বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ১২ হাজার হেক্টর ফসলী জমি নষ্ট \ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিশেহারা কৃষক
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পানিতে নষ্ট হয়েছে জেলার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর ফসলী জমি। ভেসে গেছে রোপা আমনের বীজতলা ও নানা রকমের সবজি ক্ষেত। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিশেহারা এখন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার লাখ লাখ পরিবার বন্যায় প্লাবিত হয়ে পানি বন্দি অবস্থায় চরম দূর্ভোগের স্বীকার হয়েছেন। একদিকে পানি বন্দি অবস্থায় অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন অন্য দিকে ফসলি জমির বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানিতে ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। লোকসান থেকে ঘুড়ে দাঁড়াতে দ্রুত কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
কৃষকের অভিযোগ, আমনের বীজতলা ও ফসলী জমি নষ্ট হওয়া স্বত্তেও এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সরকারী সহযোগিতা পায়নি তারা। ফসলের এ ক্ষতির লোকসান মেটাতে হতাশায় পরেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।দ্রুত সরকারী সহযোগিতা এবং সুদ মুক্ত কৃষি ঋণের দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামের সবজি কৃষক কবির জানান, ৪’শ শতাংশ জমিতে রোপনকৃত সবজি বাগান বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে তিনি এখন সর্বশান্ত। এই জমিতে সে বেগুন, দুমবা, লাউ, ডাটা, গ্রীষ্মকালীন শিম লাল শার্ক, কচু শার্কসহ বিভিন্ন ধরনের শাকের আবাদ করেছিলেন তিনি। এ সবজির আবাদের জন্য তিনি স্থানীয় এনজিও সংস্থা সেতু থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ ক্ষতি ও ঋণ পরিশোধের ভাবনায় তিনি এখন চরম হতাশাগ্রস্থ। সরকারী সহযোগিতা আর সুদমুক্ত ঋণ ব্যতিত তার এ ব্যবসায় ঘুড়ে দাড়ানো অসম্ভব বলেও জানান তিনি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলি ইউনিয়নের কৃষক বরকত জানান, বন্যার পানিতে তার রোপা আমনের সম্পূর্ণ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পরেছে তার ধান চাষ। ধানের আবাদ করতে না পারলে তিনি চরম বিপদগ্রস্থ হয়ে পরবেন বলে শঙ্কা তারা। এই ক্ষতি থেকে উত্তরনে তিনি সরকারী সহযোগিতা কামনা করেছেন। সরকারী সহযোগিতা ব্যতিত এ অঞ্চলের কৃষকদের ঘুড়ে দাড়ানো সম্ভব নয় বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন এবারের বন্যায় আমার রোপা আমন ও পঁচাদানা কুইশালসহ প্রায় ৬ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে আমি একে বারে সর্বশান্ত হয়ে গেলাম।
ভুঞাপুর উপজেলার অর্জুনা গ্রামের কৃষক মজিদ মিয়া জানান, বন্যায় তার ৫ একর আবাদী জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ক্ষতি সে কিভাবে পুষিয়ে উঠবে তা নিয়েই হতাশ তিনি। তবে সরকারী সহযোগিতা ও সুদমুক্ত আর্থিক ঋণ সুবিধা পেলে কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল হাশিম জেলার ১০টি উপজেলার কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন। কৃষকের লোকসান পুষিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় কৃষি প্রনোদনাসহ নানা রকমের সরকারী সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।