বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

টাঙ্গাইলে সিএনজি চালকদের অভিমত মহাসড়ক ছেড়ে আয় কমেছে সিএনজি’র – বেড়েছে নিরাপত্তা

cng-tanমুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে:  প্রথম দিকে শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ির মতো ব্যবহার হতো সিএনজি অটো রিক্সা। এরপর শহরে অতিমাত্রায় সিএনজি অটো রিক্সা বেড়ে যাওয়ায় মফস্বল শহর ছাড়িয়ে মফস্বল এলাকাতেও জনপ্রিয় হতে লাগলো এসব তিন চাকার যান। সময় বাঁচাতে অল্প দিনেই বাস আর রিক্সাকে হার মানিয়ে দিল সিএনজি চালিত অটো রিক্সা। মফস্বলেও বাড়তে শুরু হলো সিএনজি। বাসের জন্য বসে না থেকে সিএনজি ভাড়া করে পথচলা শুরু হলো মহাসড়কে। দেশের অন্যান্য মহাসড়কের মতো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও ব্যতিক্রম হয়নি।

দেশের অন্যতম ব্যস্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাতে প্রতিনিয়ত যানজট শুরু হল। বাড়তে লাগল সড়ক দুর্ঘটনা। একদিকে দুই লেনের এই সড়কটিতে বাসের সাথে ধিরগতি সম্পন্ন সিনএনজি তাল মিলাতে না পেরে যানজট সৃষ্টি অন্যদিকে বাইপাস অতিক্রম করতে অহরহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি। ওই সময়ে দেশের পঞ্চাশ শতাংশ সিএনজি অটো রিক্সা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মহাসড়ক হয়ে চলাচল করত।

মহাসড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০১৫ সালের ১ আগষ্ট থেকে মহাসড়কে সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ করেন । শ্রমিকদের আন্দোলন রুখতে আর চালকদেরকে অভ্যাসে ফিরিয়ে আনতে ১ আগস্টের আগে থেকেই ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশে টহলে মহাসড়কে অনেকটাই কমে আসে সিএনজি-অটো রিক্সা চলাচল।

বর্তমানে মহাসড়কে সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় সড়কগুলোতে সিএনজির চাপ বেড়েছে দ্বিগুন। মহাসড়কের প্রবেশ পথে সিএনজির ভিড় দেখা গেলেও পুলিশি আতঙ্কে অধিকাংশ সিএনজি মহাসড়কে ঢুকতে সাহস পায় না। এদিকে অধিকাংশ সিএনজি গ্যাস পাম্প মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়াতে গ্যাস সংগ্রহ না করতে পেরে স্থানীয় সড়কগুলোতেও সিএনজি চালাতে পারছে না চালকরা। এতে করে কয়েক হাজার সিএনজি চালাকদের উপার্জন অর্ধেকে নেমে এসছে। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মহাসড়ক হয়ে ভ্রমনকারী অনেক যাত্রীদেরকে। রোগীবাহী সিএনজির ক্ষেত্রে নষেধাজ্ঞা সহনীয় হলেও উত্তর টাঙ্গাইল ও দক্ষিণ টাঙ্গাইলের রোগীবাহী সিএনজি মহাসড়ক হয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে সাহস পায় না। জেলার অন্যতম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে যেতেও পুরো টাঙ্গাইলের রোগীদের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে ওই হাসপাতালে যেতে হয়। অনেক সময় স্বল্পআয়ি মানুষদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। না পারে রোগীবাহী এ্যা¤ু^লেন্স ভাড়া করতে, না পারে সিএনজি চালকদের রাজি করতে। মহাসড়কে সিএনজি-অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় দুর্ঘটনা কমেছে মন্তব্য করার পরও তাদের অভিযোগ, মহাসড়কে পর্যাপ্ত লোকাল বাস নেই। ফলে সিএনজি চলাচলা কমাতে লোকাল যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

