বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
মির্জাপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীর আশপাশের এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য’র পিএস ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শামীম আল মামুনের নেতৃত্বে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এর ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। আর বালু উত্তোলনে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা সরাসরি জড়িত থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সিন্ডিকেট করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতারা। আর এই বালু উত্তোলন এলাকাবাসী যাতে কোন পদক্ষেপ না নিতে পারে এজন্য শামীম আল মামুনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশাল এক ক্যাডার বাহিনী।
আর ওই ক্যাডার বাহিনী পুরো মির্জাপুর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। শামীম আল মামুন অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যবসা করে বিলাশবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক হয়েছেন। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে বংশাই নদীতে তীব্র ভাঙ্গনের ফলে হুমকির মুখে পরেছে নব নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. একাববর হোসেন ৩শ মিটার গার্ডার ব্রিজ ও থলপাড়া এলাকার এলজিইডির নির্মিত ব্রীজের নীচ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ব্রীজটি যেকোন সময় দেবে যেতে পারে।
সোমবার মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একটি প্রভাবশালী মহল বংশাই নদীতে ড্রেজারমেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। এতে এক দিকে তীব্র ভাবে ভাঙ্গছে নদীর তীর, অপর দিকে হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটাসহ বহু ঘরবাড়ি।
এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অভিযোগ করেছেন, বংশাই নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে এমপির পিএস শামীম আল মামুন এবং এমপির পরিবারের এক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতারা সিন্ডিকেট করে জোর পূর্বক অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে। নদীতে বালি উত্তোলনের ফলে এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে মহেড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও বহুঘরবাড়ি বিলিন হতে বসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান খান বাবুল, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের একান্ত সহকারি শামীম আল মামুন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আবু বক্কর সিকদার সহ ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট নদীতে বালু উত্তোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
এই চক্রটি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার করে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করার জন্য ঐ প্রভাবশালী মহলকে অনুরোধ করলে উল্টো তাদের নামে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ভয়-ভিতি দেখানো হয় বলে নিরীহ লোকজন অভিযোগ করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের নিকট ড্রেজার দিয়ে নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধের জন্য অনুরোধ করলেও আজ পর্যন্ত বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে থলপাড়া এলাকায় এলজিইডি’র ব্রীজ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চিঠি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন বলেন, নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে যারা বালু উত্তোলন করছে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো: নুরুল আমিন বলেন, অবৈধ বালু উত্তোনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত এমপির পিএস শামীম আল মামুন অবৈধ বালু উত্তোলনে তার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ একাব্বর হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বংশাই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।