বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হলো দু’কিলোমিটার সড়ক ও কাঠের সেতু
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে, নিউজরুমবিডি.কম: টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাজিপুর গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক ও খালের উপর কাঠের সেতু নির্মিত হয়েছে। গত ডিসেম্বর (২০১৫) থেকে ১০ জানুয়ারি (২০১৬) পর্যন্ত নানা বাঁধা অতিক্রম করে বিরামহীন অক্লান্ত স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজটি শেষ করা হয় বলে জানা গেছে।
গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে নগদা শিমলা ইউনিয়নের সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম হাজিপুর। এ গ্রামের পূর্বে বাইশকাইল, উত্তরে বনমালী আর দক্ষিণ-পশ্চিমে নবগ্রাম-এর অবস্থান। হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিদিন নবগ্রাম হয়ে যাতায়াত করতে হতো। পায়ে হাটা রাস্তা দিয়ে নবগ্রাম হয়ে এ গ্রামের মানুষ চলাচল করতো। বর্ষা এলেই ঘটতো বিপত্তি। হাজিপুর ও নবগ্রামের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের কারণে হাজিপুরবাসীর চলাচল বর্ষা মৌসুমে সীমিত হয়ে পড়তো। হাজিপুর থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত একটি কাঁচা সড়ক ও দু’গ্রামের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি নিয়ে হাজিপুর গ্রামের লোকজন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও যখন কোন সুফল পাননি। উপরন্তু প্রশাসনের কর্তারা শুধূ প্রতিশ্রুতি,আর কথার ফুলজুড়ির অমর বাণীই শুনিয়েছেন, বাস্তবায়ন হয়নি- এমনই অভিযোগ গ্রামবাসীর।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা ভোটের সময় গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়েছেন, কিন্তু চলাচলের ব্যবস্থা করে দেননি। কিন্তু তাই বলে থেমে থাকেনি এলাকার উন্নয়ন, গ্রামের মানুষের এ দুরবস্থা নিরসনে হাজিপুর গ্রামের প্রবীণ সমাজ সেবক মো. আয়নাল হক সরকার ও নবীন সমাজসেবক মো. সোহেল রানা উদ্যোগ নেন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সড়ক ও সেতু নির্মাণের। প্রবীণ ও নবীনের ডাকে সাড়া দেয় গ্রামবাসী। দফায় দফায় বৈঠকে বসে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে সড়ক ও সেতু নির্মাণের কাজে হাত দেয় গ্রামবাসী। দিন-রাতে সুবিধাজনক সময়ে পরিশ্রম করে গত ১০ জানুয়ারি প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও খালের উপর কাঠের সেতু নির্মাণ শেষ করেন গ্রামবাসী।
হাজিপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, যাতাযাতের জন্য ভাল কোনো সড়ক ও খালের উপর একটি সেতু না থাকায় তাদের যে কত বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়। চোখের সামনে মুমুর্ষূ রোগি মারা যেতে দেখেও তাদের কিছু করার থাকেনি। কোন ডাক্তার বাড়িতে আসতে চায়নি আবার রোগিকে হাসপাতালে নেয়াও ছিল চরম দুর্ভোগের। চিকিৎসার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র যাতাযাতের ব্যবস্থা না থাকায় আপনজনদের চিরতরে হারাতে হয়েছে গ্রামবাসীর। যুগের পর যুগ অসহায় গ্রামবাসী এ সমস্যার কথা স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তারা সুযোগ সন্ধানীর মতো বার বার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুধু ভোট নিয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে কেটে পড়েছেন। সড়ক বা সেতু নির্মাণের কথায় কর্ণপাত করেননি।
এ প্রসঙ্গে গ্রামের আরেক প্রবীণ অবসর প্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি ছোটকাল থেকেই দেখেছেন, তার বাপ-দাদাসহ গ্রামের সকল স্তরের জনসাধারণ মিলে স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের পিছনে অনেক ছুটাছুটি করেছেন। কিন্তু সড়ক বা সেতু কোনটিই এ পর্যন্ত কেউ নির্মাণ করে দেয়নি।
গ্রামের সমাজ সেবক প্রবীণ মো. আয়নাল হক সরকার ও নবীণ মো. সোহেল রানার উদ্যোগে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে এ অবহেলিত গ্রামে স্বপ্নের সেতু ও আবাদি জমির উপর দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি, শতাব্দী প্রাচীন এ গ্রামটি যেন সরকার ঘোষিত ডিজিটালের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়।