বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
ঝিনাইদহে আবারও পুলিশ প্রহরায় বিশ টাকায় চার লাখ
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ সদরের সিটি কলেজ প্রাঙ্গনে পুলিশ প্রহরায় এবার বিশ টাকায় তিন লাখ টাকার লটারি চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সিটি কলেজ প্রাঙ্গনে দৈনিক বেনারশী র্যাফেল ড্র’র নামে ঐ মঞ্চে চলছে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে যৌন সুরসুরির আবেদন মুলক টক’শ ও আলাপ- অলোচনা এবং নাচ-গান পর্ব।
যা স্থানীয় উঠতি বয়সের যুবক-যুবতিদের মধ্যে অবৈধ যৌন উদ্দিপনা সৃষ্টি করছে ও সমাজে এর ব্যপক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে দিন-দিন উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীরা খারাপ মানষিকতায় ভুগে-ভুগে ভুল ও অবৈধ পথে পা বাড়াচ্ছে বলে ঝিনাইদহ মানবাধিকার শোভা সংস্থাটি সাংবাদিকদের জানিয়েছে।
আবার দৈনিক বেনারশী র্যাফেল ড্র ভোর হতে না হতেই ভ্যান, রিকশা, অটোভ্যান, ইজিবাইক, পিকাপ যোগে চারশ জনেরও বেশি জনশক্তি দ্বারা টিকিটের ঢম নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঝিনাইদহের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত, শহর থেকে গ্রামে, পাড়াই-পাড়াই, ঘরে ঘরে। জানা গেছে, বিশ টাকার টিকিটের বিনিময়ে তিন লাখ টাকার লটারীর লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে, লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বেনারশী র্যাফেল ড্র নামক টাকা খেকো দানবরা।
আরো দেখা গেছে, পুলিশরা দাড়িয়ে-দাড়িয়ে মানুষ ধ্বংশ ও হত্যা করার বিশ টাকার লটারী নামক আজব জুয়া খেলা দেখছে। ঝিনাইদহ পুলিশ প্রশাসনের নিরব ভুমিকার রহস্য কি ? এ ব্যাপারে ঝিনাইদহবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চায়।
এদিকে ঝিনাইদহের সচেতন মহল জানিয়েছে, এই লটারী খেলা শেষ হওয়ার পরপরই দেখা যাবে গ্রাম অঞ্চলের সহজ সরল লোকজন বিভিন্ন সমিতি ও এজিও থেকে কড়া সুদে ঋন নিয়ে এই লটারী নামক জুয়া খেলায় সমুদ্বয় টাকা শেষ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে বলে মনে করেন ঝিনাইদহের সচেতন মহল। ইতি পূর্বে লটারী নামক জুয়াখেলা শেষ হয়ে গেলে এনজিও, সমিতির লোনের চাপে বেশ কয়েক জন আত্মহত্যা করেছেন বলে বিভিন্ন তথ্য সুত্রে জানা গেছে।
ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয় দেশের সকল জেলার মতই প্রতিটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে। শীতের শুরুর সাথে সাথে বাড়তে থাকে মেলার আসর। কিন্তু পরিচ্ছন্ন বিনোদনের সেই মেলাকে কলুশিত করতে শুরু করে যাত্রার নামে অশ্লিলতা ও বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর।
এসবের সাথে আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ হয় “র্যাফেল ড্র” এর নামের লটারি প্রতিযোগিতার কল্যানে। নিম্নবিত্তদের কাছে ২০ টাকা মুল্যের লটারিতে লক্ষ টাকার পুরস্কার এর জনপ্রিয়তাকে নিয়ে যায় ব্যাপক পরিসরে। কিন্তু এখানেও দেখা দিতে থাকে বিভিন্ন সমস্য।
ঝিনাইদহের প্রেক্ষাপটে গত বছর থেকে সর্বোচ্চো মাত্রায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে “র্যাফেল ড্র” এর নামে এই লটারি প্রতিযোগিতা। আর তখন থেকেই ঘটতে থাকে নানান অপ্রিতিকর ঘটনা। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র পরিসরে লটারি বিক্রির টাকা ছিনতাই ও টিকিট নষ্ট করে ফেলা থেকে শুরু হয়। কখনোবা পুরস্কার না দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে লটারির আয়োজকরা।
