আন্তর্জাতিকবাংলাদেশ

যেই ভদ্রলোক সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি দেশে গ্রামের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছেন

Image may contain: 1 person, smiling, eyeglasses, selfie and closeup

আমিনুল ইসলাম: এ বছর জাপানের এক সায়েন্স সোসাইটি’র সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হয়েছেন একজন বাংলাদেশি। ৬১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোন বিদেশি’কে এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে (জাপানিজ সোসাইটি অব ইনহেরিটেড মেটাবোলিক ডিজঅর্ডার’স) যেই ভদ্রলোক সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি দেশে গ্রামের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছেন; এরপর ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে এইচএসসি, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএচডি ডিগ্রী নিয়েছেন।

বর্তমানে তিনি নিউরো-মেটাবলিক রোগের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ওই রোগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাপানে সিনিয়র গবেষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এই ভদ্রলোকের স্কুল-কলেজ আর মেডিকেল কলেজের পড়াশুনার ব্যাকগ্রাউণ্ড দেখে হঠাৎ ব্যাপারটা মনে হলো। এই ভদ্রলোক’কে কিন্তু ঢাকার নামকরা কোন স্কুলে পড়তে হয়নি; নামকরা কোন কলেজেও পড়তে হয়নি; এমনকি নামকরা কোন মেডিকেল কলেজেও পড়তে হয়নি।

অথচ আমাদের সংস্কৃতি’টা কেমন? আপনি ভিকারুন্নেসায় পড়াশুনা করেছেন ? তাহলে আপনার কাছে অন্য স্কুল কলেজে পড়াশুনা করা ছেলে-পেলেরা হচ্ছে ক্ষেত কিংবা তেমন কিছু জানে না! আপনি বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন? তাহলে দেশে অন্য সব ছোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা আপনার কাছে কোন ছাত্র’ই না! আপনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন? আপনার কাছে প্রাইভেটে পড়াশুনা করা ছাত্র-ছাত্রীরা কোন ছাত্র’ই না! আর আপনি যদি কোন ভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে থাকেন! তাহলে’ই সেরেছে! তাহলে অন্যরা সবাই বলবে- আপনি কি আদৌ পড়াশুনা করেছেন? ক্ষেত-টেতও বলে দিতে পারে! আপনি ঢাকা মেডিকেলে পড়েছেন? তো, আপনার কাছে অন্য মেডিকেলে পড়া ছাত্ররা কোন ডাক্তার’ই না!

আবার ভেবে বসবেন না; ছাত্র’রাই শুধু এমন ভাবে। আমাদের শিক্ষকরা’ই এই শিক্ষা দেয়। যেমন ধরুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গোনাতেই ধরতে চান না! তাদের ধারণা দেশের অন্য কোথাও মনে হয় পড়াশুনা হয় না! আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হবার জন্য আবেদন করেছিলাম। ভাইভা বোর্ডে আমাকে প্রথমে’ই জিজ্ঞেস করা হয়েছে -আপনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন’নি! এখানে আবেদন করেছেন কেন? আপনার উচিত সিলেটের শাহজালালে আবেদন করা!

কি অবাক কাণ্ড! আপনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাড়া আর কাউকে নেবেন না; সেটা সার্কুলারে লিখে দিলেই তো পারতেন! যেই ভদ্রলোক এই বছর জাপানের সেরা তরুণ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হয়েছেন; তাকে কি জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিজ্ঞস করেছে -আপনি তো ঢাকা মেডিকেলে’ই পড়েন’নি! কোথাকার কোন গ্রামের স্কুল থেকে পড়ে এসছেন! আপনাকে আমরা কিভাবে নেই! না, সেটা তারা করেনি! তারা এই মানুষটার মেধা যাচাই করেছে। নাম কিংবা ব্র্যান্ড না! বাংলাদেশিরা যে শুধু দেশে’ই এই প্র্যাকটিস করে; এমন কিন্তু না। বিদেশেও এরা এই প্র্যাকটিস জাড়ি রেখেছে।

