বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
ঝিনাইদহে সাপের ভয়ে পাঁকা বাড়িঘর ভেঙ্গে বাড়ি ছাড়লো তিন পরিবার
মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : সাপের অভিশাপ লেগেছে, এই বিশ্বাসে পাঁকা বাড়িঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তিনটি পরিবার। সদর উপজেলার দক্ষিণ-দূর্গাপুর গ্রামের তিন ভাই গত বুধবার থেকে বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছেন। ২ শত গজ দূরে আরেকটি জমিতে নতুন করে বাড়ি তৈরী করছেন।
এরা হচ্ছেন নূর আলী শেখ, আবুল কাশেম শেখ ও আব্দুস সামাদ শেখ। পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘরে উঠা একটি সাপ মেরে পুড়িয়ে ছিলেন তারা। এরপর থেকে তাদের পরিবারে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিন পরিবারের ১৬ সদস্যের মধ্যে ৫ জন বর্তমানে অসুস্থ।
এছাড়াও নানা ভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সর্বশেষ তাদের এক মেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে নানা কথা বলছেন। তার কথার পর এই বাড়িতে আর থাকার উপায় থাকে না। যে কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাঁকা ঘর গুলোর টিনের চাল খোলার কাজ চলছে। ২৫ শতক জমির উপর তাদের তিন ভাইয়ের বাড়ি। মোট কক্ষ আছে ৬ টি। বড় ভাই নূর আলী থাকেন পূর্ব পাশে, মেঝো ভাই আবুল কাশেম থাকেন মাঝে আর ছোট ভাই আব্দুস সামাদ থাকেন পশ্চিম পাশে।
বাড়িতে গেলে কথা হয় আবুল কাশেম শেখের স্ত্রী আয়েশা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে এক বছর হলো তার স্বামীর বড় ভাই নূর আলীর ঘরে একটি সাপ দেখাতে পাওয়া যায়। পরিবারের সকলে মিলে এই সাপ মেরে পুড়িয়ে দেন। তখন তেমন একটা কিছু হয়নি। কিন্তু তিন মাস হলো আবারো ওই ঘর থেকে আরেকটি সাপ মারা হয়। এই সাপটি মারার পর তাদের পরিবারের নানা সমস্যা দেখা দেয়।
বড় ভাই নূর আলীর পুত্র রানা হোসেন জানান, ওই সাপটি মারার ঘটনার পর তার বাবার শরীরে ব্যাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার বড় বোন রেশামা খাতুনের চোখের সমস্যা, তার চাচা আবুল কাশেম ও চাচী আয়েশা খাতুনের শরীরে ব্যাথার সমস্যা ও চাচাতো বোন পিংকীর (১৪) মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্যরা সারাক্ষণ ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছেন, আর পিংকী মাঝে মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। এই অবস্থায় তারা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি আরো জানান, এক সপ্তাহ হলো পিংকী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন সে নানা কথা বলতে তাকে। সে বলে ওই সাপটি মারা তাদের ঠিক হয়নি। এই বাড়িতে থাকলে তাদের আরো ক্ষতি হবে। এসব ভেবে তারা বাড়ি ভেঙ্গে নিচ্ছেন।
ছোট ভাই আব্দুস সামাদ জানান, তাদের বাড়িতে বেশ কিছু বিপদ দেখা দিয়েছে। তাদের কয়েকটি গরু গোয়াল ঘরে থাকা অবস্থায় মারা গেছে। এ সব কারনে বাড়ি ভেঙ্গে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অভিশাপ বিশ্বাস করলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিপদগুলো নিজেদের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি তাই বিশ্বাস করছি।
এটা ঠিক কিনা জানতে চাইলে গ্রামের আরেক বাসিন্দা জামিরুল ইসলাম জানান, এটা কোনো ভাবেই বিশ্বাস যোগ্য হতে পারে না। বর্তমান সময়ে এসেও পরিবারটি অলৌকিক এই সব কথা বিশ্বাস করছে এটা ভাবাই যায় না। তিনি বলেন, শিক্ষার অনেকটা অভাব রয়েছে। গ্রামের মেম্বর আয়ুব হোসেন জানান, বাড়িঘর ভেঙ্গে চলে যাচ্ছেন এটা তিনি শুনেছেন। এ জাতীয় অলৈকিক ঘটনায় বাড়ি ভেঙ্গে চলে যাওয়া তাদের ঠিক হচ্ছে না। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে তারা যাতে অন্যত্র চলে না যান সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান ।