বাংলাদেশরাজনীতিসর্বশেষ নিউজ

টাঙ্গাইলের রানা এমপির ৪ ভাই শত কোটি টাকার মালিক: অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করবে পুলিশ

rana mokti bappiমুুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলের আলোচিত ও সমালোচিত রানা এমপির ৪ ভাইয়ের বিরুদ্বে আদালত হুলিয়া জারি করে তাদের অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। দুই এক দিনের মধ্যে তাদের অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করবে পুলিশ।  এ আদেশের পর পুলিশ আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

পুলিশ ইতিমধ্যে খান পরিবারের ৪ ভাইসহ মুক্তিযোদ্বা ফারুক হত্যা মামলার সাথে জড়িতরা যাতে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে এ জন্য তাদের পার্সপোটের ফটোকপি সীমান্ত এলাকায় সহ বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে জমা দিয়েছেন বলে ডিবি পুলিশ নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে রানা এমপিসহ তার অপর ৩ ভাই অবৈধভাবে প্রায় শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে রানা এমপির নামে শহরের কলেজপাড়া গ্লোবাল টেনিং সেন্টার ও ঘাটাইলে ২০ শতাংশের উপর একটি বাড়ি রয়েছে। তার ভাই সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির নামে কলেজ পাড়ায় ১৫ শতাংশ জমির উপর ৩ তালা একটি বাড়ি স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে রয়েছে। এছাড়া গোপনে যত সম্পদ আছে তা তাদের  লালিত পালিত ও তান্ডব সৃষ্টিকারী সক্রিয় সন্ত্রাসীদের নামে রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রানার এক ঘনিষ্ঠজন রানা এমপিসহ ৩ ভাই শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া জিরো থেকে লাখপতি ও কোটিপতি বনে যাওয়া এ সন্ত্রাসীরা পরিবারটির দুঃসময় দেখেই গাঁঢাকা দিয়েছে। চলমান এ সন্ত্রাসী গ্রেফতার আতঙ্কে টাঙ্গাইলবাসীর মধ্যে ব্যাপক স্বত্তি ফিরতে এসেছে। এর ফলে হত্যা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার ব্যাপকতা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে আসায় এ নগরবাসীর জীবনে সুবাতাস ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যেই এ নগরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা কাটাসহ সন্তানের ভবিষ্যৎ বিনষ্টের শঙ্কার মেঘ কাটতে শুরু হওয়ায় অন্তরে অন্তরে নতুন প্রশান্তি আসতে শুরু করেছে বলেও জানিয়েছে এ নগরবাসীর অনেকেই। তবে এ প্রশান্তিকে স্থায়ী রূপ দিতে শুধু খান পরিবারের এমপি রানা, মেয়র মুক্তি বা এই চার ছেলেই নয়, তাদের ছত্রছায়ায় থাকা সক্রিয় প্রতিটি সন্ত্রাসীর গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ভূমিকার দাবীও তুলেছেন জেলাবাসী।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন খান পরিবার মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই ভয়ঙ্কর থেকে সর্বোচ্চ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে শুরু করে। ভয়ঙ্করের এ ধারা অব্যাহত রাখতে জেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রতিটি অঙ্গসংগঠণের দখল নেয় এ পরিবারের আর্শিবাদপুষ্ট সন্ত্রাসী নেতাকর্মীর। বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোসহ হত্যা, জমি দখল, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনা, টেন্ডারবাজিসহ নানা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে এ রাজনৈতিক মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের বিচরনে শীর্ষ “আতঙ্কের নগরী” মর্যাদা পায় টাঙ্গাইল। আতঙ্ক জড়িত এ নগরবাসীর হাট, বাজার, মার্কেট, ব্যবসা বাণিজ্যের দখলসহ প্রয়াত নায়ক মান্নার বাসভবন, রূপবানী সিনেমা হলের মত মহামূল্যাবান অসংখ্য সম্পদের দখলদার হয়ে ওঠেন এ খান পরিবার। এ সকল অপকর্মের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে হোটেল বয় থেকে পদন্নতি পাওয়া শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস মিয়ার নেতৃত্বে। এ অভিনব নেতারই নেতৃত্বে জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্কয়ারের নামে বরাদ্দকৃত নিরালা মোড়স্থ জমিটি প্রথমে দখল নিয়ে গড়ে তোলে জেলা শ্রমিকলীগ কার্যালয়। বর্তমানে দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ দখলের পর থেকেই কার্যালয়টি হয়ে ওঠে জেলাবাসীর আতংকের স্থান। ব্যবসায়ীরা জানান, জমির কেনাবেচা ও বন্টনসহ ভাগ বাটোয়ারা, বিবাহ বিচ্ছেদের টাকা বন্টনসহ অসংখ্য হত্যা মামলার মত অমীমাংসিত মামলারও নাম সর্বশ্য সুরাহা দেয় এ এই স্থান থেকে। এখানে বিচার প্রার্থনা বাবদ উভয় পক্ষকেই গুণতে হয়েছে মোটা অংকের সালিশী ফি বলেও ভুক্তভোগী অনেকের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু কারণ বা অকারণেই টাকা আদায় করে খ্যান্ত হয়নি শ্রমিক অফিসের পরিচালক এ নেতা শহরে রয়েছে তার অসংখ্য দখলকৃত জমিও। ইতিমধ্যে শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাগমারায় প্রায় ৫০ শতাংশের দুইটি জমি দখলদার রয়েছেন তিনি।

