বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
ফুলবাড়ীতে আদিবাসীরা মুষ্ঠির চাল সংগ্রহ করে গড়ে তুলছে খাদ্য গোলা
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নে মুষ্ঠির চাল সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্য গোলা গড়ে তুলেছে আদিবাসীরা।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন এলাকার পিছিয়েপড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের হয়রানী ও অ-ন্যায্যতার স্বীকার হচ্ছে। অভাব মৌসুমে খাদ্য মজুদ না থাকায় আগাম শ্রম বিক্রি ও মহাজনী ঋণ গ্রহনের মাধ্যমে শোষিত হচ্ছে তারা। এ অবস্থা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজেরা সংগঠিত হয়ে মুষ্ঠির চাল জমার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এ এলাকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী।
২০১৪ সালের দিকে নর্দান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এনডিএফ সংস্থার সহযোগীতায় ২১ টি গ্রামের ৪২০ টি পরিবারের মধ্যে মুষ্ঠির চাউল উত্তোলনের প্রথা আরম্ভ হয়। সংস্থার একটি সূত্রে জানা গেছে এ পর্যন্ত তারা ৮১৫৩ কেজি চাউল জমা করেছে। অতিরিক্ত ৫৯৫১ কেজি চাউল বিক্রি করে ৩২০৪৯ টাকা ব্যাংকে জমা ও ৮০৭ কেজি চাউল এবং ২২১৭৯৮ টাকা ১০৬ জনের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করেছে। তাৎক্ষনিক বিপদ মোকাবেলায় ১৩৯৫ কেজি চাউল খাদ্য গোলায় সংরক্ষন করা আছে।
আদিবাসীরা জানান, মুষ্ঠির চাউল উত্তোলন করার পর তারা বাড়ীর একটি নির্দিষ্ঠ পাত্রে সংরক্ষন করে এবং মাস শেষে সহযোগী সংস্থা এনডিএফ এর সহযোগীতায় গড়ে ওঠা খাদ্য গোলা ঘর এ মাসিক মিটিং এর দিন তা জমা এবং লেনদেন করে।
শিবনগর ইউনিয়নের তিলাইপাড়া গ্রামের সনতি কিস্কু(৩৫) বলেন, মজুর হিসাবে কাজ করে যে পরিমান আয় হয় তা দিয়ে স্বামী সন্তানদের নিয়ে সংসার পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর ছিল ।যে সময় কাজ থাকেনা সে সময় আগাম শ্রম বিক্রি ও মহাজনের নিকট হতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার পরিচালনা করতে হতো। মুষ্ঠির চাউল জমা করার পর হতে সে সমষ্যা অনেকটাই দুর হয়েছে ।
গুপিন বাস্কে (৪২) বলেন, মুষ্ঠি চালের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে তা বিপদের দিনে কাজে লাগানোর ফলে এখন আর সব সময় অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না ,এতে করে কিছুটা হলেও আর্থিক শোষনের হাত হতে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। সুমী হাঁসদা (২৮) বলেন মুষ্ঠির চাউল জমার মাধ্যমে গড়ে উঠা খাদ্য গোলা হতে অল্প সুদে ঋন নিয়ে বর্গাজমিতে ফসল চাষের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী শ্রমিক হিসাবে কাজ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে ভুমিকা রাখছে।কামারডাঙ্গা গ্রামের বিনয় বেসড়া (৩৩) বলেন, আদিবাসী ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে মুষ্ঠির চাউল বিশেষ ভুমিকা রাখছে।
নর্দান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এনডিএফ এর ফুলবাড়ী ইউনিট ম্যানেজার মাসুদুর রহমান বলেন, আদিবাসী পরিবার গুলোতে আগাম শ্রমবিক্রি ও মহাজনী শোষন বন্ধ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তার সংস্থা মুষ্ঠির চাউল সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্য গোলা তৈরীর কাজ শুরু করে। শুরুতেই আদিবাসী পরিবারগুলো চাল দিতে রাজী না হলেও কিছু দিনের মধ্যে আদিবাসী নারীরা এগিয়ে এলে তাদের সাথে পুরুষরাও এগিয়ে এসেছে।এখন তারা আদিবাসী সমাজকে মুষ্ঠির চাউলের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী