বিনোদন

নায়করাজ; একটি উদ্বাস্তুর হাত এসে ধরেছিল এই দুঃস্থ চলচ্চিত্র শিল্পের হাত

দুঃস্থর হাত উদ্বাস্তু ধরবে এটাইতো স্বাভাবিক

রাফিউজ্জামান রাফিঃ ৭০’র দশকে এই বাংলায় যখন উর্দু ও হিন্দি সিনেমার দাপটে মার খাচ্ছিলো বাংলা সিনেমা।তখন একটি হাত এসে ধরেছিল এই মার খাওয়া চলচ্চিত্র শিল্পের হাত। হাতটি ছিলো একজন উদ্বাস্তুর হাত।দুস্থেের হাত উদ্বাস্তু ধরবে এটাইতো স্বাভাবিক।তারপরতো ইতিহাস। এই উদ্বস্তুর হাত ধরেই সেসময়ের দুঃস্থ বাংলা চলচ্চিত্র স্থান করে নেয় বিশ্বের মধ্যে চতুর্থতম স্থান আর সেই সাথে সাথে হাতটিও কখনো রোমান্টিক প্রেমিকের প্রেমিকার গালে আদরমাখা হাত, কখনো প্রেমিকাকে পাগল করে দেয়া ডাকাত প্রেমিকের হাত, কখনো অন্যায়ের প্রতিবাদী তরুনের হাত, কখনো অস্ত্র হাতে আলোর মিছিলের যোদ্ধার হাত, কখনো ছুটির ঘন্টা বাজানো দপ্তরীর হাত, কখনো প্রেমিকাকে ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’ গান শোনানো প্রেমিকের টেলিফোনে রাখা হাত, আবার কখনো পাগলা রাজার হাত হতে হতে হয়ে ওঠে নায়ক রাজের হাত।

তিনি আর কেউ নন, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন সম্রাট, নায়করাজ রাজ্জাক।যিনি দীর্ঘ সময় দাপটের সাথে শাসন করেছেন বাংলা সিনেমার দুনিয়া। আজ তার জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে দুই বছর ধরে আমাদের এই রাজা আমাদের সাথে নেই। কেননা দুই বছর হলো এই রাজা তার রাজত্ব ছেড়ে সবাইকে ফাকি দিয়ে চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। এক বিকেলে তিনি অসুস্থবোধ করলে তার পরিবারের সদস্যগন তৎক্ষনাত তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়ে গেলে ছয়টা তেরো মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক অচেতন অবেস্থায় থাকা নায়ক রাজকে মৃত ঘোষনা করেন।আর এই ঘোষনার মধ্য দিয়ে চলচিত্র পাড়ায়,চলপ্রেমীদের মনে নেমে আসে শোকের ছায়া।

প্রয়াত এই অভিনেতা জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার টালিগন্জে।সপ্তম শ্রেনীতে পড়াবস্থায় তার স্কুলে মঞ্চায়িত মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে হাতেখড়ি নেন তার অভিনয় জীবনের।পরবর্তীতে কলকাতায় বসবাসরত অবস্থায় টিভি নাটকে অভিনয় করেন তিনি।১৯৬৪ সালে দেশভাগের সময় পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান, বর্তমান বাংলাদেশে।রুটি রোজগারের তাগিদে কলকাতার টিভি অভিনেতা এপাড়ে এসে কাজ শুরু করেন সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে।এর মাঝে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ও চালিয়ে যান তিনি।এরপর তিনি পরিচিত হন প্রতিভাবান পরিচালক জহির রায়হানের সাথে।তিনি জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে কাজ করা শুরু করেন।

এরপর আসে তার নায়ক হওয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষন। জহির রায়হান বাংলা লোককাহিনীর ওপর তার নির্মিতব্য বেহুলা চলচ্চিত্রের জন্য নায়ক খুজে বেড়াচ্ছিলেন।কিন্তু কেউ নায়ক হতে রাজী না।কেননা নায়ককেতো সারা সিনেমায় মৃত লক্ষিন্দর হয়ে কলাগাছের ভেলায় শুয়ে থাকতে হবে।কাউকে না পেয়ে জহির রায়হান তার সহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাককে বললেন,’রাজু আপনিই আমার ছবির নায়ক’।এভাবেই নায়ক হয়ে উঠলেন নায়ক রাজ্জাক।আর জানান দিলেন,’রাজা আসছে’।এরপর একে একে তিনশতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।তার দূর্দান্ত অভিনয় দিয়ে জিতে নেন বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের মন।আর উপাধি পান নায়করাজ।তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অধ্যায়ের যবনিকাপাত ঘটেছে।

আজ বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী পুরুষ, বাংলা সিনেমার পাগলা রাজার জন্মদিন। প্রয়াত এই চিত্রনায়কের প্রতি শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাঞ্জলী।

Tags

Related Articles

Close