ক্যাম্পাসবাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
শৈলকুপা সরকারী ডিগ্রী কলেজের বেহাল দশার জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষই!
মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : ঝিনাইদহের শৈলকুপা সরকারী ডিগ্রী কলেজ এ অঞ্চলের শিক্ষা-দিক্ষা ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি বহু চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে ১৯৯২ সালে সরকারীকরণ হয়। শৈলকুপার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ কলেজটির রেজাল্ট বরাবরই চোখে পড়ার মতো। এ অঞ্চলের শিক্ষানুরাগীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলেজটি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পদাচারণায় মুখোরিত থাকে। সুন্দর অবকাঠামো আর চোখ ধাঁধাঁনো সবুজ ক্যাম্পাস নজরে আসে সবার।
তবে সরকারীকরণ হওয়ার সাথে সাথে ক্রমাবনতি ঘটতে শুরু করে। কমতে থাকে শিক্ষার্থী সংখ্যা, কমতে থাকে পাশের হার, প্রাচীন এই মহাবিদ্যালয় এ অনার্স কোর্স চালুর দাবি সব মহলের, তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবরই এ ব্যাপারে অনীহা দেখিয়েছে এবং দেখাচ্ছে। এ সংক্রান্ত বোর্ড কাগজপত্র বারবার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। কলেজে কোন সাংকৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রিড়া অনুষ্ঠান হয় না। শৈলকুপা সরকারী ডিগ্রী কলেজে এমন হাজারো উপেক্ষা আর শনি’র চক্র আজো রয়েছে।
এ ধারা আজো অব্যাহত। বৃহৎ এ উপজেলার কলেজটিতে একতলা একটি হোস্টেল থাকলেও তা পরিত্যক্ত। সর্বশেষ কলেজটির জৌলুস ফিরিয়ে আনতে বহু আগ থেকে বারবার প্লান দেয়ার পর অবশেষে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে আবাসিক হোস্টেল নির্মানের চাহিদাপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের, এলাকাবাসীর দুর্ভাগ্য যে বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আব্দুস সোবহান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক বরাবর তাদের প্রেরিত ছকে গত ২৭ জুলাই (সূত্র: ৩৭.০২.০০০০.১০৯.১৪.০৩৫(অংশ-১).১৭-৬৯৬,তারিখ-২৩/০৭/২০১৭খ্রি:) লিখে দিয়েছেন ‘বর্তমান অবস্থায় কোন ছাত্র হোস্টেলের প্রয়োজন নেই,’ ছাত্রী হোস্টেলের ছকেও লিখে দিয়েছেন ‘বর্তমান অবস্থায় প্রয়োজন নেই’।
কেন প্রয়োজন নেই তা জানতে সরেজমিনে কলেজে গেলে প্রিন্সিপাল কে পাওয়া যায়নি, কথা হয় কলেজটির উপাধ্যক্ষ মো: শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি সরাসরি নাকোচ করে দিলেন হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা। বললেন, ‘কি লাভ, হোস্টেল হলে চামচিকা বাসা বাঁধবে, শিক্ষার্থী কই, মারামারি হবে, মাদকের আড্ডা হবে, দরকার আছে এসবের, এমনিতেই জনবল কম, ওসব দেখবে কে’?
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ৬একর ১শতক জায়গা রয়েছে কলেজটির অনুকুলে। বাউন্ডরীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৪একর জায়গা। আর এখানে একটি একতলা হোস্টেল ছিলও। বর্তমানে সেখানে সুদৃশ্য বহুতল হোস্টেল নির্মান করা সম্ভব। যেখানে দূর-দুরান্তের শিক্ষার্থীরা থেকে লেখা-পড়া করতে পারবে। পাবে সরকারী সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু এসবের বিপরীতে এ কেমন চিত্র উঠে আসছে শিক্ষক-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে? বিষয়টি নিয়ে হতাশা দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে, তারা অবিলম্বে চান কলেজটিতে হোস্টেল নির্মান হোক। কলেজছাত্র রনি খান জানান, এটা তাদের জন্য দুর্ভাগ্য, হোস্টেল খুবই দরকার ।
বর্তমানে কলেজটির শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে কমতে দাড়িয়েছে ৯’শ ৬৩জনে। এর মধ্যে ৫৫৩জন ছেলে বাকী সব মেয়ে । এখানে শিক্ষক রয়েছেন ২২জন তবে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৩জনের। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর ৩টি পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র ১জন। আর চতুর্থ শ্রেণীর ৮টি পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৩জন। এসব পূরনেও কোন মাথা ব্যাথা নেই কর্তৃপক্ষের! শৈলকুপা সরকারী ডিগ্রী কলেজে চলছে দুরবস্থা।
চলতি এইচএচসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে মাত্র ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এ কলেজ থেকে। এ+ পেয়েছে মাত্র ৪ জন, মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩শ ৮৮ জন, পাশ করেছে, ১শ ৭৩ জন। এসবের দায় কতটা নিবেন শিক্ষকরা? মাস গেলে সরকারী বেতন, ভাতা, টিএ, ডিএ এই কি লক্ষ? প্রশ্ন শিক্ষকদের শিক্ষা কে ঘিরে, জবাবদিহিতার কথা বাদ দিলেও দায়বদ্ধতার কোন জায়গাতে আছেন কি কলেজ কর্তৃপক্ষ?