আন্তর্জাতিকবাংলাদেশ
সৌদি আরব তো ঘর থেকে টেনে আমাদের নারীদের নিয়ে যায়নি
সালমা লুনাঃ সৌদি আরব থেকে নাজমা বেগমের লাশ দেশে আসার পর ক্ষুব্ধ ফেসবুকবাসী নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাদের প্রতিক্রিয়ার প্রধান লক্ষ্য সৌদি আরব, সহিহ মুসলমানের আচরণ, ইসলাম ধর্ম, আরবদের অবাধ যৌনাচার ও হজ্জে গিয়ে পয়সা ঢালা ইত্যাদি। ইনিয়ে বিনিয়ে সৌদি আরব যে ধর্মটির ঠেকা নিয়ে রেখেছে সেটার দিকে নানাবিধ ইঙ্গিত ও কুৎসা শেষে নবী রসুল নিয়ে জঘন্য কিছু গঁৎবাধা কথায় গিয়ে শেষ হয় সেইসব জ্ঞানগর্ভ যুগান্তকারী লেখা।
এই মানুষগুলোই একদা খুশিতে বগল বাজিয়েছিলো তাদের পছন্দের দল ক্ষমতায় আসার পর, সৌদি আরব শ্রম বাজার উন্মুক্ত করেছে বলে। তাদের সরকারের মেয়াদকালে নানা দেনদরবারের পর নারীদের সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বলে।
এখন নাজমার মৃত্যুর খবরে তাদের গালাগালির তুবড়ি দেখে হাসি পায়। সৌদি আরব তো ঘর থেকে টেনে আমাদের নারীদের নিয়ে যায়নি। আর সৌদি আরবের নারী নির্যাতনের এই কাহিনী আচমকাও জানা যায়নি। গত প্রায় এক দশকের কাহিনী এটি। যারা গালাগালি করছেন তারা নিজেরাও জানেন এটা। এবং এও জানেন সরকার চাইলে এটা বন্ধ হবে এখনই।
তাই নিজেদের পছন্দের দলটির দিকে অন্যকেউ অঙ্গুলি উঠানোর আগেই নজর অন্যদিকে নিয়ে যেতে চান বলেই হয়তো তারা এমনটা করছেন।
করতে থাকুন।
এইরকম দলান্ধ, গন্ধগোকুলদের জন্যই সৌদি আরব বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীতায় বারবার বৈষম্যমুলক ব্যবস্থায় নারী শ্রমিক নেবে এবং তাদের খেতে না দিয়ে খাটাবে, কম বেতন বা বেতন না দিয়ে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে কাজ করাবে পাশাপাশি যৌনক্ষুধা মেটাবে। এবং শেষ পর্যন্ত লাশ বানিয়ে ফেরত দেবে। নয়তো সহ্য করতে না পেরে মেয়েগুলি আত্মহত্যা করে নিজের জ্বালা জুড়াবে।
সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলটি না করলেও সরকার সবার।
সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাই মনে প্রশ্ন জাগে, কেন কীভাবে একটা সরকার জবাবদিহিতা ছাড়া পার পেয়ে যায় এমন ঘটনার পর? কীভাবে একজন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী এরপরও খায়দায় মন্ত্রীত্ব উপভোগ করে সুখে নিদ্রা যায়?
জানি এসব প্রশ্নের জবাব হয়না। এসব প্রশ্ন করা নিষিদ্ধও বটে ।
এক ইন্দোনেশিয়ান নারী সৌদি নাগরিককে খুন করে মৃত্যুদণ্ড সাজা পেলে এর পর প্রথম প্রকাশ্যে আসে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের অত্যাচারিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। তখন ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ফিলিপিনের মত দেশ অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা জেনে সৌদিতে তাদের মেয়েদের পাঠানো বন্ধ করে। ফিলিপিন প্রকাশ্যেই বলে, আমরা আমাদের মেয়েদের ধর্ষিত হতে দিতে পারি না।
“গত সাড়ে তিন বছরে (২০১৬-১৯) শুধু সৌদি আরবেই গমনকারী বাংলাদেশি নারী শ্রমিক ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি।”
“২০১৬ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৩১১ নারী শ্রমিকের লাশ বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এদের অধিকাংশই সৌদি আরব থেকে এসেছে। সব থেকে ভয়াবহ হলো, এদের মধ্যে ৫৩ জনই আত্মহত্যা করেছেন। এর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি, ১২০ জন স্ট্রোকে এবং ৫৬ জনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে। বিদেশগামী নারীদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৪০-এর মধ্যে।” – প্রথম আলো।
এই খবরগুলো সরকারের অজানা নয়। এক্ষেত্রে কারো কারো মত হলো, এই মেয়েরা বাড়িতে ফেরার জন্য নির্যাতনের কথা প্রচার করে। আসলে সব ঠিকই আছে।
নাজমার লাশ তবে কী বলে?
এখন কথা হলো এসব জেনেও নারীরা যাচ্ছে কেন? তাদের পরিবারই বা যেতে দিচ্ছে কী করে!
বাংলাদেশের তো নিজের ঘরেই গৃহকর্মী সংকট আছে। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারও এখন রাতদিনের লোক না হোক খণ্ডকালীন কাজের জন্য একজন গৃহকর্মী রাখেন।
বাসাবাড়ি, স্কুল কলেজ, হসপিটাল, নানা ধরনের বানিজ্যিক ভবনেও এখন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নারীদের চাকরির অভাব নেই।
তবে কারা মাত্র ৮০০/ সৌদি রিয়েলের লোভ দেখিয়ে মেয়েগুলিকে নির্যাতিত হতে নিয়ে যাচ্ছে? কারাই বা এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে!
সৌদি আরবকে বর্বর অসভ্য যৌননিপীড়ক বলার আগে ভাবুন আমরা আমাদের মেয়েদের যেতে দিচ্ছি কেন? সরকার কেন বন্ধ করছে না এই বিভৎসতা?
এই প্রশ্ন করেন।
আসেন এই প্রশ্ন তুলি।
ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত