বিনোদন

ভাইফোটা নিয়ে চঞ্চল চৌধুরীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

Image may contain: 10 people, people smiling, people standing

দর্শকপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থান করছেন। কারণ তার পরবর্তী সিনেমা ‘হাওয়া’র শুটিং সেখানেই হচ্ছে। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন মেজবাউর রহমান সুমন।

কর্মময় দিন পার করলেও পরিবারের কথা ভুলতে পারেননি চঞ্চল চৌধুরী। ভাইফোঁটার মতো উৎসব যদি বোনদের ছাড়া কাটে তবে মন বিষাদে ভরে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। দূরে থেকেও প্রিয় ভাই-বোনদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো—

‘আমার বোনদের নিয়ে কোনো দিন তেমন কিছু লেখা হয়নি। আমরা পাঁচ বোন, তিন ভাই। আমি সবার ছোট, অনেক আদরের। পাঁচ বোনকে ডাকি দিদি, মনদি, রাঙাদি, সোনাদি, খুকদি। আজ আমি বা আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সকল কৃতিত্ব আমার এই বোনদের, ভাইদের। আমার বাবা-মা যে কত কষ্ট করে প্রত্যেকটা সন্তানকে বড় করেছে, সেসব আজ অতীত। আমার মা বাবার সাথে আমাদের এই জীবন যুদ্ধে প্রথম সঙ্গী হয়েছিল আমার বড় দিদি ও তাঁর শ্বশুর বাড়ির পরিবার। আমরা প্রায় সবগুলো ভাইবোন কমবেশি পড়ালেখা করেছি। আমার দিদির বাড়ি বেলগাছী, রাজবাড়ীতে। তারপর আমার মনদি তাঁর ছোট্ট চাকরির সবটুকু বেতন দিয়ে, সোনাদি তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে জমানো লুকানো টাকা দিয়ে আমাদের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে।

আমার মনদি এখনো প্রত্যেকবার আমার বাসায় আসার সময় পুটলা বেঁধে গ্রামের বাড়ি থেকে সবজি, আম, কাঁঠাল, পেঁপে যখন যা পায় নিয়ে আসে। আমি রাগারাগি করে বলি, ‘তুই এত কষ্ট করে এত বড় বড় ব্যাগ নিয়ে, এত রাস্তা পার হয়ে কেন আসিস? রাস্তায় যদি কোনো বিপদ হয় তোর। এগুলো তো ঢাকাতেই পাওয়া যায়। মনদি হেসে বলে, ‘এ ভাই, ঢাকায় তুরা কি খাস না খাস…আমি এগুলো শুদ্ধর জন্যি আনছি, তোর তাতে কি?’ আমি আর কিছু বলতে পারি না…এই ভালোবাসা আর স্নেহ দেখে গোপনে চোখ মুছি। আমাদের বোনদের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়রা আসলে মানুষ নয়, তাঁরা দেবতা। আমার বড়দিদি আসলে মাতৃরূপী দূর্গা। শুধু আমাদের ভাইবোন নয়, আমাদের সন্তানদেরকেও এখনো লালন-পালন করে চলেছে। আমি আমার নতুন সিনেমা ‘হাওয়া’র শুটিংয়ে এখন সেন্ট মার্টিন সাগরের মাঝখানে। এখানে অনেকদিন থাকতে হবে।

প্রায় প্রতিদিনই আমার কোনো না কোনো ভাই-বোন আমাকে ফোন করে বলবে, ‘এ ভাই তুই খাইছিস, এ ভাই তুই রুমে আইছিস, এ ভাই তুই ঘুমাইছিস, এ ভাই তোর শরীল ভালো আছে?’ আমি শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ করি আর ফিরে যাই সেই ছোটবেলায়। কারণে অকারণে কতবার জড়িয়ে ধরতাম তোমাদের। অনেক দুষ্টু ছিলাম ছোটবেলায়, এখন কিছুটা কমেছে। আমার ছোটদিদি খুকদির সাথে প্রায় প্রতিদিন রুটিন করে মারামারি করতাম— মাছের গাদা পেটি নিয়ে, ডিম ভাগাভাগি নিয়ে, বই নিয়ে। ও আমার এক ক্লাস ওপরে পড়ত, পিঠাপিঠি ভাই-বোন আমরা। আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগত আমি কোনোদিন স্কুলে নতুন বইয়ের মালিক হতে পারিনি। খুকদিকে বাবা যে পুরোনো বই কিনে দিতো, ও এক বছর পড়ার পর সেই ছেঁড়া লুচি বইগুলো আমাকে পড়তে হতো, এ কারণেই ওর সাথে বেশি মারামারি হতো। আর আমার রাঙাদি ছোটবেলা থেকেই মাটির মানুষ। মমতায় ভরা মুখ, আমার সাথে কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে। পড়ালেখায় খুব মেধাবী ছিল। আমার ছেলেকে এখন রাঙাদি প্রায়ই স্কুল থেকে নিয়ে আসে।

বৃন্দাবনদা আর খুশী প্রথম যেবার আমাদের গ্রামের বাড়িতে যায়, তখন বলেছিলেন, ‘তুমি ভাগ্যবান। এমন ভাই-বোন, বাবা-মা পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের।’ আসলেই তাই। আমার শত জনমের সৌভাগ্য আমি এমন বোনদের ভাই হয়ে জন্মেছি। আজ ভাইফোঁটা। অন্তত শত ব্যস্ততার মধ্যেও তোমাদের আশীর্বাদ আর আদরের স্পর্শ পেতে তোমাদের কাছে যাই, ছোটবেলার মতই এখনো তোমাদের জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। এবার তোমাদের ভাইফোঁটা নিতে পারলাম না। এ জন্যে এই লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসছে। বিশাল এই সমুদ্রের মাঝখান থেকে এটুকু খুব ভালো করেই বুঝি— আমার প্রত্যেকটি বোনের মন সমুদ্রের চেয়ে বড়, আকাশের চেয়ে উদার।

আবার যদি জন্ম নেই, তোমাদের মতো ভাই-বোনের ভাই হয়েই যেন জন্মাই। আমার কাছে তোমরা আমার শুদ্ধর মতই। অনেক আদরের। অনেক ভালোবাসার।’

Tags

Related Articles

Close