বাংলাদেশরাজনীতিসর্বশেষ নিউজ

দেলদুয়ারে বিদ্রোহীদের নিয়ে চরম বেকায়দায় আ’লীগ, হাসি ফুটতে পারে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের

up elec. 3.5মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে আ’লীগ বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কারের পরও তারা নির্বাচনে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। ভোটারদের মন জয় করতে স্ব স্ব এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আ’লীগের অনেক কর্মী সমর্থকরাও গোপনে তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা আসন্ন ৭ মে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। যার ফলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আ’লীগের প্রার্র্থীরা বেকায়দায় পড়েছেন। দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৫টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।

আ’লীগের ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার সুযোগকে মোটেই হাতছাড়া করছেন না বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যার ফলে এবারের নির্বাচনে তাদের মুখে হাসি ফুটতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

সুত্র মতে, উপজেলার ৭৫টি ভোট কেন্দ্রের ৪২২টি বুথে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যমতে, এখানে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯শ’ ৮০ জন ভোটার রয়েছেন। তার মধ্যে ৭৫ হাজার ৩২ পুরুষ ও ৭৮ হাজার ৯শ’ ৪৮ মহিলা ভোটার। এ উপজেলায় অতীতের ভোট গ্রহন প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নজির রয়েছে। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় কিছু কেন্দ্রের পরিবেশ অশান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা।

দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নে আ.লীগ নেতা ও উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কাশেম খান মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু বাছাই কমিটি নতুন মুখ মো. মোয়াজ্জম হোসেন খানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আবুল কাশেম খান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দলের অনেক নেতাকর্মীরা গোপনে তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে সুত্র জানিয়েছে। তাছাড়া বিএনপির রকিব উদ্দিন বাবুল ও সাবেক তিনবারের সফল চেয়ারম্যান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের তালুকদার বাবলু’র  আ’লীগের ভোটের বিভক্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন।

ডুবাইল ইউনিয়নে টানা চার বারের সফল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি আতোয়ার রহমান দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। নৌকার টিকিট পেয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আতোয়ার রহমান। এ ইউনিয়নে বিএনপিও একক প্রার্থী দিয়েছে। ব্যক্তি ইমেজ ও চারবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আতোয়ারের জয়ের সম্ভাবনাই প্রকট বলে জানা গেছে।

ফাজিলহাটি ইউনিয়নে আ.লীগ নেতা কনক রঞ্জন বসু ও হুমায়ুন কবির নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল মনোনয়ন দিয়েছেন বিতর্কিত ও কম জনপ্রিয় শওকত আলীকে। এখানে দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান এম.এ মবিন সরকার ও দুইবার অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী মো. তোফাজ্জল হোসেন রয়েছেন শক্ত অবস্থানে।

লাউহাটি ইউনিয়নে উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক এম শিবলী সাদিকের বড় ভাই গোলাম ফারুক পান্না নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। এখানে দুইবারে সফল চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ফিরোজ এবার বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন মোহাম্মদ খানও শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী। তবে এ ইউনিয়নে ফিরোজ জয়ের ব্যপারে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে তার সমর্থকদের কাছ থেকে।

পাথরাইল ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের বাসার ভাড়াটিয়া সাবেক ইউপি সদস্য রাম প্রসাদ সরকার। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি এবারই প্রথম। এ ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ক্লিন ইমেজের অধিকারী হানিফুজ্জামান লিটন ও বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ চান খাঁ রয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এ দুই জনের মধ্যেই ভোট যুদ্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন গ্রাম্য রাজনীতির কারনে এ ইউনিয়নে হানিফুজ্জামান লিটনের জয়ের সম্ভবনাই বেশি।

আটিয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান বাবুলউজ্জামান মোল­াহ ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মলি­ক নৌকার মাঝি হতে চেয়েছিলেন। দলীয় কোন্দলের কারনে তারা উভয়ই বাছাই কমিটির মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মনোনয়ন দেয়া হয়েছে রাজনীতিতে নয়া মুখ মাসুদুল হাসান তালুকদারকে। দুই হেভীওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরাজিত করে নৌকার প্রার্থীর জয় এ ইউনিয়নে খুবই কঠিন বলে ভোটারদের সঙ্গে আলোচনায় জানা গেছে।

এলাসিন ইউনিয়নে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনকে। প্রায় চার বছর ধরে তিনি প্যারালাইজড রোগী। এখানে আরেক সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ও বিএনপির একক প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিয়া শক্ত প্রতিপক্ষ। এ দুই প্রতিপক্ষের মধ্যেই ভোট যুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

দেউলী ইউনিয়নে খন্দকার জাহাঙ্গীর হোসেন ও কামরুল ইসলাম সাচ্চু আ.লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পেয়েছেন দেওয়ান তাহমিনা। এখানেও যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কামরুল ইসলাম সাচ্চু মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া আ.লীগের দুই বিদ্রোহীসহ বিএনপির উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান রয়েছেন শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী হিসেবে। এখানে ১৩ হাজার ভোটের মধ্যে প্রার্থী ১১ জন।

Related Articles

Close