গত বছরের শেষ থেকে চলতি বছরের শুরুর ভিতর শহরের শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আয়োজন করা হয় কসমেটিক্স মেলার। সেখানেও ব্যাবস্থা করা হয় “র্যাফেল ড্র” তথা লটারির। জেলার ৬টি উপজেলার তৃনমূল পর্যায়ে রিক্সা, ইজিবাইক ও ট্যাম্পুর মাধ্যমে তাদের টিকিট বিক্রি শুরু হয়, সেই সাথে শুরু হয় বিভিন্ন বিতর্কতা ও বিশৃংখলার।
সর্বশেষ পর্যায়ে আইন-শৃংখলা রক্ষার সার্থে কঠর প্রশাসনিক পদক্ষেপে “র্যাফেল ড্র” বন্ধ করা হলে সেদিনের বিক্রিত টিকিটের ড্র সহ ২ দিনের পুরস্কার না দিয়ে হুট করে জেলার অজস্র সাধারন মানুষের ২০ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এর আয়োজকরা।
খবর জেলায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সাধারন মানুষ এবং বিভিন্ন স্থানে টিকিট বিক্রেতাদের উপর চড়াও হয়ে উত্তম-মাধ্যম দেয় তাদের। কোথাও আবার তাদের কাছ থেকে বিক্রিত টিকিটের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে আবারো প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও, সেবার “র্যাফেল ড্র” এর নামে আর কোন লটারির আয়োজন হয়নি।
কিন্তু চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় আবারো আনা হয় “র্যাফেল ড্র” তথা সেই সকল লটারি। আর এবারের পর্বের শুরুতেই ঘটতে শুরু করে অপ্রীতিকর ঘটনা। অভিযোগে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপার ভাটই এলাকায় মেলা আয়োজকদের যোগসাজসে “উল্লাস রাফেল ড্র” নামের লটারী প্রতারক চক্র জনগনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১০ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধায় লটারী ড্র এর সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। “উল্লাস রাফেল ড্র” সেদিন লটারি ড্র না করে তারা সবাই মেলা থেকে পালিয়ে যায়। মেলার আয়োজনকারী সাথী সমাজ কল্যাণ সংস্থার ভুমিকা রহস্যজনক ছিল বলে অভিযোগও করেন লটারী ক্রেতারা। শত শত মানুষ প্রতারনার শিকার হয় এ মেলায় লটারী কিনে। জানা যায়, সে সন্ধায় মেলামাঠে এপ্যাসি মোটর সাইকেল সহ বিভিন্ন মুল্যবান পুরষ্কার দেয়ার কথা ছিল লটারীতে।
এদিকে মেলা কমিটির প্রধান টি এ রাজু তাদের যোগসাজসের কথা অস্বীকার করে তখন জানান, যারা লটারী কিনেছে তাদের খেলা পরবর্তী দিন যে কোন ভাবে হোক করানো হবে এবং পুর্বের নিয়ম অনুসারে পুরষ্কারও দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় অবধি সেসকল লটারির ড্র সম্পন্ন করা হয়নি বলে জানা যায়। এলাকাবাসির বিশ্বাস, তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি সামলাতেই টি এ রাজু এ আশ্বাস দিলেও তিনি তা পুর্ণ করবেন না। এর আগে শৈলকুপার রতিডাঙ্গা গ্রামে লটারী আয়োজকরা ২ দিনের পুরষ্কার না দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয়।
“র্যাফেল ড্র” এর নামে বিভিন্ন লটারী প্রতারক চক্র এভাবেই দিনের পরদিন দিন মানুষ ঠকিয়ে চলেছে নিরবে। সমাজের গরীব মানুষের ঘামে ভেজা টাকা গুলো সুক্ষবুদ্ধি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু প্রতারক চক্র।
শেষে ঝিনাইদহ সদরের সিটি কলেজ প্রাঙ্গনে “শিল্প ও বানিজ্য মেলায়” চলা দৈনিক বেনারশী র্যাফেল ড্র’র নামে নগদ ও কাঁচা টাকার জুয়া খেলায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ঝিনাইদহবাসী অতিষ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করছে কবে হবে এর অবসান আর কত লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয় এই দৈনিক বেনারশী র্যাফেল ড্র।