বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

সখীপুরে বিদ্যুতের বাড়তি বিলের বোঝা এখন প্রান্তিক কৃষকের ঘাড়ে

electricityমুক্তার হাসান,টাঙ্গাইল থেকে ।। টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিডিবি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সেচ পাম্পের মালিকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ওই অফিসের খামখেয়ালিপনার কারনে বিদ্যুৎ বিলের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে  উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে সেচ পাম্প মালিকসহ উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক জিম্মি হয়ে পড়েছেন। মিটার ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, মিনিমাম চার্জ আদায়, ভাড়তি ও ভৌতিক বিল, রিডিং না দেখেই বিল করা, গ্রাহকের নোটিশ ছাড়া জরিমানা আদায় ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, লো-ভোল্টেজ, লাইনের ত্র“টি মেরামতের নামে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা, আবেদন করে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করা, সংযোগ কিংবা পুন:সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি-ঘুষ আদায়সহ সীমাহীন দুর্ভোগ এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন সখীপুরের গ্রাহকরা। দিশেহারা হয়ে এরই মধ্যে বেশকিছু সেচ মালিক বিদ্যুৎ বিলের বাড়তি চাপে সেচ পাম্পগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।

উপজেলার  সেচ পাম্প মালিক ও সাধারণ গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিটার থাকা সত্তে¡ও গড় ইউনিট বেশি দেখিয়ে প্রতিটি মিটারের বিল করছে সখীপুর বিদ্যুৎ বিভাগ। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন সেচ পাম্প মালিকরা তার দ্বিগুন-তিনগুন রিডিংয়ের বিল দিতে হচ্ছে তাঁদের। এ নিয়ে সেচ পাম্প মালিকদের সঙ্গে সখীপুর পিডিবি’র কর্তৃপক্ষের প্রতিনিয়তই বাকবিতন্ডা লেগেই আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অযৈক্তিক ও ভৌতিক বিল করা বিষয়ে গ্রাহকরা একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন সমাধান পায়নি। স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের নামে ভুক্তভোগী সেচ পাম্প মালিকদের পাহাড় পরিমাণ অভিযোগ জমে আছে।

নিরুপায় হয়ে সেচ পাম্প মালিক ও সাধারণ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদসভা, মানববন্ধন, স্বারকলিপি প্রদান ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করেন। বলা হয়‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় এই বাক্য রুপান্তরিত হচ্ছে ‘বিদ্যুতের বাড়তি বিলের খড়গ যখন প্রান্তিক কৃষকের’। যেখানে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের খরচই তুলতে পারছেন না তার সাথে আবার বিদ্যুতের বাড়তি বিলে নাভিশ্বাস। যে কারণে ইরি-বোরো চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। বছরে কৃষিখাতে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও তার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছেন না সখীপুরের প্রান্তিক চাষীরা। সরকারী এ সুবিধা থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন এতদঞ্চলের সেচ পাম্প মালিকরা। অবাক ব্যাপার হলো, অনেক কৃষক জানেনই না তাঁরা ভর্তুকির টাকা পেয়ে থাকেন। শুধু ইরি – বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় বিদ্যুৎ চালিত প্রায় তিন হাজার গভীর-অগভীর সেচ পাম্পের আওতায় সতের হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

২০০২ সাল থেকে মোটর চালিত সেচ পাম্পে মোট বিলের ওপর শতকরা বিশ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার, যা প্রতিমাসে বিলের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা রয়েছে। কিন্তু বিপুল অংকের ভর্তুকি দেওয়া হলেও এর এক কানাকড়ির সুবিধা পাননি কোন কৃষক। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কৌশলে সেচ পাম্প মালিকদের কৃষি ভর্তুকির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন ।

উপজেলা  কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া বলেন, সখীপুরে ইরি-বোরো লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হলেও প্রায় দুই শতাধিক সেচ পাম্প বন্ধ রয়েছে শুধু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল সমস্যার কারণে। এতে করে এ এলাকার কৃষকরা কৃষিখাতে অর্জিত সফলতা পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগকে সেচ পাম্প মালিক ও কৃষকদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান তিনি ।

এ ব্যাপারে পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী  (বিক্রয় ও বিতরণ) মো.শাহাদাত আলী প্রতিবেদককে বলেন, সখীপুর বিদ্যুৎ বিভাগে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

Tags

Related Articles

Close