আমার এই শহরে’ই যেই বাংলাদেশিরা বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে; এদের ভাব দেখে মনে হয়- মাটি’তে পা ফেলতেই কষ্ট হচ্ছে। আর যেই ছেলে-পেলে গুলো এখানে প্রাইভেটে পড়ছে; এদের এরা পারলে উঠতে-বসতে ছোট করে বেড়ায়! অথচ দেখে যাবে যেই ছেলে-পেলে গুলো এখানে পাবলিকে পড়ছে, এরা হয়ত দেশে ভালো কোথাও চান্স’ই পায়নি! আর এরাই আবার এখানে এসে বিশাল ভাব দেখিয়ে বেড়াচ্ছে! এটা ভাবার কোন কারন নেই, আমি এই সবের বাইরে! আমি তো আর আকাশ থেকে উড়ে আসিনি! আমিও বাংলাদেশ থেকে’ই এসছি। ওই সংস্কৃতি থেকে’ই উঠে এসছি।

গত কাল’ই কথা হচ্ছিলো ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে। ঝগড়া করছি; তো এর মাঝে বলে বসলাম -আমি দেশের নামকরা স্কুল-কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছি, দেশ-বিদেশের ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি; আমার পরিবার এই-সেই! তুমি তো আমার তুলনায় কিছু’ই না! ঝগড়া করছিলাম, এই জন্য বলেছি। অতি অবশ্য’ই মন থেকে বলিনি। কিন্তু বলেছি তো! তো, কেন বললাম? নিশ্চয় আমার মনের কোথাও সেই অহংকার কিংবা এই ব্যাপারটা আছে। যদিও আর দশ জন মানুষের সঙ্গে আমি কখন’ই এইসব বলবো না কিংবা এই ব্যাবহার করবো না। যেহেতু ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ; সুতরাং আমার মনের একদম গহীনে যেই ব্যাপারটা আছে, সেটা প্রকাশ পেয়েছে।

কারন আর কিছু’ই না। আমি তো ওই পরিবেশে থেকে’ই বড় হয়েছি। আমার স্কুল-কলেজ, শিক্ষকরা আমাকে শিখিয়েছে- তুমি ভালো স্কুলে পড়, ভালো কলেজে পড়, তুমি’ই সেরা! আমার মনেও নিশ্চয় সেটা গেঁথে গিয়েছে। আমার এই আচরণের ফল কি হয়েছে জানেন? আমার ভালোবাসার মানুষটা কাল আমাকে বলেছে – “আমি তো তোমাকে কোন দিন ভালো’ই বাসিনি!” সে এক বিরাট ইতিহাস! ওই দিকে আর না যাই! অথচ সে বছর প্রথম যখন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে পড়তে গেলাম। আমাদের প্রোগ্রাম হেড প্রথম দিন’ই বললেন -আমরা তোমাদের যা পড়াব, যেই তত্ত্ব পড়াব; এর সব যে ঠিক কিংবা মেনে নিতে হবে এমন না। যেখানেই তোমাদের সমস্যা মনে হবে, প্রশ্ন করবে। তাছাড়া আমাদেরও নানান ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। সব সময় প্রশ্ন করবে আর যদি দরকার হয় সমালোচনা করবে, অভিযোগও করবে। নইলে তো আর এগুনো যাবে না!

এই হচ্ছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটা প্রোগ্রাম হেডের কথা। আর বাংলাদেশে? সমালোচনা-প্রশ্ন! প্রথমে’ই এসে বলবে – তুমি সমালোচনা করার কে? তুমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছ? বুয়েটে পড়েছ? ঢাকা মেডিকেলে পড়েছ? ইত্যাদি ইত্যাদি! এই জন্য আমাদের দেশে জ্ঞানী জন্মায় না! জন্মালেও তারা জাপানে গিয়ে সেরা বিজ্ঞানী হয়; বাংলাদেশে থাকলে হয়ত বলত- সামান্য রাজশাহী মেডিকেল থেকে পাশ করা ডাক্তার! এ আর এমন কি!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Related Articles

Close