এছাড়াও পৌর এলাকার ১১ নং ওয়ার্ডের কচুয়াডাঙ্গা পুরাতন বিমান বন্দর রোডে দখলকৃত জমির ওপর গড়ে তুলেছেন ১০তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক এক বহুতল ভবন। এ নেতার ্থ্যান শুধু রাজনৈতিক আর্শিবাদ বললেও মন বলা বা ভাবা হবে, সে একবিংশ্ব শতাব্দির আলাদিনের চ্যারাগের মালিক বনে গেছেন বলেই উলে­খ করেছেন তারা। এ আর্শিবাদেরই ফলে তিনি বর্তমানে একাধিক স্ত্রীরও মালিক হতে সক্ষম হয়েছেন বলেও জানান তারা। শ্রমিক নেতার রূপধারী এ আব্বাসেরও রয়েছে স্পেশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের বর্বরতায় এ শহরতলী হয়ে উঠেছিলো আতঙ্কের নগরী। খান পরিবারের আনুগত্যতা প্রকাশে আর ছত্রছায়ার দাপটে এ সন্ত্রাসীরাই সকল প্রকার প্রতিবাদ ও বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিহত করতো। এ অবৈধ শ্রমিকলীগ কার্যালয়ের আশপাশের সর্বত্র স্থানেই গড়ে তুলেছিল অস্ত্রাগার। যার প্রমান মিলেছে মাত্র কয়েকটি দিন আগে উদ্ধার হওয়া পুলিশী অভিযানে। এ নেতার সুরে সুর মিলিয়ে এদের সকল সন্ত্রাসীই প্রচার প্রচারনায় হয়ে উঠেছিল খান পরিবারের আদর্শগত বলিষ্ট সৈনিক অনেকেই জানান।   জেলা আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতারা জানান, শহরতলীর এমপি আমানুর রহমান খান রানার দখলদায়িত্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার নেতৃত্বভার পায় ছাত্রদল নেতা রেজা ও ডিস ক্যাবল ব্যবসায়ী তুহিনের হত্যাকারী ও যুবলীগ নেতার রূপধারী এক পেশাধারী সন্ত্রাসীই হচ্ছে এই মোর্শেদ। সমাজ ও রাজনীতির অবাঞ্চিত অক্ষর জ্ঞানশূণ্য বিভিন্ন গোত্র এবং পরিচয়হীনদের নিয়ে গড়ে তোলে এ মোর্শেদ বাহিনী। নতুন বাসস্ট্যান্ড, বিশ্বাস বেতকা, আশেকপুর, নগরজলফৈসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী মহলই ছিল চাঁদাবাজির উলে­খযোগ্য স্থান। বৃহত্তর এ এলাকায় একক আধিপত্যত্বা জাহির করতে পরিবহনের ড্যান্ডিং মিস্ত্রি কবির ও সমীরকে বিশ্বাস বেতকা নিয়ন্ত্রণের দায়দায়িত্ব দেন বাহিনী কর্তা মোর্শেদ। এ সময় তাদের নেতৃত্বে অসংখ্য নামিদামি জমি দখল হয়। এ দখলদারিত্ব রক্ষার মন্ত্র রূপেই তাদের নেতৃত্বে বৃহৎ এ অঞ্চলে গড়ে ওঠে পূর্বাঞ্চল আওয়ামীলীগ কার্যালয়। এ বাহিনীর পালিত মাদকসেবী উল্কার গুলিতে নিহত টাঙ্গাইল মডেল থানার এ.এস.আই ইউনুস। এ পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সন্ত্রাসী উল্কা ও তার এক সহযোগির মৃত্যু হলেও, তাদের পালন কর্তা কবির, সমীরা এখন আত্মগোপন করে আছে। এ খান পরিবারের মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির অনুগত ও বাহামভুক্ত কলেজপাড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী চান, নুরু ও ছানোয়ার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে এ নেতাদের বিশ্বস্ততা অর্জনের পাশাপাশি উলে­খযোগ্য অবস্থান গড়ে তুলেছেন। যার ফল স্বরূপ শহরতলীর প্রথমসারির বাজারের কয়েক আড়তের দখল নেয়াসহ চান প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে অত্যাধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণ করে তুলেছেন। একই প্রক্রিয়ায় নুরু ও ছানোয়ার মানসম্মত ভবন নির্মাণসহ প্রায় কোটিপতির অবস্থান দখল করে শিল্পপতি বনে গেছেন বলে জানান জেলা আওয়ামীলীগের নির্ভরযোগ্য সুত্র। যাদের পরিচয় বা এ অবস্থান মূলতই সৃষ্টি হয়েছে খান পরিবারের ছত্রছায়াকে ঘিরে। উলে­খযোগ্য টাঙ্গাইল পতিতাপল­ীর অপরাধ কর্মকান্ড, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও পতিতাদের চাঁদা আদায়ের নেতৃত্ব, বাড়ী দখলসহ নারী কেনা বেচায় নিযুক্ত ছিল বেবীস্ট্যান্ডের প্রভাবশালী বর্বর পরিবারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দুলাল, গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ আলী, পাগলা মনির ও মান্নান। এ সন্ত্রাসীরা প্রভাব ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এ পতিতাপল­ীতে অবাধে ইয়াবা, হেরোইন, দেশী বিদেশী মদ, বিয়ার, গাজাসহ নানা ধরণের মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতো। এদের দৌরাত্মে প্রায়ই সর্বশান্ত ও লাঞ্চিত হতো পতিতাপল­ীতে আসা খদ্দেরসহ পতিতারাও।

