বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
আশ্বিনের জোয়ারে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে যমুনা পারের মানুষ
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে ঢুবে গেছে কৃষকের ফসল গেল কয়েক দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই উজানের ঢলে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি আবারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেলো ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরীর নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চল। ইতিমধ্যে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। এছাড়াও পঞ্চম দফার এ বন্যায় ভেস্তে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। হাজার হাজার একর জমির রোপা আমন, বীজতলা ও সবজি বাগান পানির নিচে চলে গেছে। বুকভরা আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে চরা দামে চারা ক্রয় করে যে রোপা আমন কৃষক লাগিয়ে ছিলেন তা এখন পানির নিচে।
হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ায় যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। সম্প্রতি বন্যার পানিতে জেলার ১১টি উপজেলার প্রায় পাঁচশ’ গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। এখনও অনেক এলাকায় বন্যার পানি রয়েই গেছে। তার মধ্যে আবারও পানি বৃদ্ধি। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে এসব এলাকার লোকজনের মাঝে।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনার পূর্ব পাড়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় আছে। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেক পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না। নেয়া হচ্ছে না ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা। প্রতিবছর টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড লোক দেখানো কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও তা কোনও কাজেই আসছে না। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে তারা। ভালকুটিয়া গ্রামের আজাহার বলেন, দীর্ঘ বন্যার পর যমুনার পানি কমতে শুরু করায় একটু স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলাম। হঠাৎ আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।
গাবসারা গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, একদিকে করোনা, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। দুই মিলিয়ে আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তার মধ্যে আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মহীন হয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আরও দুয়েক দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আর যে সমস্ত এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সে সমস্ত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।