বাংলাদেশ
শৈলকুপায় কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ, সিও এনজিও কর্তৃক ষাট জন হতদরিদ্রের নামে মামলা
মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের শৈলকুপা গাড়াগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৬০ জন হতদরিদ্র এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নারীর নামে মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। আবার অনেকে পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছেন। ভুক্তভোগী হতদরিদ্ররা সরকারের নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীরা জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকার লক্ষনদিয়া, গোকুলনগর, কদমতলা, তামিনগর, ব্রাহিমপুর মোল্লাপাড়া, বাহাদুরপুর, দুধসরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের হতদরিদ্র বিভিন্ন পেশার মানুষ ক্ষুদ্র ঋন নেন সোসিও ইকোনমিক হেলথ এডুকেশন অর্গানাইজেশন (সিও) নামের একটি এনজিও থেকে।
এরপর সংসার চালিয়ে অনেকে ঋনের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হন। সমিতির কর্মী ও ম্যানেজারের নিকট সময় চেয়ে বিভিন্ন আকুতি করে আসছিলেন। কিন্তু এরই মাঝে গত ৮ জুন সিও এনজিও সংস্থার মনিটরিং অফিসার গোলজার হোসেন বাদী হয়ে ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনিরুজ্জামানের আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত থেকে তাদেরকে কোন নোটিশ প্রদান করা হয়নি। সেই কারণে মামলার ব্যাপারে হতদরিদ্র মানুষগুলো অবগত ছিলেন না। গত রবিবার শৈলকুপা থানা পুলিশ উমেদপুর, মিজাপুর ও দুধসর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২২ নারীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠান।
মঙ্গলবার আদালতে জামিন নিতে আসা শৈলকূপা উপজেলার ঋণ গ্রহীতা ব্রাহীমপুর গ্রামের আয়শা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ১০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। সুদের ২৭০০ টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে আমার নামে মামলা করা হয়েছে। অনেকের টাকা পরিশোধ হওয়ার পর তাদেরকেও হয়রানী করার জন্য মামলার আসামি করা হয়েছে। লক্ষনদিয়া গ্রামের রিজিয়া ও রেহেনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমরা আদালত থেকে কোন নোটিশ পায়নি। তারপরও আমাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কদমতলা গ্রামের রাশিদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আগে থেকেই সমিতির মাঠকর্মীরা ঋণ দেওয়ার নাম করে কিস্তির বই আমাদের কাছ নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর হঠাৎ করে জানতে পেরেছি মামলা করা হয়েছে।
এব্যাপারে শৈলকূপা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন মোল্লা জানান, এভাবে মামলা করা ঠিক হয়নি। তাদের সময় দেওয়া উচিত ছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এ ঘটনার নিন্দা জানাই। ঘটনাটি নিয়ে শৈলকূপা থানার ওসি আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা পাওয়ার পর ২২ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। ঘটনাটি নিয়ে সিও এনজিওর নির্বাহী পরিচালন সামছুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঋণ গ্রহীতাদের কাছে আমার কর্মীরা বারবার তাগিদ দিয়েও টাকা আদায় করতে পারেনি। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই মামলা করা হয়েছে।