জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

বিশাল বাজেটের বাড়ি পেয়ে খুশি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বাড়ি। ২০০৯ সালে বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের নাম হামিদনগর ঘোষণা করা হলেও আজও তা বাস্তবায়ণ হয়নি। সম্প্রতি শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিশাল বাজেটের চারতলা বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে। ৩ কোটিরও বেশি বাজেটের বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের জন্য এই বাড়িটি নির্মিত হচ্ছে। ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগ নিয়ন্ত্রাধিন এই বাড়িটি ২৬/১০/২০ তারিখে তৈরি কাজ শুরু করেন স্থানীয় এক ঠিকাদার। বাড়ির প্রতিটি ফ্লোরে থাকবে দুইটি ইউনিট।

বিশাল এই বাজেটের চারতলা বাড়িটি পেয়ে খুশি বীরশ্রেষ্ঠের রহামানের পরিবার। শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ছিলেন চার ভাই ও দুই বোনের সবার বড়। ১৬/১০/২০ তারিখে মারা যান সেজভাই শুকুর আলী। এর দু’বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান ছোট ভাই ফজলুর রহমান। ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রয়ারি মারা যান মা কায়দাছুন্নেছা। এখন জীবিত আছেন একমাত্র ভাই হামজুর রহমান ও দুই বোন।

প্রতিমাসে সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা হিসাবে পাঁচটি হিসাব নম্বরে প্রদান করেন। কথা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের মেজভাই হামজুর রহমানের সাথে। জানালেন বর্তমান পরিবারের অতীত বর্তমান, সুখ দুঃখ আর মুক্তিুদ্ধের সেই দিনগুলির কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। অন্য কোন সরকারের আমলে আমাদেরকে এত সুযোগ সুবিধা পায়নি।

২৮ অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী। চলতি বছর ছিল বীরের ৪৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় বীরশ্রেষ্ঠের গ্রাম খর্দ্দ খালিশপুরে নিজ নামে স্থাপিত কলেজে স্বরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ২০০৮ সালের ৯ মার্চ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম (অবঃ) মেজর জেনারেল সিআর দত্ত। জাদুঘর উদ্বোধনকালে তত্বাবধায়ক সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল গ্রামের নাম হামিদনগর ঘোষনা দেন। তবে বীশ্রেষ্ঠের পরিবারের দাবি, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলেজ ও স্মৃতি যাদুঘরের পাশে সরকারের পতিত ৩৭ বিঘা খাস জমি রয়েছে। এই জমিতে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকো পার্ক তৈরি দাবি জানান তারা। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান এই পার্কের কাজে শুরু করেন। ইতোমধ্যে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মেজভাই হামজুর রহমান কমিউনিটি হাসপাতাল করার জন্য ক্রয়কৃত আট শতক জমি দান করেছেন। ফলকে মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনিতে আরো লেখা হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগোনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্ম গ্রহন করেন। বাবার নাম আক্কাছ আলী মন্ডল, মাতার নাম কায়ছুন্নেছা। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগের পর তাদের পরিবার যশোরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে স্থানয়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রয়ারী তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। পরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণ পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই নামক স্থানে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন। ২৮ অক্টোবর রাতে ধলইয়ের যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শণ করে এলএমজি চালনারত অবস্থায় শত্রæপক্ষের দুইজনকে ঘায়েল করেন। তিনিও নিজেও শত্রুর গুলিতে শাহাদৎ বরণ করেন। পরে এই বীর সৈনিকের লাশ ধলই থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত আমবাসা নামক স্থানে একটি মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। সুদীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর হামিদুরের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করে বাংলাদেশ সরকার।

Related Articles

Close