এছাড়াও পশ্চিম টাঙ্গাইলের নিয়ন্ত্রণ কর্তা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার দেহরক্ষী বাঘিলের আলোচিত সর্বহারা নেতা শাহজাহান। এ সর্বহারা নেতা সকল জমি দখলদারিত্বে বৃহত্তর পশ্চিম টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকার স্বীকৃত সর্বহারা দলের ভারাটে খুনিদের দায়দায়িত্ব বহন করতো। প্রশিক্ষিত এ সর্বহারা সন্ত্রাসীরাই এ খান পরিবারের পশ্চিম টাঙ্গাইলের খান পরিবার বিরোধী ও শহরতলীর চাঞ্চল্যকর অসংখ্য হত্যার সঙ্গী হয়ে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীন আওয়ামী রাজনীতিবিদ ফারুক আহমদ হত্যাকান্ডে এ খান পরিবারের চার ছেলে জড়িত হওয়ার আভাস পাওয়ায় বর্তমানে সর্বহারার এ সন্ত্রাসীরাও আত্মগোপন করেছে। উত্তর টাঙ্গাইলের দেওলা, শিবপুর, বেলতাবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রন করতেন খান পরিবারের আশির্বাদপুষ্ট আজিজুর রহমান দিলু। তিনি জমি দখল, চাদাঁবাজি ,মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন। খান পরিবারের ৪ ভাই পলাতক থাকায় দিলুও পালিয়েছে। খান পরিবারকে ঘিরে জেলা ছাত্রলীগের নেতারাও এখন কোটিপতি।

জেলা আওয়ামীলীগের এক সুত্র জানায় , শান্তিপ্রিয় এ নগরবাসী দাবী অপরাধের কারিগর শুধু খান পরিবারের এ চার ভাই এমপি রানা,সাবেক  মেয়র মুক্তি, সাবেক পরিবহন নেতা কাকন বা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পা তাদের লালিত পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বেনামে তারা স্থাবর সম্পাত্ত গ্রাস করেছেন। স্বমূলে সন্ত্রাস নির্মূল করতে এদের ছত্রছায়ার প্রতিটি পাড়া মহল­ার সন্ত্রাসী ও প্রভাব বিস্তারকারীসহ সুবিধাভোগীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার কার্যকর করলেই এ নগরী দেশের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী জেলা টাঙ্গাইল, পুনরায় ফিরে পাবে অগ্রগতি ও অতীতের গৌরবাজ্জল অধ্যায় বলেও দাবী তুলেছেন তারা। তবে পুলিশ এসব সন্ত্রাসী ও চাদাঁবাজদের ব্যপারে নজরদারী করছে বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক ভুইয়া বলেন আদালতের নির্দেশনা বুধবার পর্যন্ত হাতে পায়নি। আদেশ পেলেই অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হবে। টাঙ্গাইলের ডিবির ওসি মাহফীজুর রহমান বলেন আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্বা  ফারুক হত্যা মামলার আসামী রানা এমপিসহ তার ৩ ভাই ও অপর আসামীরা যাতে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ ও সীমান্ত এলাকায় পাসপোর্ট ও ছবি সহ বার্তা প্রেরন করা হয়েছে।

Related Articles

Close