শাহরিয়ার রিপন ।। প্রায় বছর খানেক হবে হয়তো। আমি আর আমার মামাতো ভাই বাদল। দুজনে একত্রে বিকেলের সময়টা আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠের এককোণে বসে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডার এক ফাঁকে ও আমাকে বলে উঠল, ‘‘কিরে তোর কি মেয়েদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করার ইচ্ছা আছে?”
আমি আবার একটু লাজুক টাইপের। তাই কোন মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করা হয়ে ওঠেনি। সে যাই হোক। আমি বলে উঠলাম “কিভাবে?” এতটুকু বলতেই সে আমার মোবাইল ফোনটি হাত থেকে নিয়ে কয়েকটি নাম্বারে এসএমএস পাঠালো। যার বাংলা ছিল অনেকটা এরকম, “ হ্যালো, আমি রুমি। শিক্ষার্থী, বয়স ১৭, বাসা টাঙ্গাইল। বন্ধু হতে আগ্রহী”। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি নম্বর থেকে ফিরতি এসএমএস পেলাম। যাতে লেখা, “আমি নুপুর। বয়স ১৮, শিক্ষার্থী, বাসা গাজীপুর। আমি বন্ধু হতে চাই”।
শুরু হয়ে গেল আমাদের এসএমএস চালাচালি। এরপর আমি আর কখনো বাদলের জন্য বসে থাকিনি। হঠাৎ একদিন অফার পেলাম নুপুরের সাথে দেখা করার। দিন ধার্য করা হলো। নির্ধারিত দিনে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেই আমি সেজেগুজে একদম হিরো বনে গেলাম। এর কারণ তখন পর্যন্ত আমাদের মাঝে ফোনে কখনো কথা হয়নি। আর একটি বিষয় আমাদের মধ্যে গোপন ছিল। তাহলো নুপুর জানতো যে আমিও একজন মেয়ে। আমি ছেলে, একথাটি কখনো বলা হয়নি তার কাছে।
টাঙ্গাইল বাস স্ট্যান্ড থেকে গাজীপুরের বাসে করে যাত্রা শুরু করলাম আমি। সাথে কেউ নেই। সঙ্গী বলতে একটি ব্যাগ আর ব্যাগের মধ্যে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা। সেদিন গাড়িতে ওঠতেই কি এক স্বপ্ন আমাকে ঘিরে ধরল। আমাকে যেন স্বর্গের মনোরম ছোঁয়া দিয়ে গেল কেউ একজন। আমি সারাক্ষণ সেই মানবীর কথাই ভাবতে থাকলাম। আমি কল্পনার জগতে ভেসে বেড়ালাম। সঙ্গী আমার নুপুর। বাসটি মির্জাপুর পৌঁছতেই হঠাৎ ব্রেক করে বসল। আর আমিও হঠাৎ টের পেলাম আমি আসলে বাসের সিটে বসে আছি। সব কল্পনা দূরে সরে গেল। মিনিট বিশেক পর আবার বাসটি চলতে লাগল। আমিও আস্তে আস্তে আবার প্রবেশ করলাম আমার স্বপ্নের রাজ্যে।
নিমিষেই দেখি বাস গাজীপুর বাস স্ট্যান্ডে হাজির। তখন অনেকটাই নার্ভাস হয়ে পড়লাম আমি। কারণ নুপুর যদি আমার এ ব্যাপারটা সহজ ভাবে মেনে না নেয়। আবার পরক্ষণেই ভাবলাম আমি সবকিছু ওকে বুঝিয়ে বললে অবশ্যই মেনে নেবে সে। এতসব ভেবে ওকে এসএমএস পাঠালাম। যেহেতু বলা ছিল তাই বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছিই ছিল সে। উত্তর আসল ৫ মিনিটের মধ্যেই আসছি। আমি এদিক সেদিক তাকাতাকি করতে লাগলাম আর কল্পনার মানুষটির সাথে মেলাতে লাগলাম আশপাশের মানুষের চেহারা। ৫ মিনিটের মধ্যে বেশ সময় চলে গেল, কিন্তু ওর দেখা মিলল না। যখন বিরক্ত হয়ে প্রথমবারের মত ওকে ফোন করলাম, তখন আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। কারণ, ফোন করা মাত্র দেখি আমার সামনে একটি ছেলে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে। সে ফোনে আমার কাছে জানতে চাইল, আমি কোথায়? আমাকে রিসিভ করার জন্য নুপুর নাকি তাকে পাঠিয়েছে। সে আমার কাছে জানতে চাইল রুমি কোথায়? আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম সে আসেনি। আমাকে পাঠিয়েছে নুপুরকে দেখার জন্য। তখন সে তার সব বিষয়ে আমাকে খুলে বলল। আমি আর কিছু না বলে চলে এলাম।
আবার সেই গাজীপুরের বাস। পার্থক্য শুধু যাবার সময় মনে হয়েছিল যেন স্বর্গপানে যাত্রা করছি, আর এবার মনে হলো যেন আমি এ পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা বেশে বাড়ি ফিরছি।
Email: shahriarrepon2025@gmail.com