জাতীয়বাংলাদেশরাজনীতিসর্বশেষ নিউজ
নির্বাচনে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট
নিউজরুমবিডি.কমঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোট এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা এই জোট বলছে, সাত দফা থেকে তারা সরে আসেনি; আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তাদের ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধানত্ম। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের এই সিদ্ধানত্ম জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের লিখিত বিবৃতি পড়ে শুনিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পড়্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধানত্ম খুবই কঠিন। কিন’ এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিসি’তিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরম্নদ্ধারের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে।’
তবে ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি থেকে পিছিয়ে আসছে না জানিয়ে ফখরম্নল বলেন, তার সঙ্গে তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তারা যুক্ত করছেন। ‘আমরা বর্তমান তফসিল বাতিল করে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সেই ড়্গেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে।’
ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল। মুখে ‘দাবি থেকে না সরার’ কথা বললেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালে ভোট আয়োজনে সম্মতি দিয়ে মূল দাবি থেকে পিছু হটলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৯ নভেম্বর পর্যনত্ম মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যনত্ম প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক জোটগুলোর দাবির প্রেড়্গিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিলে তাতে তার দল আপত্তি করবে না।
তবে নির্বাচন পেছানো হলে তা যৌক্তিকভাবে করতে হবে এবং যে দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তা করতে হবে বলে মনত্মব্য করেছেন কাদের।
ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বিবৃতিতে নির্বাচন পেছনোর পড়্গে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চার দলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তফসিল দুই দফা পেছানো হয়েছিল। আর জোটের সাত দফা দাবির বিষয়ে সেখানে বলা হয়, ‘এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে ফ্রন্ট।’ লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস’তির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি। আমরা বলে দিতে চাই, জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিসি’তির দায়-দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনতো চলতেই থাকবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং পরিবেশ তৈরি করার জন্য আন্দোলন চলবে।’ কামাল হোসেনের নামে ফখরুলের পড়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়া অধিকার হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচন দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরম্নদ্ধারের নির্বাচন হবে।
‘আমরা বিশ্বাস করি, দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্কট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লড়্গ্যের ভিত্তিতে একটা সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।’
ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এবং এক দল অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে রোববারের মধ্যেই তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলো অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরম্নল বলেন, ‘আমরা পরে জানাব।’
অন্যদের মধ্যে বিএনপির মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোসত্মফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ, গণস্বাস’্য সংস’ার ট্রাস্টি জাফরম্নলস্নাহ চৌধুরীসহ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপসি’ত ছিলেন।
ভোটে যাচ্ছে ২০ দল, বিএনপির ধানের শীষ পাচ্ছে ৭ শরিক
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট জোটবদ্ধভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধানত্ম জানিয়েছে। এদিকে বিএনপি তাদের জোটের সাত শরিক দলকে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে।
জোটের নেতা এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ গতকাল দুপুরে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জনগণের প্রতি আস’া আছে বলে আমরা ২০ দলীয় জোট প্রতিকূলতার মধ্যেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধানত্ম নিয়েছি। আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করছি।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি, অনাচারসহ তিসত্মার পানি আনতে ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রড়্গায় সীমাহীন ব্যর্থতার বিরম্নদ্ধে রায় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গতকাল যখন জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিল, তখনই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের সংবাদ সম্মেলন চলছিল।
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা বলে আসছিলেন, দাবি পূরণ না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
ক্ষমতাসীনদের অনড় অবস’ানে সেই দাবি পূরণ না হলেও এখন ভোটে আসার ঘোষণা দিল ২০ দলীয় জোট। তবে ঐক্যফ্রন্টের মত ২০ দলীয় জোটও নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবি জানিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে অলি আহমেদ বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে। তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ড়্গেত্রে নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের লেভেল পেস্নইং ফিল্ড নিশ্চিত করবে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেড়্গ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না।’
ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও ২০ দলের সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অলি আহমেদ।
জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এবং শরিক দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে রোববারের মধ্যেই তা জানাতে সব নিবন্ধিত দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি তাদের সাত শরিক দলকে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কানিত্মর সরকার, সাবেক আমলা আবদুল বারী ও প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়েরম্নল কবির রোববার বিকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর স্বাড়্গরিত ওই চিঠি নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে পৌঁছে দেন।
চিঠিতে বলা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আটটি দলের যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করবেন।
বিএনপি ছাড়া বাকি সাত দল হল- কল্যাণ পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্ট (জাগপা), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
পরে বিজন কানিত্ম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, এক প্রতীক ব্যবহারের জন্য জোটের নিবন্ধিত আটটি দলের তালিকা তারা কমিশনে জমা দিয়েছেন। ‘সেইসঙ্গে নির্বাচন এক মাস পেছানোর জন্য ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে বিএনপি মহাসচিবের আরেকটি চিঠি কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স’ায়ী কমিটির সদস্য নজরম্নল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোসত্মফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ উপসি’ত ছিলেন।