বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
টাঙ্গাইলে আমন ধান কাটার ধুম- হতাশায় চাষীরা
মুুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলে এখন সর্বত্র আমন ধান কাটার ধুম চলছে। মাঠে-ময়দানের তাপদাহ কিংবা হালকা শীত উপেক্ষা করে চাষীরা ক্ষেত থেকে পাকা ধান সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কিন্তু বাজারে ধানের দাম কম। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ চাষীরা। তবে দিন মজুররা লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিনে টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার সাবালিয়া, আউলটিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত। সেখানকার চাষীরা ধান কাটছেন এবং ধান তুলছেন। অনেকেই আবার ধান কেটেও ফেলেছেন। আবার অনেকে ধান কাটা শুরুও করেননি। তবে এবার অনেকের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
চাষীরা বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি, শুধু ধানের দাম কম। এবার পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় লোকসান হবে। তবে সব মিলিয়ে যখন ধান কেটে ঘরে তোলা হয় তখন এক উৎসবের আমেজ দেখা যায়। তখন তাদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় আউলটিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেকের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। আমার ধান কাটা শেষ। সব মিলিয়ে আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের দাম কম ও পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় লোকসান হবে। তবে সব মিলিয়ে যখন ধান কেটে ঘরে তোলা হয় তখন এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। এ ছাড়া আমাদের ঘরে ঘরে চলছে এখন নবান্নের উৎসব।
তিনি বলেন, সরকার যদি ধানের দাম বাড়াতো তা হলে কৃষকরা আরো লাভবান হতো। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন ধানের দাম বৃদ্ধি করুক। এখন আগের মতো ধান কাটার আনন্দ পাই না। তবে ধানের থেকে শাকসবজি চাষ করলে লাভবান বেশী হই।
এ বিষয়ে কথা হয় কৃষক বিল্লাহ উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, আমি এ বছর ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। তবে আমার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলানো অবস্থায় ধান কাটছি। বাজারে ধানের দাম এমনেতই কম, এর মধ্যে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লোকসান হবে। তবে পানিতে ধান তলালেও প্রচুর প্ররিমাণে ধান হয়েছে।
ধান কাটার সময় কথা হয় সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ৩ দিন মজুরের সাথে কথা হলে তাদের দল নেতা আব্বাস আলী প্রতিবেদককে বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধান কাটি। তবে টাঙ্গাইলে বেশি ধান কাটি। ধান কেটে আমরা লাভবান হই। প্রতিদিন আমরা মজুরী হিসেবে ৩০০ টাকা করে পাই।
তিনি আরো বলেন, আমরা তিন জনই বিভিন্ন স্থানে ধান কেটে থাকি। বেকার না থেকে কোন কিছু করাটাই উত্তোম। ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ এর উপর নির্ভরশীল ।
তিনি বলেন, অন্যান্য জেলায় ধান কাটতে আমাদের কোন সমস্যা হয় না। যারা আমাদের দিন মজুর হিসেবে নিয়ে আসেন তারা আমাদের প্রতি খুবই আন্তরিক।
১০ থেকে ১২ বছর ধরে আমরা বিভিন্ন জেলায় এ কাজ করে আসছি।
কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ১৮৬ হাজার হেক্টর । অর্জিত হয় ৯১ হাজার ৭৫০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ২০ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। ৮০ ভাগ ধান কর্তন করার বাকি রয়েছে।
আরো জানা যায়, জেলায় এবার আলই-হালাই, বিন্নি, কালিজিরা, নাজির শাইল, বাশিরাজ, তুলসিমালা, স্বর্ণালতা, গাইনঞ্জা, পাজাম, পাটজাগ, আফছায়া, লতিশাইল, ঢেপা, হরি, জামাইআদুরী, কমককামানী, লালশাইল, ক্ষিরস্যাপাত, চিনিগুড়া, রাজভোগ, হাসফুল, চাপালী, হাইব্রিড ধানী, এগ্রোবান, এসএস৮এইচ, বিআর-১১, বিনা-৭, ১১, ১২, বিআর-১০, ১১,২২,২৩, ব্রিধান ২৯, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৬, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৫৭, ৬২, বিইউ-১ স্বর্না, পাজাম, হরিধান, মাধমী জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হাসিমের সাথে। তিনি বলেন, বন্যার ধানের ক্ষতি হলেও ফলন ভালো হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে আমাদের সার্বক সহযোগিতায় এবার ধানের কোন ক্ষতি হয়নি।
তিনি আরা বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমাদের ৩৫৬ জন কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছেন। তারা বিভিন্নভাবে কৃষকদের পরার্মশ দিচ্ছেন।