সিএনজি চালক লাভলু মিয়া বলেন, মহাসড়ক ব্যবহার করতে না পেরে অধিকাংশ রিজার্ভ টিপ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় সড়কে সিএনজি চাপ থাকায় দিনে তিন চারটির বেশি টিপ পাওয়া যায় না। এদিকে কয়েকজন ভাড়াটে সিএনজি চালক বলেন, স্থানীয় সড়কে সিএনজি বেশি থাকায় প্রতিদিনের উপার্জন কমে এসছে অর্ধেকে। বর্তমানে যে উপার্জন হচ্ছে তাতে  মালিকের প্রতিদিনের জমা ৫শ’ টাকা দেওয়ার পর চালকের পারিশ্রমিক থাকছে না।

এদিকে মহাসড়কে সিএনজি-অটো রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় চালক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বেড়েছে। মহাসড়কে অবাদে সিএনজি অটোরিক্সা চলাবস্থায় প্রতিনিয়ত ঘটতো সিএনজি ছিনতাই। মাঝে মাঝেই রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যেত অজ্ঞাত লাশ। পুলিশের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসত সিএনজি ছিনতাই করে চালকের লাশ ফেলে গেছে দুবৃত্তরা। পুলিশ ও চালকসহ সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, মহাসড়ক হয়েই ছিনতাইকারীরা সিএনজি নিয়ে লাপাত্তা হত। কিন্তু মহাসড়কে সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে গত দেড় বছরে সিএনজি ছিনতাই বা চালকের লাশ পাওয়া যায়নি। এছাড়া মহাসড়কে সিএনজি চলাচল বন্ধ হওয়াতে দুর্ঘটনাও অনেকাংশে কমেছে বলে স্বীকার করলেন একাধিক সিএনজি চালক। এতে চালক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বেড়েছে বলেও মনে করেন চালক ও যাত্রী উভয়েই।

সিএনজি চালক মিন্টু মিয়া বলেন, মহাসড়কে সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় দৈনিকের উপার্জন কমেছে। তবে অনেক রাত পর্যন্ত সিএনজি চালাতেও ভয় পাই না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,মহাসড়কে সিএনজি বন্ধ হওয়ার পর থেকে সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার সাথে কম উপার্জনও আমার কাছে ভাল।

সিএনজি অটো রিক্সা শ্রমিক নেতা রহুল আমীন বলেন,মহাসড়কে সিএনজি অটো রিক্সা চলাচল নিষেধ হওয়ায় শ্রমিকদের উপার্জন কমেছে তবে সড়ক দুর্ঘটা ও নিরাপত্তা অনেকাংশে বেড়েছে। তার অভিযোগ, শ্রমিক সিএনজি নিয়ে পাম্পে যাওয়ার জন্য মহাসড়কে পাড়ি দিতে পুলিশের কাছে বিড়ম্বিত হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, চালকদের পুলিশ বলে থাকেন মহাসড়ক বাই পাস হওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু মহাসড়ক ব্যবহার করার নিয়ম নেই। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সাথে গোপনে সমন্বয় করতে পারলে সেক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। মহাসড়কে অটো রিক্সা বন্ধের পদক্ষেপে সরকারকে সাধুবাদের পাশাপাশি পুলিশের হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।

ঢাকা-টাঙ্গাইল হাই-ওয়ে পুলিশের মির্জাপুর থানার (ওসি)  মো. খলিলুর রহমান পাটুয়ারী বলেন, চালকদের পুলিশি হয়রানীর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পাম্পে যেতে মহাসড়ক ব্যবহারের জন্য সকাল ৮ পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। পাম্পের মালিকদেরকেও বলা আছে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে সিএনজি পাম্পে গেলে পুলিশ কোন হয়রানি করছে না। এছাড়া নির্ধারিত সময়ে ব্যতিত সিএনজি মহাসড়কে ঢুকলে আমরা মামলা দিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের দেয়া আদেশ মতে এ মহাসড়কে সিএনজি মুক্ত রাখতে পেরেিেছ। তবে পৌরসভা ও ক্রসিং এলাকায় এ নীয়ম সিথিলযোগ্য। তবে চারলেনের কাজটি শেষ হলে মহাসড়কে ছোট যান চলাচলের আলাদা রাস্তা থাকবে। তখন সব সমস্যাই সমাধান হবে। তবে সিএনজি অটো রিক্সা মহাসড়কে নিষিদ্ধ হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা, চালক মেরে সিএনজি ছিনতাই কমেছে বলেও স্বীকার করলেন হাই-ওয়ে পুলিশের এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

Related Articles

Close