বাংলাদেশ

সড়ক দূর্ঘটনা ও বাংলাদেশ এক সাথে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবসময়ের জন্য

29217092_589672218046060_6351749446685949952_nরাফিউজ্জামান রাফি:
সড়ক দূর্ঘটনা ও বাংলাদেশ এক সাথে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবসময়ের জন্য।এক সেকেন্ডও একজন আরেক জনকে ছেড়ে থাকতে পারে না।তাদের এই সখ্যতা, তাদের এই বন্ধুত্ব দেখার মত।এ যেন লাইলী-মজনু,শিরি-ফারহাদ ও প্রাচ্যের রোমিও জুলিয়েটকেও হার মানায়।এই সখ্যতার উপঢৌকন হিসেবে বাংলাদেশ তার বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলা রাজপথ,ফুঠপথ,মেঠোপথসহ সমস্ত পথে তাকে দিয়েছে শুল্কমুক্ত ট্রানজিট ব্যাবস্থা। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সড়কে সে তার একাধিক স্থায়ী আাবাসস্থল গড়ে তুলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। এতেই ক্ষান্ত হয়নি সে।মাঝে মাঝেই তার অবকাশ যাপনের ইচ্ছে জাগে।অবকাশের যাপনের নিমিত্তে সে যখন তখন যেকোনো সড়কে ঢু দেয়।কখনো তার অবকাশ যাপন তাবু দেখা যায় রাজপথে,কখনো ফুঠপথে আবার কখনো মেঠোপথে।এই সুবাদে প্রতিটি সড়কে সে নির্বিঘ্নে কৃতিত্বের সাথে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে সড়ক দূর্ঘটনায় বাংলাদেশ অতিজর্জরিতভাবে সাজিয়ে তুলে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব আরো গভীর করে যাচ্ছে।তাদের এই সখ্যতা ভাঙতে কতৃপক্ষের কোন মাথাব্যাথাই দেখা যায় না।বরং তারা দূর্ঘটনার পর হাসি মুখে ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে’ বলে নিজেদের দায় আল্লাহর কাধে চাপিয়ে এই সখ্যতাকে আরো দৃড় ও মজবুত করে তুলতে সাহায্য করেন।সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত (ভালো রাস্তা) সড়ক দূর্ঘটনার বসবাসের অযোগ্য বলে তারা এদেশের প্রমান সংখ্যক ভাঙা চোরা রোগ শোক অনাহারে অর্ধাহারে ও অপুষ্টিতে ভোগা রাস্তাগুলোর আহার,পুষ্টি সুচিকিৎসার(মেরামত) ব্যবস্থা না করে তাদে সড়ক দূর্ঘটনার বাসযোগ্য রাখতে যেন সদা ততপর থাকেন।ফলস্বরুপ সড়ক দূর্ঘটনা তাদের তাদের ধন্যবাদ দিতে দিতে আরো শক্তি ও আন্তরিকতা নিয়ে আজীবনের মেয়াদে বাংলাদেশের হাত ধরে আছে।

এছাড়া রয়েছে এদেশে বিপুল সংখ্যক লক্কর ঝক্কর,মুড়ির টিন নামে পরিচিত শত শত গাড়ী এবং সেগুলোর ওপর উপবিষ্ট একদল অদক্ষ অনভিজ্ঞ অশিক্ষিত চালক,যা সড়ক দূর্ঘটনার প্রধান উপাদান হিসেবে গন্য।এসব মুড়ির টিন মার্কা গাড়িগুলোকে কতৃপক্ষ মাঝে মাঝেই নিষিদ্ধ করে থাকে। এরা তখন ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামীর মত কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকে।তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত হলে এবং ভুলোমনা কতৃপক্ষ সব ভুলে গেলে তারা আবার বেরিয়ে এসে রাজপথে রাজত্ব শুরু করে দেয়।ফলে অনূকুল পরিবেশ পেয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুন উৎসাহে সড়ক দূর্ঘটনা ফ্রেন্ডশীপ ডে পালন করতে থাকে বাংলাদেশের সাথে।তাদের বন্ধুত্ব সকলের সহযোগীতায় আরও অটুট হতে থাকে।

rajib_6
সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত রাজীব

বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখছি ইলিয়াস কান্ঞ্চন নামক এক ভদ্রলোক,যিনি চলচিত্রের এক সময়ের দাপুটে নায়ক ছিলেন তিনি তার স্ত্রী সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরন করায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করে যাচ্ছেন।কিচ্ছু হচ্ছে না তাতে।এক সময়ের দাপুটে নায়ক এই কান্ঞ্চন সড়ক দূর্ঘটনার দাপটের কাছে দাড়াতেই পারছেন না।বাংলা সিনেমায় সর্বদা তিনি খলনায়কের বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করে দেশ ও সমাজকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাচালেও বাস্তব জীবনে সড়ক দূর্ঘটনা নামক খলনায়কটির হাতে দেশ ও জাতিকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারছেন না।তিনি সড়ক দূর্ঘটনার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাঙাতো দূরের কথা বিন্দুমাত্র চিড়ও ধরাতে পারছেন না।বরং তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে তার সম্মুখেই কোলাকুলি করছে বাংলাদেশ ও রোড অ্যাক্সিডেন্ট।

সবচেয়ে খুশীর কথা হলো এই লিখা যখন লিখছি তখন আমিও সড়ক দূর্ঘটনার ও বাংলাদেশের প্রবল বন্ধুত্বের শিকার হয়ে পা ভেঙে পঙ্গুত্বের দায় নিয়ে আছি।

আরো দীর্ঘস্থায়ী হোক তাদের বন্ধুত্ব।আমরা যারা তাদের বন্ধুত্বের বলি, তারা সবাই তাদের বন্ধুত্বকে সেলিব্রেট করতে থাকি।প্রতিদিনই পালিত হোক সড়ক দূর্ঘটনা ও বাংলাদেশের ফ্রেন্ডশীপ ডে।

Tags

Related Articles

Close