জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

প্রশাসনিক পরিচয়ে চলন্ত বাসে ডাকাতি

bus

নিউজরুমবিডি ডটকম: গত ২১ আগস্ট দিবাগত রাত ১১.৪০ মিনিট (প্রায়) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-দিনাজপুর হাইওয়ে রোডে   দিনাজপুর থেকে ঢাকা যাবার পথে হানিফের এসি RM-2 চলন্ত বাসে প্রায় ১ ঘণ্টা সমায় ধরে  ডাকাতি চলে ঘোড়াঘাট থানা শেষ প্রান্তে থেকে গোবিন্দগঞ্জ থানার সামন দিয়ে একই উপজেলার  ফাশিতলা পর্যন্ত।

ডাকাতির সমায় ২৭ সিটের এই  গাড়ীতে ২৩ জন যাত্রীর মরধে ৭ জন ডাকাত ছিল। যারা হানিফ পরিবহনের দিনাজপুরের প্রধান কাউন্টার  (বেলাল, দিনাজপুর)  থেকে ২ সিট (সুমন খান নামে C3-C4)। আমবাড়ী কাউন্টার থেকে ৩ সিট (আবদুল্লাহ নামে A3-A4,B3) এবং বিরামপুর কাউন্টার থেকে ২ সিট  (জাহিদুল নামে E3-E4)।

রাত ১১.৪০ মিনিট (প্রায়) ঘোড়াঘাট থানা শেষ প্রান্তে ডাকাতরা ড্রাইভারকে বলে গাড়ী সোল কর গাড়িতে অবৈধ জিনিষ আছে চেক করতে হবে। ডাকাতদের দেখতেও প্রশাসনের কর্মকর্তার মত লাগছিল এবং তাদের ২ জন শুধু মাত্র মুখে মাস্ক ব্যবহার করেছিল অন্যদের মুখ ওপেন ছিল। এছাড়াও একজন সবসমায় হেডফোনে কথা বলছিল যা দেখে মনে হয়েছে যে সে সামনে ও পিছনের খোঁজ নিচ্ছেন।

ড্রাইভার গাড়ী সোল করতেই তাকে মেরে পিছনের সিটে নিয়ে যায় এবং চলন্ত গাড়ীতেই  তারা তাদের ড্রাইভারকে বসাই। অতঃপর তাদের ড্রাইভার ধিরে ধীরে ঘোড়াঘাট শেষ প্রান্তে থেকে  গোবিন্দগঞ্জ  থানার সামন দিয়ে বন্যার পানির মরধেই  ঢাকা -দিনাজপুর হাইওয়ে রোডে গাড়ী চালাই এবং সে প্রতিটি স্থানে ঠিকঠাক মত গাড়ীর টোল ও পরিশোধ করে  ফাশিতলা পর্যন্ত গাড়ী চালানর পর অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে হানিফের ড্রাইভারকে গাড়ি দিয়ে দূরত পালিয়ে যায়।

ঘোড়াঘাট থানা শেষ প্রান্তে ডাকাতরা ড্রাইভার কে মারধোর করে এবং একপর্যায়ে ড্রাইভারকে ধারালো ছুরি দিয়ে আহত করে সবার মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারপর ডাকাতরা ঘোড়াঘাট থানা শেষ প্রান্ত থেকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফাসিতলা পর্যন্ত গাড়িটি তাদের কন্ট্রোলে রাখে।

প্রথমেই তারা সকল যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেন অতঃপর এক এক করে সকল যাত্রী কে সার্চ করে এক সিট থেকে অন্য সিটে পরিবর্তন করে তাদের টাকা পয়সা সহ গুরুত্বপুন জিনিষ গুলি নেন সঙ্গে মহিলা যাত্রীদের থেকে তাদের সকল স্বর্ণ অলঙ্কার নিয়ে নেন। সকল যাত্রীদের থেকে ডাকাতরা শুধুমাত্র মোবাইল, টাকাপয়সা  এবং স্বর্ণ অলঙ্কার কেড়ে নিয়েছে, কোন যাত্রীর শারীরিক কোন ক্ষয়-ক্ষতি করে নি।

যাত্রীরা জানান বাসের সকলে আমরা ডাকাত ৭ জন কে প্রশাসনের লোক হিসাবে তাদের ব্যাবহারে বুঝতে পারি। তাদের আচার আচারন, চলাফেরা, কথা বার্তা সহ সব কিছু প্রশাসনের লোকের মত। এছাড়া প্রথম তারা ড্রাইভারকে বলে গাড়ী সোল কর গাড়িতে অবৈধ জিনিষ আছে চেক করতে হবে। ড্রাইভার সোল করতেই তাকে মেরে তারা তাদের ড্রাইভারকে বসাই এবং প্রায় ১ ঘণ্টার কাছাকাছি সমায় এক এক করে সকল যাত্রিকে পুলিশের চেকিং মত চেকিং করে সব নিয়ে নেয়।

