বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
মধ্যপাড়া খনির ১৪ মাসেও পাথর উত্তোলন শুরু হয়নি
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের মধ্যপাড়া খনিতে ১৪মাস ধরে পাথর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় খনির প্রতিমাসে লোকসান হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ইতিমধ্যে লোকসান হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা।
গত জানুয়ারি মাস থেকে কয়েকদফা নির্দিষ্ট দিন-তারিখ দিয়েও এখন পর্যন্ত খনি ভূ-গর্ভে স্টোপ উন্নয়ন কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি।
সবশেষ চলতি মাসের মধ্যে স্টোপ উন্নয়ন কাজ শেষ করে পাথর উত্তোলন শুরু করার কথা বলেছিল জিটিসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যন্ত্রপাতি সংযোজন ও বসানোর কাজই শেষ হয়নি। কাজের গতি অত্যন্ত মন্থর। স্টোপ উন্নয়ন করে পাথর উৎপাদনে যেতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রধান খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেশিনসহ প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুপমেন্টের (যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ) অভাবে স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় মজুদ শেষ হয়ে যায়। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ গ্রানাইট শিলা খনিটি ২০০৭ সালের ২৫ মে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এর আগে এত দীর্ঘ সময় ধরে কখনই পাথর উৎপাদন বন্ধ থাকেনি।
জানা গেছে, জিটিসি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুপমেন্ট আমদানির জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র দেয়। সে সময় যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য মালামালের বাজারমূল্য ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জিটিসির সঙ্গে খনির কর্তৃপক্ষকের মতবিরোধ দেখা দেয়।
পরে খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার হস্তক্ষেপে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় খনি কর্তৃপক্ষ। জিটিসির অনুকূলে খোলা হয় ৩৬টি এলসি।
সূত্র জানায়, প্রধান খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেশিন ভূ-গর্ভে বসানো হয়েছে। সারফেজে ক্র্যাশিং ও সর্টিং প্লান্টে যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে মাচিং লোডার এবং ড্রিলিং জাম্বু মেশিন সংযোজন ও বসানোর কাজ চলছে। এখনও খনি ভূ-গর্ভে রোডওয়েতে রেললাইন বসানোর কাজ চলছে। সব মিলে চলতি ডিসেম্বর মাস থেকেই স্টোপ উন্নয়ন কাজ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওরঙ্গজেব জানান, প্রায় ১০০ কোটি টাকার আধুনিক মাইনিং ইক্যুপমেন্ট এরই মধ্যে খনির ভূ-গর্ভে স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকেই পাথর উত্তোলন শুরু হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খনির উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড-জিটিসির মহাব্যাবস্থাপক মোঃ জামিল হোসেন জানান, উৎপাদন কাজে আধুনিক ইক্যুপমেন্ট সংযোজন করায় উৎপাদন আগের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
অপরদিকে, ১৪ মাস ধরে বেকার হয়ে পড়া প্রায় ১০০০ খনি শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বেকার হয়ে বসে থাকা খনি শ্রমিক মামুন জানান, খনি কতৃপক্ষ বার বার আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত পাথর উত্তোলন শুরু হয়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকদিন খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন। পরিবার চালাতে এখন বাধ্য হয়ে বালুর ট্রলির শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, প্রায় সব শ্রমিকেরই এই অবস্থা।
এদিকে পদ্মা সেতুতে মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রির সম্ভাবনা থাকার পরও তৃতীয় কোনো পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় ষড়যন্ত্রের কারণে পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করার আহবান জানিয়েছেন খনির সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে দেশীয় উন্নতমানের পাথর পদ্মা সেতুতে ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পেছনে শক্ত কোনো হাত থাকা অস্বাভাবিক নয়। তারা আরো জানান, দেশে নদীশাসন, সেতু, ভবন ও সড়কসহ সব ধরনের নির্মাণকাজে পাথরের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে পাথর আমদানি করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। অথচ মধ্যপাড়ার পাথর উন্নতমানের হওয়ার পরও এই পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে।