জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

১১ ডিসেম্বর যেভাবে হানাদার মুক্ত হয়েছিল টাঙ্গাইল

11-12মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: আজ ১১ ডিসেম্বর দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভা   ৬ দিন ব্যাপী নানা কর্মসুচীর হাতে নিয়েছে। সকাল ১১.৩০মিনিটে  টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসুচীর উদ্বোধন ঘোষনা করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল সদর ৫ আসনের সংসদ সদস্য আল-হাজ্ব ছানোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জহের, সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ মনোয়ারা বেগম, পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুবসহ মুক্তিযোদ্ধা ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। এরপর বিজয় শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহীদ স্মৃতী পৌর উদ্যান থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে। শোভাযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ অংশ নেন।

৬ দিন ব্যাপী কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা। ১৩ তারিখের আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ও ১৪ তারিখে ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের আসার কথা রয়েছে। ইতিহাস বলে এই সেই দিন ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পন ও পলায়নের মধ্যে দিয়ে মুক্ত হয়েছিল টাঙ্গাইল। সারা রাত মুক্তিযোদ্ধাদের সারাশি আক্রমন ও প্রচন্ড গোলাগুলিতে বিনিদ্র রাত কাটায় শহর ও শহরতলির লোকজন। অবশেষে সে কাঙ্খিত মুহুর্তটি ঘনিয়ে এল। ধবংস স্তুপের মধ্যে দিয়ে স্বজন হারাদের বিয়োগ ব্যাথা ভূলে হাজার হাজার উৎফুল্ল¬ জনতা রাস্তায় নেমে প্রানের স্পন্দন আর মুক্তির আনন্দে উদ্বেল হয়ে নবজন্মের সেই মুহুর্তটিকে সবাই মিলে স্মরণীয় করে তুলেন।

11-12-tanটাঙ্গাইলের কৃতি সন্তানদের মধ্যে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আব্দুল মান্নান, টাঙ্গাইল, জামালপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এমপি শামছুর রহমান খান শাজাহান ছিলেন অগ্রগন্য। এক পর্যায়ে টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় কাদেরিয়া বাহিনী । এই বাহিনীর প্রচন্ড প্রতিরোধ ও প্রত্যাঘাত শুরু করে পাক সেনাদের উপর। ক্রমান্বয়ে সংগঠিত হতে থাকে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা । শেষ পর্যন্ত এর সংখ্যা দাড়ায় ১৭ হাজারে ।

টাঙ্গাইলে ৮ ডিসেম্বর প্রায় ৫ হাজার পাক সেনা এবং ৭ হাজার রাজাকার আলবদর অবস্থান করে। খান সেনাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যমুনা নদী পথে পাঠানো হয় ৭ টি জাহাজ ভর্তি অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কাদেরিয়া বাহিনী গোপনে এই খবর পেয়ে কমান্ডার হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেয় জাহাজ ধবংস করার জন্য মাইন পোতার কাজ। জীবন বাজি রেখে মাটিকাটা নামক স্থানে ঘটানো হয় জাহাজ বিস্ফোরণ। দু’টি জাহাজে দু’ রাত দু’ দিন ধরে চলতে থাকে অনবরত বিস্ফোরন। বাকী জাহাজগুলো থেকে বিপুল পরিমান আধুনিক অস্ত্র সস্ত্র উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় জেলার বিভিন্ন স্থানে। মুক্তি বাহিনীর এ সকল আক্রমন ও গোলাবারুদ ধ্বংস এবং অস্ত্র উদ্ধারে খান সেনারা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ৮ তারিখ পর্যন্ত টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় বিশাল কাদেরিয়া বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পরাস্ত করে খান সেনাদের। এসব যুদ্ধে ৩ শতাধিক দেশপ্রেমিক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

মুক্তিযোদ্ধাদের টাঙ্গাইল অঞ্চলের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যোদ্ধাদের নিয়ে সখিপুরের সহানন্দা ও কীর্ত্তনখোলায় গড়ে তুলেন দুর্ভেদ্য দূর্গ। একের পর এক আক্রমণের মুখে পাক সেনারা গুটিয়ে জেলার অন্যান্য স্থান থেকে এসে যখন টাঙ্গাইল শহরে অবস্থান নেয় তখন উত্তর ও দক্ষিন টাঙ্গাইল ছিল সম্পূর্ন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ।

৮ ডিসেম্বর পরিকল্পনা করা হয় টাঙ্গাইল আক্রমনের। মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সংর্ঘষ হয় পাক সেনাদের পুংলি নামক স্থানে। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণ ভয়ে পাক সেনারা সারারাত ধরে টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকার দিকে পালায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চার দিক থেকে সারাশি আক্রমণ চালিয়ে পাক সেনাদের টাঙ্গাইল থেকে বিতারিত করতে সক্ষম হয় কাদেরিয়া বাহিনী।

১০ ডিসেম্বর রাতে টাঙ্গাইল প্রবেশ করেন কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক ভোলা। ১১ ডিসেম্বর সকালে কমান্ডার বায়োজিদ ও খন্দকার আনোয়ার টাঙ্গাইল পৌঁছেন। আসেন বিগ্রেডিয়ার ফজলুর রহমান। সার্কিট হাউজে অবস্থানরত খান সেনাদের কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্ম সমর্পনের মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ন ভাবে মুক্ত হয় টাঙ্গাইল।

Related Articles

Close