অন্যান্য

আঁধারের গহ্বরে হারাতে বসছে মনুষ্যত্ব II নাসরিন ইসলাম

নাসরিন ইসলামঃ পৃথিবীর বীভৎস, ভয়ঙ্কর ও নির্মমতার রূপগুলো আমায় ভীষন পীড়া দেয়। রংধনুর সাত রং, গোধূলী লগ্নে আবীরের নিমোজ্জিত বসূধা, স্বর্নালী রোদেলা দুপুর, অরোরা ভোর, নিমেষেই সব কিছু লন্ড-ভড করে দেয়। বিমর্ষ, বিষন্নতা ও মলিনতা ভর করে অস্থি- মস্তিস্কে। নিথর স্তদ্ধ হয়ে পড়ি। ঘুনোপোকায় খেয়ে চলছে বিবেক। ক্রমশ ইউপোকার ডিবিতে পরিনত হচ্ছি আমরা সৃষ্ঠির শ্রেষ্ঠ মানব সন্তান। তারপরও এমন বর্বর ও নৃশংসভাবে খুন হওয়া সন্তান ও তাদের মা-বাবার গগন বিদারী আর্তনাদে কেঁপে উঠে বুক …. এমনকি মৃত বিসুভিয়াসও জেগে উঠে! নিজকে হারিয়ে ফেলি বিষাদময় জগতে নিজের অজান্তেই! আহ্ কি করুণ! কি নির্মম! কি পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ! ভাবতেই আৎকে উঠি। “হে প্রভূ” আমাদের ক্ষমা করো, আমাদের উপর রহমত নাজিল করো।

গতকাল হতে বুয়েট এর ছাত্র আবরার হত্যা তেমনি আমায় ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত করে চলে অনবরত। বিবেকের কাছে অবিরত প্রশ্ন করে চলি—- কি হচ্ছে এসব! কি ভয়ঙ্কর রূপ এই নির্মল ধরায় সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত এর! কোথায় আজ নির্মল পৃথিবীর সাজ। নেই কোন লোকলজ্জা, নেই কোন লাজ। নরাধম হায়েনার দলের ক্রমাগত পেশী’র শক্তি বেড়েই চলেছে। ভালো মানুষ, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছে, ভয়ঙ্কর খুনীদের হাতে নৃশংসভাবে প্রাণ হারাচ্ছে আমাদের নিস্পাপ সন্তানরা। আবার আপনার আমার দায়িত্বহীনতা বা অসততার ফলে একঝাঁক তরুন মেধাবীরা ভয়ঙ্কর খুনী হয়ে উঠছে! কেনো? কেনো? আমরা কেনো ভাবছিনা! আমাদের সন্তানদেরও এমন পরিনত হলে কি হতো!

আমরা মা-বাবা খেয়ে না খেয়ে আমাদের সন্তানদের বড় করি কি, আমাদের অতি আদরে বা অবহেলার কারণে উচ্ছন্যে যাওয়া বর্বর জানোয়ার মানষিকতায় বেড়ে উঠা নরাধমদের বলির পাঠা হতে! জগত সংসারে ক্রমশ সহিষ্ণু মনোভাব হ্রাস পাচ্ছে, আপনার আমার নীতি বর্জিত কাজ বা অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার কারণে। অন্যায় করার পর শাস্তি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা না করে, অন্যায় যাতে না হয় সেই প্রতিষোধক মুলক ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের দায়িত্ব আজ। কারণ একদিকে আপনার আমার সন্তানরা নৃশংস হত্যাকান্ড এর শিকার রোধকল্পে এবং অন্যদিকে আবার বখাটে আরেকদল সন্তান ভয়ঙ্কর খুনী উপাধীতে ভুষিত হতে রেহাই পেতে! অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধির কারণে বিনাদোষে মানুষের প্রাণ কেঁড়ে নিচ্ছে মানুষরুপী জানোয়ারের দল।

