বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

সাটুরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মাথা গুজার ঠাই পাওয়া কষ্টকর

IMG_20170714_091256ওয়াসিম আকরাম রাজা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বেড়েছে ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদীর পানি। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ৯ ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। খড়¯্রােতা ¯্রােতে প্রতিদিনিই ভাঙছে নদী তীরের বসত-বাড়ি, জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা।

সরজমিনে জানা যায় নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে ভাঙ্গনের তীব্রতা। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন বাড়ি, জমি ও গাছ পালা গিলে খাচ্ছে রাক্ষুসে ধলেশ্বরী নদী। নদী ভাঙ্গা আফরোজা বেগম জানান গত কয়েক দিনের তীব্র ভাঙ্গনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এই সময় আমরা আমাদের বাড়ি অন্যত্র সরানো সুযোগ পর্যন্ত পাইনি। ফলে এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে  দিন যাপন করিতেছি। কিন্তু দুঃখ আমাদের একটাই আমরা কিভাবে আছি, কি খাচ্ছি কেউ কোন খবর নিতে আসল না।

স্থানীয় বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. বোরহান উদ্দিন জানায়, গোপালপুর গ্রামের লাল মিয়ার বাড়িটি গতবছরের বন্যায় অর্ধেক ভেঙে গেলেও এবার বন্যায় অবশিষ্ট অংশও গিলে খায় ধলেশ্বরী নদী। ফলে তাঁর পরিবারসহ  অনেকই  পাকা রাস্তা, অন্যের বাড়ির দুয়ারে গরু বাছুর হাস মুরগি নিযে দুবিসহ ভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন শতাধিক পরিবার। নদী তীরবর্তী সাধারণ মানুষগুলো আতঙ্কে দিনানিপাত করছে; কখন নদী গর্ভে চলে যায় শেষ সম্বলটুকুও। তাই ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা তীরবর্তী এসব এলাকা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকটে আছে এসব এলাকার মানুষ। হুমকির মধ্যে রয়েছে উপজেলার নদী তীরবর্তী আব্দুর রহমান খাঁন উচ্চ বিদ্যালয়, ফয়জুননেসা উচ্চ বিদ্যালয়, বরাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান । দিঘুলিয়া ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী নাগরপুর উপজেলার আগদিঘুলীয়া বাজারে ৩০টি দোকানসহ এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কেউ আতœীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ বাড়ি ঘর ও গবাদিপশু নৌকায় করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার বরাইদ, তিলি, হরগজ, ফুকুরহাটি, দিঘুলীয়া ইউনিয়নে বন্যায় প্রায় ৮শতাধিক হেক্টর জমির ফসল বিলিন হয়ে গেছে। বোনা আমন, রোপা আমন, পাট, ভুট্টাসহ সবজি ও মরিচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাভার, আগ-সাভার, ছনকা, বরাইদসহ অনেক এলাকায় পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এরই মধ্যে বেশীর ভাগ ভূট্টা অপরিপক্ক অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়েছে। ফলে অধিকাংশ কৃষক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানায়, উপজেলায় ৪ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে ভূট্টা ও সবজিসহ বোনা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এভাবে আর কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সবজি ও আমনের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য কে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ বরাদ্দ চেয়ে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত মানুষকে অত্যন্ত জরুরু ভাবে ত্রান সামগ্রি না সরবারহ করা হলে তাদের জীবনে সুবিসহ কষ্ট নেমে আসবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকের সাথে মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে পরে যোগাযোগ করার কথা বলে জানান, আমি ঢাকায় মিটিংয়ে আছি।

Tags

Related Articles

Close