল। সকল ভাষা হারিয়ে ফেললাম আমি। কথাকে কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এভাবেই আমাদের শেষ দেখার পরিসমাপ্তি ঘটে। আজ অবধি আমার কথার সাথে কখনো যোগাযোগ হয়নি। ঈদ এলেই কথার শূন্যতা আমার মাঝে ভর করে। জানিনা আমার এ শূন্যতা কভু পূরণ হবে কিনা।

Email: shahriarrepon2025@gmail.com

Tags

Related Articles

Close