জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

ঝিনাইদহে আশিকুর অপহরণ নাটকের রহস্য উন্মোচন করলেন সার্কেল এসপি আবুল বাশার

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ সদর পৌর এলাকার ভূটিয়ারগাতীর আতিয়ার রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ হন।থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। দীর্ঘ ৪৫ দিন পরে খোঁজ পাওয়া গেল সেই আশিকুরের। তার নিখোঁজের ব্যপারে তার বন্ধু সেনা কর্মকর্তার ছেলে মোর্শেদকে অভিযুক্ত করে আশিকুরের পরিবার। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসলো আশিকুর নিজেই নিখোজ হয়েছিলেন।

আশিকুরের বড় ভাই হুমায়ুন কবির তার নিখোঁজের ১২ দিন পর সাংবাদিকদের বলেন, ছোট ভাই আশিকুর রহমানের সাথে শহরের মহিলা কলেজপাড়া এলাকার মোরশেদের সাথে তার দীর্ঘদিন সখ্যতা ছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর যশোর যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন আশিকুর রহমান। মোরশেদের সাথে গাড়িতে যশোর যান। গাড়িতে যাওয়ার সময় তারা ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেন। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ রয়েছে।

এসময় তিনি আরও বলেন, যশোর যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এখনও পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ রয়েছে। মোরশেদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশিকুরের ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারেনি। এরপর থেকে মোরশেদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বড় ভাই হুমায়ুন কবির অভিযোগ করেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার কাছে ৫০ হাজার টাকা ছিল। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ঝিনাইদহের পুলিশ প্রশাসন এই ডায়েরীর তদন্তে জোর দেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার গভীরে প্রবেশ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তখন পুলিশকে জানানো হয় আশিকুর বেনাপোল থেকে সস্তায় অকশানে মোবাইল ফোন নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন দোকানে বিক্রির ব্যবসা করে। সেদিনও বেনাপোলে আশিকুর মোবাইলের একটি চালান আনতেই গিয়েছিলেন এবং তাদের ধারণা এই ব্যবসার কোন সিন্ডিকেট তাকে গুম বা অপহরণ করে থাকবে।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে শুরু করেন আশিকুরের খোঁজ। মোবাইল ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে তিনি রাজধানী ঢাকাতেই আশিকুরকে লোকেট করেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি সময় নেন আরও ২ সপ্তাহ। আশিকুর তার পুরাতন সিম কার্ডটি বাদ দিয়ে নতুন একটি সিমকার্ড ব্যহহার করেছেন সেই পুরানো মোবাইলেই। এই কর্মকর্তা একই জিও লোকেশনে আশিকুরের এক বন্ধুর সন্ধান পান। তার মোবাইল ট্রাক করে কৌশলে তার মাধ্যমে সকল তথ্য বের করা হয়। জানাগেছে আশিকুর রহমান ঢাকার একটি হোটেলে চাকরী করছেন। কিন্তু নিজেই কেন অপহরণের অভিনয় করলেন বা আত্মগোপন করলেন এমন প্রশ্ন ঝিনাইদহ শহর ও ভূটিয়ারগাতীর মানুষের মনে।

পুলিশ কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, ঘটনার পর পরিবার থেকে আমাদের কিছু ভূল তথ্য দেওয়া হয়। অবশ্য তারা একটি বিপদের আশংকায় ঘটনার সাথে জড়িতে সন্দেহ যে কাউকে করতে পারেন তারা যদি ঘটনার সাথে সংশ্লীষ্ট থাকেন। তারা মোরশেদের নামে মামলা করতেও চেয়েছিল। আমি রিস্ক নিয়েই মামলা না নিয়ে জিডির ভিত্তিতেই তদন্ত চালিয়ে গেছি। অবশেষে প্রযুক্তিত মাধ্যমেই আশিকুকের ডিটেলস্ পেলাম। নিখোঁজ থাকা অবস্থায় মোরশেদের নামে ঐ মামলা নিলে এতদিন হয়তো সে জেলেই থাকতো। বিনা অপরাধে তাকে হয়রানি করা হতো। আশিকুর ঢাকার একটি হোটেলে কাজ করছেন। সে নিজেই আত্মগোপনে রয়েছে। কেউ তাকে অপহরণ করেনি।

আশিকুরের বাবা আতিয়ার রহমান বলেন,আমার ছেলের সন্ধান পেয়েছি। সে ঢাকায় আছে। আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি। পুলিশের মাধ্যমে জেনেছি সে ঢাকায় রয়েছে। কিন্তু ভূটিয়ারগাতীতে আশিকুর সম্পর্কে খোজ নিতে গেলে জানাগেল বিভিন্ন অভিযোগ।

এ এন্ড বি ব্রিক্স’র ম্যানেজার ভূটিয়ারগাতী গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, ১৭ তারিখে আশিকুর আমার ভাটা থেকে ১৭ হাজার টাকা করে ২ গাড়ী ইট কেনে। আমাদের বলে আরাপপুরের একটি ঠিকানায় ইট ফেলতে। ইট ফেলা হলে ড্রাইভার টাকা আনতে গেলে বলে আমি বেনাপোল যাচ্ছি, এসে দেব। তার পর থেকেই তাকে আর পাওয়া যায়নি।পরে যেখানে ইট ফেলা হয়েছিল সেখানে যেয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আশিকুর তাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে গাড়ি হিসাবে টাকা নিয়েছে। সেই টাকা নিয়েই সে বেনাপোল গেছে। এখন জানলাম সে ঢাকায় আছে। আমার ইট অন্য মানুষের কাছে বেচে প্রতারণা করে সে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। প্রতারণা করে সে টাকা নিয়ে পালানোর ব্যাপারে প্রশাসনের সহায়তা চাই আব্দুল মান্নান। আশিকুরকে অপহরণের অভিযোগে মোরশেদের পরিবারকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। হুমকি ও মানহানী সহ বিভিন্ন চাপ সহ্য করেছে। তবে আশিকুরের আত্মগোপনের পেছনে আরও কি কাহিনী রয়েছে? আশিকুর কিসের ব্যবসা করতো। সরকারের ট্যাক্স ফাকি দিয়ে চোরাই পথে নিয়ে আসা মোবাইলের না কোন মাদকের? এমন প্রশ্ন ভূটিয়ারগাতী গ্রামবাসীর।

Related Articles

Close