মানুষরুপী হায়েনাদের ভয়ঙ্কর কর্মকান্ডে আজরাঈল আঃ তার কর্ম হতে লজ্জায় ইস্তফা দিয়েছেন মনে হচ্ছে। বিশ্বজিত, তনু সাগর-রুনী হত্যাকান্ড সহ অন্যান্য বিতর্কিত হত্যাকান্ডের বিচার দু একটার রায় হলেও বেশীর ভাগ এখনও ঝুলে আছে। যেগুলো বিচার হয়েছে তাও প্রশ্নবিদ্ধ জাতির কাছে। বিশৃংখলা রোধকল্পে শৃংখলা আনয়নে আইন শৃংখলা বাহিনী আর সঠিক বিচারের জন্য বিচার বিভাগ। তেমনি সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি বিভাগের প্রতিটি কর্মের জন্য নিয়োজিত সন্মানিত ব্যক্তিবর্গের নির্দিষ্ট দায়- দায়িত্ব থাকে পদনুযায়ী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যদি তাদের ছাত্রদের সঠিকভাবে তত্বাবধান ও প্রাণের নিরাপত্তা না দিতে পারেন। বছরের পর বছর বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছাত্রদের কক্ষে ছাত্র সংগঠনগুলো অন্যায় অবিচার বর্বর রচিত কর্মকান্ড চালিয়ে যান টর্চার সেল গঠনের মাধ্যমে এবং তাহা একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের পর জনসমক্ষে আসে।

তাহলে জাতির প্রশ্ন, সমান্মিত শিক্ষক, প্রভোষ্টরা ওখানে কি করেন? আর ভাইস চ্যান্সেলর রা বা কি করেন? আপনাদের হেয়ালীপনায় ও দায়িত্বহীনতার কারণে কত শত মায়ের বুক খালি হচ্ছে একবার ভেবে দেখেছেন কি? সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ আজ হায়েনারা ছুৃঁড়ি ঘোরাচ্ছে আপনার আমার নীরব দর্শকের ভুমিকা পালনে! কেনো আমাদের মেধাবী ভবিষৎ প্রজন্ম কে এভাবে খুন করছে আর এক মেধাবী প্রজন্ম। কেন আজ আপনারা মেরুদন্ডহীন প্রাণীতে রুপান্তর হচ্ছেন, চাকুরী যাবার ভয়ে? বেঁচে থাকলে বাঘের মত বেঁচে থাকা মানুষ গড়া কারিগরদের মানায়, বিড়ালের মত মিঁউ মিঁউ করে নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে কি হবে? চাকুরীচ্যুত হবেন? সকল সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হবেন, এইতো। না খেয়ে মরবেন না কিন্তু। আপনার যে যোগ্যতা আছে তা কাজে লাগিয়ে দু-বেলা ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার উপায় হবেই।

কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে দংশন হবেন না প্রতি মুহূর্তে। ন্যায়-নীতিতে অটল থাকুন। সততাই মনোবল এর প্রধান হাতিয়ার। আমাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে আজ প্রতি মুহূর্ত অপমান হচ্ছি, বিবেক ও নৈতিকতা হারাচ্ছি আর এই সুযোগে পিয়নের বউ এর একাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমছে আর দারোয়ান পিয়নের ভয়ে বড় পদে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কুঁকড়ে থাকছি। এটা কত বড় অপমানজনক তা কি ভেবেছেন একবারও!? কারো বা কোন কিছুর দোহাই দিয়ে নয়———— আমরাও চাকুরী করে আসছি নেতিবাচক ইতিবাচক মানুষ ও সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে। কর্মক্ষেত্রে কেউ কোনদিন নিয়ম নীতির বাহিরে কাজ করাতে পারেনি। সহস্র মানুষের দোয়া আজ সাথে আছে।

না খেয়ে বা তিনবেলা দুমুঠো খেয়ে থাকলেও মনে প্রশান্তি রয়েছে। হা-পিতিসে ভুগিনা, হতাশায় নই নিমোজ্জিত। তাই বিশেষভাবে করজোরে মিনতি করছি দেশ ও জাতির বিলুপ্ত রোধে, যে যেখানের দায়িত্বে কর্মরত থাকুন না কেনো। প্লিজ সঠিক দায়িত্ব পালন করুন। সততা নৈতিকতা বিবেক ও মুল্যবোধের সাথে সঠিক পথ দেখানোর প্রশ্নে। “নইলে আজ বিবেক বর্জিত মানুষ নামের কীটগুলোতে ভরে যাবে পৃথিবী! অচীরেই আঁধারের গহ্বরে হারাবে মনুষ্যত্ব”

৮ অক্টোবর ২০১৯ ইং

Related Articles

Close