বাংলাদেশ
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছে নতুন মুখ
নিজস্ব প্রতিবেদক;নিউজরুমবিডিঃ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছে নতুন মুখ এমন আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। এক্ষেত্রে উত্তরের সভাপতি এবং দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে গত তিন বছরে দুই অংশের নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে। কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের বিনিময়ে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পার্টির ক্যাডারসহ মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিতদের দলে নেওয়ার অসংখ্য লিখিত অভিযোগও কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা আছে। এসব বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন কমিটি গঠনের কথা আলোচনায় রয়েছে।
এসব বিষয় বিবেচনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে ঢাকার দুই মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে। স্বাভাবিক কারণেই বর্তমান কমিটির বেশির ভাগ নেতাই বাদ পড়ার ঝুঁকিতে আছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন আগামী ৩০ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। এক মঞ্চে নগরের দুই অংশের এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে হঠাৎ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে ইচ্ছুক নেতারা লবিং-তদবির করছেন ব্যাপকভাবে। অনেকেই দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির তৎপরতাও চালাচ্ছেন তারা।
আবার বর্তমান নেতারা স্বপদে বহাল থাকতে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা তৎপরতা। দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা বলছেন, নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী, দক্ষ, বিতর্কমুক্ত, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে। উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এর তিন বছর পর নগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ, ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
মহানগর উত্তরে একেএম রহমতুল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে হাজি আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর উত্তর : ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ স্বপদে বহাল থাকতে আগ্রহী। তবে তার বিরুদ্ধে উত্তর অংশের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণের ক্ষেত্রে কমিটিবাণিজ্য এবং অর্থের বিনিময়ে নানা অপকর্মে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিতদের ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যে কোনো একটির সভাপতি পদে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের নামও আলোচনায় রয়েছে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকেও উত্তরের সভাপতি পদে আনার কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খান সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপর রয়েছেন। নগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান স্বপদে বহাল থাকার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া নগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান এবং দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চাইছেন। মহানগর দক্ষিণ : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি হাজি আবুল হাসনাত আবারও একই পদে থাকতে চাইছেন। তবে বয়সজনিত কারণে এবার বাদ পড়তে পারেন পুরান ঢাকার এ বাসিন্দা। এ কারণে সভাপতি পদে তার স্থলাভিষিক্ত হতে বেশ কয়েকজন নেতা সক্রিয় রয়েছেন।
সভাপতি পদে জোরালো আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সভাপতি পদের আরেক শক্ত প্রার্থী। সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপর রয়েছেন,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, আওলাদ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির এবং কে এল জুবিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায় সমর। নগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ স্বপদে থাকতে আগ্রহী। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে একজন ‘আদি ঢাকাইয়া’কে আনার রীতি চালু রয়েছে আওয়ামী লীগে।
ওই হিসেবেই আবুল হাসনাতকে সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবার সভাপতি পদে সেরকম যোগ্য কাউকে পাওয়া না গেলে সাধারণ সম্পাদক পদে একজন ‘আদি ঢাকাইয়া’কে আনা হতে পারে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের ছেলে ওমর বিন আবদুল আজিজ তামিম। তিনি নগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক । পুরান ঢাকার ছেলে হিসাবে গাজী আবু সাঈদ সুনাম রয়েছে। বর্তমান সুত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন,তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু:সময়ে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে আরও তৎপর রয়েছেন মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, গোলাম আশরাফ তালুকদার, অ্যাডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আকতার হোসেন। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এফ এম শরিফুল ইসলামের নাম শুনা যাচ্ছে । তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।