ফিচার

রাতের ভ্যানগাড়িতে খিচুড়ি না, যেন অমৃত! মাত্র ২০ টাকা প্লেট!

রাফিউজ্জামান রাফিঃ এ শহর বড় বহুরুপী শহর। রাতে ও দিনে পালা করে সে রুপ পাল্টায়। দিনের শহরের চিরচেনা মুখ আমাদের সকলের খুব চেনাজানা হলেও তার রাতের রাতের চেহারাটা এ শহরের অধিকাংশ নাগরিকেরই অচেনা। সে রুপ চেনে শহরের টহলকারী পুলিশ, গভীর রাতে শহরের বুকে দাগ কেটে গর্জন করতে করতে চলে যাওয়া দানব ট্রাক, ফুটপথে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করা লোকগুলো, রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ভিখারি ও ভবঘুরে। রাতের পাল্টে যাওয়া শহরের সাথে সখ্যতা করার লোভটা আমারও কিছুটা রয়েছে। তাই নানান ছুতোয় বেরিয়ে পড়ি মাঝে মাঝে।

Image may contain: 1 person, standing

এর একটি ছুতো হচ্ছে রাস্তার খাবার। কদিন আগে শুনেছিলাম পান্থপথ সিগন্যালে পুলিশ চেকপোস্টের কাছে ভ্যানে করে ২০ টাকা প্লেট খিচুড়ি বিক্রি হয়। সে খিচুড়ির নাকি মন মাতানো স্বাদ! খিচুড়ি আমার প্রিয় খাবারের তালিকায় ১ম স্থানে থাকায় শুনেই জিভে জল এসে পড়েছিল। সিগন্যালের কাছেই আমার বাসা। ঘরের এত কাছে এমন অমৃত বিকিকিনি হয় আর আমি খাবো না? আজ এ শহরে মধ্যরাত হানা দিতেই দলবল নিয়ে আমরাও হানা দিয়েছিলাম পান্থপথ সিগন্যালে। গিয়ে দেখি আমাদের মতো আরও অনেকেই ভীড় করে আছে খিচুড়ির ভ্যান ঘিরে। সে দলে আছে রিকশা ওয়ালা, আছে ভবঘুরে, আছে ছাত্র, আছে চাকুরীজীবি। তাই দেখে মনে হলো, এই খিচুড়ি যেন এখানে সাম্যের গান গাইছে! সকল তলার মানুষগুলোকে এক কাতারে দাড় করিয়েছে। এমন সাম্যবাদী খিচুড়ি কি না খেয়ে থাকা যায়।

আমরাও শরীক হলাম। আলু ভর্তা, ছোট্ট এক টুকরো লেবু (চাইলে একাধিক টুকরোও দেয়) শশার সালাদ, মাংশের ঝোল সমেত সে খিচুড়ি মুখে পুরেই মনে হলো, এ যে অমৃত মুখে পুরেছি! গোগ্রাসে দুই প্লেট সাবাড় করে বিল দিতে গিয়ে মনে হলো আমি শায়েস্তার খাঁ’র আমলে বাস করছি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির যুগে ২০ টাকা প্লেট খিচুড়ি ও মাংস কিংবা ডিমসহ ৪০ টাকা প্লেট টাকায় আট মন চালের চেয়ে কম কিসে?

খিচুড়ি পালা শেষ করে পাশেই দেখি ছোট্ট ঠেলাগাড়ি ঘিরে আরেকটি জটলা। ওটা আবার কি? কাছে গিয়ে দেখি তেলে ভাজা রুটি ও হালুয়া। আহা, এ তো আমার আরও প্রিয়! বিশাল সাইজের সে রুটিগুলো রুটি বিক্রেতা হাত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে তার মধ্যে হালুয়া ভরে ক্রেতাদের দিচ্ছে। দৃশ্যটি অনেকটা দরগায় সিন্নি বিলানোর মতো। দাম জানতে চাইলে বললো ২০ টাকা করে। আমি নিয়ে নিলাম একটি রুটি ও হালুয়া। তেল চুপচুপ পরোটা হালুয়া দিয়ে মুখে পুরে দিতেই অসাধারণ অনুভূতি! মনে মনে ভাবলাম, ‘ এমন অমৃত রেখে মানুষ কেন যে ছাতার মাথা খেয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করতে বড় বড় রেস্টুরেন্টে যায়!’

Image may contain: food and text

আরাম করে খেলাম। আরও খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু গ্যাস্ট্রিক আশকার পেতে পারে বলে পেট ও মুখকে সান্ত্বনা দিয়ে একপেট ও এক জিভ তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম।

(বিঃদ্রঃ খিচুড়ি মনে হয় এখানে বেশিদিন আর পাওয়া যাবে না৷ কারণ ইতিমধ্যেই তা মার্কেটের মালিকের (যপ মার্কেটের সামনে সরকারী রাস্তায় ভ্যানটি দাড়ায়) কুনজরে পড়েছে। সে পুলিশকে অভিযোগ করেছে ভ্যানটি নাকি তার মার্কেটের পরিবেশ নষ্ট করছে। যদিও ঐ রাস্তায় পরিবেশের কি আছে আর তা নষ্টের কি আছে আমি কিংবা আল্টিমেটাম দেয়া পুলিশ সদস্যটি কিলবা খিচুড়ি বিক্রেতা কেউ খুজে পাইনি। তবে মার্কেটের মালিক বেরসিক। তিনি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানাবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন। তাই আশেপাশে আমার মতো ভোজন রসিক যারা আছে তারা দ্রুত ঢু মারতে পারেন।)

Tags

Related Articles

Close