বাংলাদেশ
কালীগঞ্জে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেন তিন’তলা বাড়ির মালিক
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল, গরীব, অসহায়, প্রতিবন্ধি ও অক্ষম ব্যক্তিদের বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার কথা থাকলেও সে নিয়মনীতি উপেক্ষিত হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বয়স্কভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এবার তিনতলা বাড়িসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার সম্পদের মালিককে দেয়া হয়েছে বয়স্ক ভাতা কার্ড।
কালীগঞ্জ কলেজ পাড়ার নিশি কান্ত সাহার রয়েছে ৬ শতক জমির উপর একটি তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি। কলেজ পাড়ার “মাঠ কালীবাড়ীর” পিছনে রয়েছে ১০ শতক জমি। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা।
এছাড়া উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী গ্রামে রয়েছে ১০ কাঠার উপর দুইটি পাকা ঘর। তার বড় ছেলে, ছোট ছেলে ও ছোট ছেলের স্ত্রী চাকুরী করেন। সব মিলিয়ে কোটি টাকার সহায় সম্পদের মালিক নিশি কান্ত সাহা বয়স্ক ভাতা কার্ড পাওয়ায় এলাকাবাসী হতবাক হয়েছেন। কালীগঞ্জ শহরের কলেজ পাড়ার একাধিক ব্যক্তি জানান, একই পাড়ার দরিদ্র ও অসহায় মৃত শ্রী চারন দাসের ছেলে ইষ্টম দাসের বয়স ৭০ বছর। ইষ্টম দাসের তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধি। অপর মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
মানসিক প্রতিবন্ধি মেয়েটা পরের বাসা-বাড়িতে কাজ করে। আর ইষ্টম দাস হাট বাজারে তরি-তরকারি কুড়িয়ে সংসার চালায়।একই পাড়ার আরেকটি অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান মৃত পূর্নচন্দ্র অধিকারির ছেলে নিমাই অধিকারী। তিনি পেশায় গাড়ী চালক ছিলেন। গত ৮/১০ বছর যাবত তিনি গাড়ী চালানো ছেড়ে দিয়েছেন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে। আর ছেলেটি স্বর্ণ কারিগরের কাজ করে কোন মতে সংসার চালাচ্ছে। অথচ তারা বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি।
নিশি কান্ত সাহার ব্যাপারে মালিয়াট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম জানান, তার বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। কারন তার চলাচল ভাল। গ্রামে আগে ২০ বিঘার মত জমি ছিল। সেই জমি বিক্রি করে কালীগঞ্জে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। গ্রামে এখনও ১০ কাঠার উপর দুটি পাকা ঘর রয়েছে। এমন ব্যাক্তিকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেওয়ায় বিরুপ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় একাধিক নারী-পুরুষ। তারা জানান, কলেজ পাড়ায় অনেক ব্যাক্তি আছেন, য়ারা ঠিক মতো দু’বেলা পেট পুরে খেতে পায় না। অথচ তাদের বিষয়টি বিবেচনা না করে অর্ধ কোটি টাকার মালিককে দেয়া হয়েছে বয়স্ক ভাতার কার্ড।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আইনাল হক জানান, বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে হলে কমপক্ষে পুরুষের ৬৫ ও মহিলার ৬২ বছর বয়স হতে হবে। যারা অস্বচ্ছল, অসহায় ও গরীব তারাই এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য। এছাড়া প্রতিবন্ধি ও অক্ষম ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে। তিন তলা বাড়ির মালিক নিশি কান্ত সাহা কিভাবে কার্ড পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। যদি ৩ তলা বাড়ির মালিক কার্ড পেয়ে থাকেন সেটা আমি বাতিল করে যে পাওয়ার যোগ্য তাকে দেবার চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে নিশি কান্ত সাহা বলেন, কার্ড করিলাম। তা ক্যানসেল করে দিচ্ছি। আমার তিন তলা বিলাস বহুল বাড়ি, অবস্থাও ভাল। কিন্তু আমার খুব অসুবিধা। ছেলেরা যা আয় করে তাদেরই চলে না। আর সব ছেলেরা তো আমাকে টাকা পয়সা দেয় না। সকলের যখন কু-দৃষ্টি লাগছে তা আর দরকার নেই। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাদেকুর রহমান জানান, একজনের পক্ষে সব কি দেখা সম্ভব হয়? তবে মেয়র ও কাউন্সিলর সাথে কথা বলে তালিকাগুলি নিয়ে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।