তারা আরও বলেন,  দুঃখের বিষয় যে ঘোড়াঘাট থানার শেষ প্রান্ত থেকে গোবিন্দগঞ্জ থানার সামন দিয়ে ডাকাতরা গাড়িটি নিয়ে যায়। সর্বশেষ ২ জন ডাকাত উঠে বিরামপুরে, যার পর থেকে রোডে কোন পুলিশ বা চেকপোস্ট আমাদের চোখে পরেনি। মোকামতোলা হাইওয়ে থানাতে গেলে পুলিশ আমাদের এরিয়া নয় বলে আমাদের কে আরও হয়রানি করে অতঃপর বলে পিছনে ব্যাক করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় ডাইরি করে আসেন।
গাড়ীটি কোথাও জ্যামে পরতে হয়নি, কারন আমরা বাস থেকে দেখতে পাই আমাদের গাড়ী যাবার আগেই রোডে আমাদের লাইন ফাকা থাকে। এছাড়া ও থানার সামন দিয়ে ডাকাত গাড়ী নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে পারে না।    প্রশাসনের প্রতি তাদের আস্তা ছিল বলেই কেবল তারা নিরসন্ধে অন্য রোডে গাড়ী না নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার সামন দিয়ে গাড়ী চালিয়ে নিয়ে যায়।

যাত্রী (সিট-D1) বনপার সাধারন সম্পাদক রনি  জানান, আমার কাছ থেকে ৪৫ হাজারের বেশী টাকা ও মোবাইল নিয়েছে। পরে আমি  আকরাম ভাইয়ের ফোনে বগুড়া জেলা বনপার আহ্বায়ক এবং  জাতীয়  অনলাইন প্রেস ক্লাব, বগুড়া জেলা শাখার  সভাপতি  মাকছুদ আলম কে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মোকামতলা – বগুড়া পুলিশের সিনিয়ার কর্মকর্তাদের জানান বলে আমাক ফোনে জানিয়েছেন।
এবং আমি হানিফের সিনিয়ার জেনারেল ম্যানেজার  আবদুস সামাদ মণ্ডল কে জানালে তিনি সকল খবর নেন, এবং যাত্রীরা রাতে কি ভাবে খাবে এমন প্রশ্নে  ড্রাইভারকে বলেন সকল যাত্রীকে রাতের খাবার অভি হোটেলে তার নাম বলে খাওয়াতে। ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের কাছ থেকে যেন টাকা না নেওয়া হয়।

যাত্রী (সিট-F3) বেলাল মণ্ডল প্রধান শিক্ষক, ওসমানপুর হাই স্কুল। তিনি জানান আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ও আমার সহকর্মী সাকিল সহ আমাদের ২ জনের মোবাইল নিয়ে আমার মাথা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।  তারা চলে যাবার পর আমার বাড়ী ঘোড়াঘাট সদরে হওয়াতে  আমি ঘোড়াঘাট থানায় ফোন করলে  কোন হেল্প বা সহযোগিতার মনভাব পাইনি।  ওসির আচারন ভাল লাগেনি তাই ফোনে আমাদের মাঝে উচ্চবাচ্যও হয়।

যাত্রী আকরাম (সিট-A1) বলেন আমার মোবাইল খুব পুরাতন ও  কমদামী হওয়ায় আমার মোবাইল নেননি শুধু মাত্র ৯ হাজার টাকা নিয়েছেন। ডাকাত গুলি নামার পর পর আমি আমার পরিচিত পুলিশ বিরল থানা ওসি কে ফোনে জানালে তিনি মোকামতলা হাইওয়ে তে জানিয়ে আমাদের সাহায্য করেন।

যাত্রী (সিট-B1) ডাঃ আমিনুল ইসলাম, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, জানান আমার ২৫ হাজার টাকা সহ ২টি ফোন নিয়েছে। আমরা আতংকিত ছিলাম।

যাত্রী (সিট-C1) (ইন্টার্ন) ডাঃ অ্যানি, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ  জানান, আমার ফোন গুল সহ আমার টাকা ব্যাগ ও স্বর্ণ অলঙ্কার কেড়ে নিয়েছে। আমি মেয়ে হওয়ায় খুবই আতংকে ছিলাম তবে আমাদের সঙ্গে কোন খারাফ ব্যবহার করেনি।

যাত্রী (সিট-D3) রাছেল ছাত্র নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, অর্থনীতি বিভাগ। জানান, আমার সেমিস্টার ফী সহ মাসের খরচের ৭৬ হাজার টাকা  ও একটি আই ফোন নিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা আমি খুব চিন্তিত এখন আমি কিভাবে আমার  সেমিস্টার ফী দেব এমনিতেই আমাদের এলাকায় বন্যায় আমরা সবাই খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।

