বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
টাঙ্গাইলে যমুনায় কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ: ত্রাণের জন্য হাহাকার
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে, নিউজরুমবিডি.কম: প্রমত্তা যমুনা নদীর পানি বুধবার সকাল থেকে কমতে শুরু করলেও ক্রমশ বাড়ছে জনদুর্ভোগ। খাদ্য- শিশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়। ইতোমধ্যে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ। কর্ম না থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে পানিবন্দী এবং বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। তবে কোন জায়গায় এখনো ত্রাণ না পৌঁছায় ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে বন্যা কবলিত এলাকার জনসাধারণ। এ নিয়ে বন্যাকবলিতদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বিভিন্ন এলাকার রাস্তার দুপাশে কোনমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই নিয়েছে বানভাসী মানুষেরা। ৩/৪টি টিন দিয়ে ছাপড়া ঘর তৈরি করে পরিবার পরিজনসহ গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে জড়াজড়ি করে কোন রকমে দিনরাত কাটাচ্ছে বানভাসী অসহায় মানুষেরা। আবার কেউ কেউ নিজ বাড়িতেই পানি বন্দি অবস্থায় অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে চারটি ইউনিয়নে হাজার হাজার একর আবাদি জমি বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বন্যায় উপজেলার প্রায় ৩৭টি স্কুলে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ফলে সেসব স্কুলে বন্ধ রয়েছে পাঠদান কর্মসূচি।
উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের চরশুশুয়া গ্রামের মো. খোকন মিয়া বলেন, বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। কোনমতে নিজবাড়িতেই মাচা পেতে আশ্রয় নিয়েছি। দিন মজুরের কাজ করলেও এখন তাউ করতে না পারায় অভাব নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। আমাদের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। সরকারি বেসরকারি কোন সহযোগিতা আমাদের কাছে পৌঁছেনি। তিনি আরো জানান, বন্যায় তাদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিতে শুরু করেছে।তবে কোন সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল টিম এখন পর্যন্ত আসেনি। রামাইল গ্রামের সুমন নামে এক ব্যক্তি জানান, দিন চালাতে হচ্ছে। সরকারিভাবে কোন সহায়তা দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। একই ইউনিয়নের ভদ্রশিমুল গ্রামের কবির হোসেন জানান, একদিকে যমুনার ভাঙনে বাড়ি ঘর হারিয়ে দুরে আশ্রয় নিয়েছি সেখানে আবার বন্যার পানিতে ঘর তলিয়ে গেছে। কষ্ট আমাদের পিছু ছাড়ছেনা। এ পর্যন্ত কোন সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা এলাকায় পৌঁছায়নি বলেও জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর মোহাম্মদ জাহিদুল কবির তুহিন বলেন, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এদের মধ্যে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান একেবারে বন্ধ রয়েছে। আর বাকি বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকলেও চারদিকে পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছেনা। তবে ইতোমধ্যে এসব বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অর্জুনা ইউনিয়নের তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরশুশুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামার বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বানির বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গাবসারা ইউনিয়নের কাশিহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভদ্রশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ভদ্রশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বিহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিকরাইল ইউনিয়নের চর কোণাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল বন্ধ রয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ত্রাণ আমাদের মাঝে পৌঁছেছে। আমরা ইউনিয়ন ভিত্তিক ত্রাণগুলো আজ পাঠিয়ে দিব। আগামীকাল সেগুলো বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার খুব শিঘ্রই মেডিকেল টিম গিয়ে চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হবে।