জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

ক্যাম্পস আয়োজিত “ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প”-এ সেবা পেল সুবিধা বঞ্চিত ২৫০০ জন

সিরাজুস সালেকীন সিফাত, টাঙ্গাইল (সখীপুর) প্রতিনিধিঃ প্রায় দুই হাজার পাঁচ শত সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঔষধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনটি করে ক্যাম্পস।

বিগত ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে ‘‘ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প’’ এর মাধ্যমে অসহায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে, টাঙ্গাইল ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দরিদ্র গ্রামবাসীগণের মধ্যে প্রায় ২৫০০ জন রোগীর নিবন্ধন ও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের, রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্রস্রাব, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়। ১০ দিন আগে থেকে এবং ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ সহ প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্র প্রদান সহ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করা হয়।

এছাড়াও ৩০০ এর অধিক চক্ষু রোগীদের চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, “রোগ প্রতিরোধে সুস্থ জীবন ধারা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। “ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প” এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বিপিএম।

আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ। এবছরের বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকশই করতে হলে, চিকিৎসা ব্যয় কমানো যায় সচেনতার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করে। আর সেই লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সফল হতে হলে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কিডনি রোগের প্রাদূর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারী, বেসরকারী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমূহকে সমন্বিত উদ্যোগ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং সরকারী তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান যুগের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হল ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, নিরবে দেহের মধ্যে বাসা বেধে বিভিন্ন মরণঘাতী অসংক্রামক ব্যাধির জন্ম দেয়। আর এই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এবং আরো কিছু কারণে মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং ৭০% নষ্ট হওয়ার আগে, কিডনি রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে এ রোগে আক্রান্ত ৯০ভাগ মানুষ বিনা চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারান। আমাদের অসচেতনতা ও সুস্থ জীবনধারা মেনে না চলার জন্য দিন দিন এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে জাতীয়ভাবে সমন্নীত সচেতনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ আরো উল্লেখ করেন, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্থেই ক্যাম্পস গত ১৫ বছর ধরে গ্রামের হত-দরিদ্রদের মাঝে এই স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের আয়োজন করে আসছে। সভায় প্রধান অতিথি, জনাব এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এম.পি বলেন, মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকে ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকান্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকান্ডে সরকারী ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষদের সহযোগীতা খুব জরুরী।

ক্যাম্পস, নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন, ক্যাম্পস এর মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে, আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিত প্রান, চিকিৎসকদের এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদের পাশে দাড়িয়ে, মানবিক কাজে নিজেদের কর্মকান্ড নিরলসভাবে চালিয়ে যাবার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল হালিম, ডাঃ এ কে এম ফজলুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ বাংলাদেশ, সখিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল(লেবু),বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, সখিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুর রহমান, ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান প্রমুখ। সকলেই ক্যাম্পস আয়োজিত এই মানবিক কর্মকান্ডের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে সামাজিক সকল কাজে তাঁদের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।

Tags

Related Articles

Close