যাত্রী (সিট-F1) শারমিন দিনাজপুর ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান আমার ফোন,  স্বর্ণ অলঙ্কার কেড়ে নিয়েছে। আমিও  মেয়ে হওয়ায় খুবই আতংকে ছিলাম তবে আমাদের সঙ্গে কোন খারাফ ব্যবহার করেনি।

যাত্রী (সিট-D4) রেজয়ান সরকার সদর উপজেলা ভুমি অফিসার জানান, আমি সরকারি কাজে ঢাকা জাসছি, আমার ফোন ও সঙ্গে থাকা ১৫ হাজার টাকা তারা নিয়েছে।

যাত্রী (সিট-B4) নিজাম উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রাথমিক  (বান্দরবন) জানান, আমার আত্মীয়র বাড়ি দিনাজপুরে আসছিলাম, আমার  কাছের সব টাকা ও ফোন নিয়েছে তারা। তাদের দেখতে প্রশাসনের লকের মত আমার কাছে মনে হয়েছে। আমার ফোন হাইওয়েতে মোকামতলা থানার সামনে খোলা ছিল দেখে আমি পুলিশ কে বার বার বলছিলাম দেখেন আমার ফোন ওরা এখন ও বন্ধ করে নি কিন্তু পুলিশ আমার কথার কোন গুরুত দেয় না।

এছাড়াও যাত্রী (সিট-E1) ব্যাবসায়ী হাফিজুর রাহমান, (সিট-F4) ওসমানপুর হাই স্কুল অফিস সহকারী সাকিল। (সিট-H3) বারডেম হাসপাতালের  ডাঃ কল্লোল, (সিট-G3) ঢাকা বিশ্বঃ ছাত্র ফয়েজ, (সিট-H4) প্রবাসী  নুরল আশরাফ জাফর, (সিট-G1) ব্যাবসায়ী বাবু, (সিট-G3) রাজশাহী মেডিকেলের ছাত্র সাদিক।

যাত্রীদের সকলেই প্রশাসন ও হানিফ পরিবহনের কাছে অনুরোধ করেন যে তারা যেন এই বিষয় টিকে সামনে ঈদ এর কথা মাথায় রেখে যথা যত গুরত দিয়ে দেখেন। কারণ প্রশাসনের কোন হাইওয়ে রাউন্ড ছিল না বলেই হয়ত আমাদের চোখে পরে নি। আর হানিফ পরিবহনে নেই কাউন্টার গুলতে সিসিটিভি, নেই ফাইনাল যাত্রী ভিডিও চেক, বলতে গেলে ভি এই পি যাত্রীর জন্য নেই কোন নিরাপরতা।

দিনাজপুরের বেলালের কাউন্টার তাদের জেলার প্রধান কাউন্টার যে খান থেকে প্রতিদিন ১৫টি বাসের অধিক ঢাকার উদ্দেশ্য ছাড়া  হয়, সেই খানেও  নেই কোন নিরাপরতা বা সিসিটিভি।

বিরামপুর ও ফুলবাড়ি কাউন্টার খুবই গুরত্তপুন্ন কারণ এই খানে পরিচিত যাত্রীর চেয়ে অপরিচিত যাত্রী বেশী কারণ স্বপ্নপুরীর সকল পর্যটক এই দুই কাউন্টার থেকে টিকিট নেন তাই এইখানেও সিসিটিভি লাগানো দরকার।

একজন সুপারভাইজার বলেন আমবাড়ী কাউন্টার মাঝে মাঝে বিভিন্ন ঝামেলার কারিগর। এর আগে  আমবাড়ী কাউন্টারে ৩ জন এসি যাত্রী দেখে ডাকাতদের সামনেই ড্রাইভার ও সুপারভাইজার কে বলে “কি বে এই তো যাত্রীই দিতে পারে না আজ এবার ৩টা এসির যাত্রী দিল বে”।

এছাড়াও সকল পরিবহনের জন্য  (দিনাজপুর মেডিকেল, ফুল বাড়ী/বিরামপুর এবং ঘোড়াঘাটে) সর্বনিম্ন ৩ জায়গাতে পরিবহন গুলোর পক্ষ থেকে ভিডিও চেক বাধ্যতামূলক করা সহ টিকিট কাউন্টার কমানোর এবং দিনাজপুরের জনগনের নিরাপরতার কথা চিন্তা করে সকল বাস কাউন্টারে বাধ্যতা মূলক সিসিটিভি সহ টিকিট কাটার সমায় বাড়তি নিরাপরতার জন্য প্রয়োজনীয় বাবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন ভুক্তভুগী যাত্রীরা।

Related Articles

Close