বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
ঝিনাইদহের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শ্যামল দাসের শেষ অবলম্বন টুকু পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা-চোখের জলই এখন তার নিত্য সঙ্গী
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ১০ বছর বয়সে পক্স হয়ে দৃষ্টি হারান ঝিনাইদহের শ্যামল দাসের (৩৫) কষ্টই যেন তার জীবন সঙ্গী। ১৮ বছর বয়সে বিয়ের পর কষ্টের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন স্ত্রী মমতা রানিকে। কষ্টের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে ৫ বছর আগে মমতা রানি তাকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।
মমতা ঢাকার হল মার্ক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। ৪ বছর পর ২০১৩ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আলোচিত রানা প্লাজার গার্মেন্টে কাজ নেন তিনি। ওখানে ১মাস ১৩দিন কাজ করার পর ঘটে যায় রানা প্লাজা ট্রাজেডি। নিহত হন মমতা রানি। স্ত্রীর মৃত্যুতে আবারো অসহায় হয়ে পড়েন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শ্যামল দাস। উপায়ন্তর না পেয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামে। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য কিছু টাকা আর্থিক সাহায্য পেয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে সেই টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতেই শুরু করেন চাটাইয়ের ব্যবসা।
গত রবিবার বেঁচে থাকার সেই শেষ অবলম্বন টুকু পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। প্রায় ২৫ হাজার টাকার চাটাই পুড়ে যাওয়ায় পথে বসেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শ্যামল। বৃদ্ধ মা, ছোট ভাই ও ২ ছেলেসহ ৫সদস্যের সংসার নিয়ে দিশেহারা শ্যামল দাসের চোখের জলই এখন তার নিত্য সঙ্গী।
শ্যামল জানান, ১০ বছর বয়সে পক্স হয়ে দু’চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বাবা ফকির দাস জীবিত থাকা কালীন বাবার কাজে সাহায্য করতেন তিনি। ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন মমতা রানিকে। বিয়ের কয়েক বছর পর বাবা মারা যাওয়ায় সংসারের দায়িত্ব এসে বর্তায় তার ওপর।
শ্যামল আরো বলেন,‘ অন্যের কাছে হাত পাতা লজ্জার। তাই দু’চোখ হারিয়েও কখনও সবল দুই হাতকে ভিক্ষার হাতে পরিণত করিনি। এক সময় ছোট ভাইয়ের সহায়তায় বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে স্টেশানারি দ্রব্যাদি ফেরি করে বিক্রি করতাম। এরই মধ্যে দুই ছেলে সন্তানের বাবা হই। ছেলে মিঠুন দাস (১৪) ও সম্রাট দাস (১২) বড় হলে সংসারের খরচ বেড়ে যায়।
তখন স্ত্রীর পরামর্শে কাজের উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালের দিকে ঢাকায় চলে যাই। ওখানে ভালোই চলছিলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডি।’
একটু থেমে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, আবার অসহায় হয়ে পড়ি। বাধ্য হয়ে ফিরে আসি গ্রামে। ২ ছেলে ও ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে শুরু করি চাটাইয়ের ব্যবসা। ওই ব্যবসায়ই ছিলো আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।
২৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে বাড়ির সাথেই মুদি দোকানের পাশে রাখা চাটাইয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয়। তাতে প্রায় ২৫ হাজার টাকার চাটাই পুড়ে যায়। দুর্বৃত্তরা চাটাই পুড়িয়ে দেয়ায় শ্যামল দাস এখন দিশেহারা।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার এসআই লিটন কুমার বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের থানায় এসে এজাহার দিতে বলেছেন।