বাংলাদেশরাজনীতিসর্বশেষ নিউজ
সখীপুরে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে বিদ্রোহীরা এগিয়ে
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: ২৮ মে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই ছয়টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহীদের চাপে বিপাকে রয়েছে প্রার্থীরা । হাতীবান্ধা বাদে ৫টি ইউনিয়নেই শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আর এ সব বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিশ্চিন্তে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জনসংযোগ, মিছিল-মিটিং দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে বরং তারাই এগিয়ে আছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করার সংবাদ জেনেও দলের পদ-পদবীতে থেকেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে যেন কোনো ভয়ভীতি কাজ করছে না। কোনো রক্তচক্ষুই যেন তাঁদের দমাতে পারবে না। দল এবং দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের নির্বিঘœ প্রচারণায় হতাশ ও অবাক। তাহলে কী প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়ম করেছে দলীয় হাই কমান্ড ? এ সব প্রশ্ন ঘুরপাক আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভোটার এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
এরই মধ্যে কাকড়াজান, কালিয়া ও বহেড়াতৈল ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ কেন্দ্রই ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। সবার দৃষ্টি ও জল্পনা-কল্পনা এখন বিদ্রোহীদের ঘিরে। কোন নেতার ইশারা-ইঙ্গিতে চলছে দলের বিরুদ্ধে তাদের এ নির্বাচন ? এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নানাবিদ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ঘুরে জানা যায়, কাকড়াজান ইউনিয়নে উপজেলা আ.লীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মনোনয়ন কিনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদ্য দলে যোগদানকারী দুলাল হোসেন। তাঁর পাশে ছায়ার মতো রয়েছে ওই ইউনিয়নের চার বারের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক পান্না। গণ মানুষের নেতা এলাকায় যিনি গণ শামসু নামে পরিচিত। অধিকাংশ ভোটারদের আশা ভরসা, আস্থা এবং আবেগের ঠিকানা যেন শামসুল হক পান্না। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য দলও ‘নৌকা ঠেকাও’ এরই মধ্যে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
বহেড়াতৈল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম ফেরদৌস। শক্ত অবস্থান থেকে তিনি দ্বিধাহীনভাবে নির্বিচারে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীই শক্তিশালী বলে ভোটাররা জানান। সোহেল রানা সরকার দলীয়ভাবে অন্যরকম কোন সহযোগিতা না পেলে কোনোভাবেই নৌকা জয়ী হতে পারবে না বলে একাধিক ভোটাররা জানান।
কালিয়া ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম কামরুল হাসান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, দুই বারের জেলা শ্রেষ্ঠ চেয়ারাম্যান, উপজেলা আ.লীগের নব্য সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল মিয়া । তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করায় এখানেও নৌকার ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, উপজেলা পর্যায়ে নেতৃবন্দের মধ্যে মতবিরোধ থাকার কারণেই প্রতিটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের অবস্থা নড়বড়ে।
যাদবপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের জোয়াহেরের ছোট ভাই, উপজেলা আ.লীগের নব্য সদস্য, সাবেক চেয়ারম্যান একেএম আতিকুর রহমান আতোয়ার, এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী প্রচার ও প্রকাশনা লীগের ঢাকা উত্তর এর সাংগঠনিক সম্পাদক, ব্যবসায়ী এস এ শাহীন, যিনি দীর্ঘদিন দরে এলাকার উন্নয়নে নানাবিদ কাজ করে যাচ্ছেন। একই ইউনিয়নে আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ খালেক।
বহুরিয়া ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদের ছেলে, উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য গোলাম কিবরিয়া সেলিম । এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্টি চলচিত্র নির্মাতা শ্রী নিরঞ্জন সরকার। দীর্ঘদিন তাঁর এলাকায় কোন চেয়ারম্যান প্রার্থী না থাকায় দলমত নির্বিশেষে তাঁর পক্ষেই কাজ করছে এলাকাবাসী।
হাতীবান্দা ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন, সাবেক ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন। এ ইউনিয়নে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও শক্ত অবস্থানে জয়ী হওয়ার ফুরফুরে মেজাজে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচেছন আরেক সাবেক চেয়ারম্যান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মো.আতোয়ার রহমান। তার অবস্থানও এগিয়ে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত সিকদার বলেন, বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত থাকবে না । প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরাই জয় লাভ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।