বাংলাদেশ
হরিণাকুন্ডু সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে ৬ মাসেও উদ্ধার হয়নি গায়েব হওয়া ৪টি দলিল
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু সাবরেজিষ্টার অফিস থেকে চারটি দলিল গায়েব হয়ে গেছে। ৬ মাসেও দলিল ৪টি উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দলিল না পাওয়ায় দলিল গ্রহিতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এমনকি তারা সাব-রেজিষ্টারসহ সংশ্লিষ্টদের নামে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে নৈশ প্রহরি আশরাফের বিরুদ্ধে ঘুষ-দূর্ণীতির বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন দলিল লেখকরা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অফিসের কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। দলিল ডেরিভারি ও বালাম লেখাও বন্ধ রয়েছে সাব-রেজিষ্টার অফিসে। এ নিয়ে হরিণাকুন্ডুতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর আগে ঝিনাইদহ রেজিষ্টারের মাহাফেজখানা থেকে বালাম বইয়ের পাতা গায়েব হলেও কোন সুরাহা হয়নি। এক মহিলা কর্মচারীকে এক বছর সাময়িক বরখাস্ত রেখে আবার পুনর্বহাল করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে প্রতিনিয়ত অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে হরিণাকুন্ডু সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সাবরেষ্টিারসহ অফিস সহকারীরা। তাদের ইন্ধনে একদিকে যেমন ঘুষ বানিজ্য চলছে, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে দলিল ও বালাম বই গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া হরিণাকুন্ডু সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। ঘুষ ছাড়া সহসা কোন কাজই হচ্ছে না এ দপ্তরটিতে। সাব রেজিষ্ট্রার হাসানুজ্জামান যোগদান করেই ঘুষের রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। তার এই অপকর্মে সহায়ত করছেন নৈশ প্রহরি আশরাফ। ভুক্তভুগি অনেকেই নৈশ প্রহরি আশরাফের খুটোর জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে দলিল লেখকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আশরাফ নামের এ নৈশ প্রহরির দাপটে চলছে এ অফিসের সকল কার্যক্রম। দলিলসহ রেজিষ্টি অফিসের সব কাজকর্ম করতে আশরাফের সাথে চুক্তি করতে হয়।
দলিল লেখকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলিল হারানোর সাথে নৈশ প্রহরি আশরাফ জড়িত। সাব-রেজিষ্টার হাসানুজ্জামানের আস্থ্াভাজন হওয়ায় নৈশপ্রহরি ঘুষ লেনদেনে ব্যাস্ত থাকেন সব সময়। সূত্র আরো জানায়, অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে নৈশ প্রহরি আশরাফ লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। তাকে দিয়েই অফিসের সব কাজকর্ম করিয়ে থাকেন সাব-রেজিষ্টার। জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে হরিণাকুন্ডু সাব রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে চারটি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়, যার দলিল নং ছিল ১০৪, ১০৫, ১০৬ ও ১০৭। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে অফিস সহকারী আমিরুল ইসলাম, নৈশপ্রহরি আশরাফ, পিয়ন জাহিদুল ইসলাম ও মহরার লেলিন আজাদ ৪টি দলিল গায়েব করে দেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে গত ২৮ মার্চ সাবেক ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্টার বীর জ্যোতি চাকমা হরিণাকুন্ডু সাবরেজিষ্ট্রার অফিস পরিদর্শনকালে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে তিনি কারণ দর্শানের নোটিশ দেন।
জবাবে হরিণাকুন্ডু সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী আমিরুল ইসলাম লিখিত জবাবে জানান, সাব রেজিষ্ট্রার হাসানুজ্জামান চারটি দলিল নিজ জিম্মায় রেখে ঢাকায় দুই মাসের ট্রেনিংয়ে গেছেন। ফলে দলিলগুলো দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। পরে দুই মাসের ট্রেনিং শেষ করে সাব রেজিষ্ট্রার হাসানুজ্জামান চারটি দলিল তার জিম্মায় নেই বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। এখনো পর্যন্ত দলিল চারটি খুজে পাওয়া যায়নি। অফিস সহকারী আমিরুল ইসলাম, নৈশপ্রহরি আশরাফ, পিয়ন জাহিদুল ইসলাম ও মহরার লেলিন আজাদ কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে দলিল চারটি গায়েব করতে পারে এমন আশংকার কথা জানান ঝিনাইদহ থেকে সদ্য বদলী হওয়া জেলা রেজিষ্টার বীর জ্যোতি চাকমা। জেলা রেজিষ্টারের নির্দেশে সদর সাবরেজিষ্টার মৃত্যুঞ্জয় শিকারী দলিলের বিষয়ে তদন্ত করলেও একনো পর্যন্ত কোন রিপোর্ট দিতে পারেনি।
বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডরু সাব রেজিষ্টার হাসানুজ্জামান সত্যতা স্বীকার করে জানান, দলিল চারটি এখনো পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে হরিণাকুন্ডু থানায় একটি জিডি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন আমি ঢাকায় দুই মাসের ট্রেনিংয়ে ছিলাম। তার মধ্যে দলিল চারটি হারানোর খবর জানতে পারি। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় হারানো দলিলের বিষয়ে কথা উঠলেও কোন সদুত্তর না দিয়ে সাবরেজিষ্টার কৌশলে তা এড়িয়ে যান। এছাড়া জেলা রেজিষ্টার আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে সিনিয়রদের প্রমোশন না দিয়ে জুনিয়র নকল নবিশ আসাদুর রহমানকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শরিফুল নামের এক নকল নবিশ। এদিকে ২০১২ সালে জেলা রেজিষ্টারের নিয়ন্ত্রনে থাকা মহাফেজখানার সেভ কাস্টডিতে রক্ষিত ৪৬ নং- বালাম বইয়ের সুচিপত্রসহ ২২৫ থেকে ২২৭ নং পাতা গয়েব করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে এক সদস্য বির্শিষ্ট তদন্ত কমিটি হলেও বড় ধরণের জালিয়াতি করে কারো সাজা হয়নি।