জাতীয়পরিবেশবাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
নাগরপুরে ধলেশ্বরী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন: বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্দিরসহ অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্বি পাওয়ার সাথে সাথে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া বাজারের কমপক্ষে ৩৭টি দোকান ঘর, ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪টি মন্দির ও শশ্মানসহ অর্ধ শতাধিক বসত বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু আবাদী জমি ও গাছপালা ইতো মধ্যে ধলেশ^রী নদীর পেটে চলে গেছে।
ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়, বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পোষ্ট অফিসসহ অন্তত দুই শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ী। ক্ষতি গ্রস্থ এসব পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে। এছাড়া ভাঙ্গন কবলিত এলাকার এসব লোকজন ভাঙ্গন আতংকে এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় বাড়ী ঘড়, আসবাব পত্র ও গবাদিপশু সহ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। প্রতি বছর ধলেশ^রী নদীর ভাঙ্গনে মোকনা ইউনিয়নের কেদারপুর আগদিঘুলিয়ার বিস্তৃর্ন এলাকা ভাঙ্গনের কবলে পড়লেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোবিন্দপুর, ঘুনি পংবরটিয়া, মোকনা, কেদারপুর, আগদিঘুলিয়া গ্রামে ধলেশ^রী নদীর ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারন করেছে। লোকজনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার শতশত একর আবাদী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা কেদারপুর আগদিঘুলিয়া গ্রামের ভিটেমাটি হারা মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। তরিঘড়ি করে তারা গাছ বাঁশ কেটে নিচ্ছে।
মোকনা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান খান জানান, ধলেশ^রী নদীর ভাঙ্গনে নতুন করে ৫টি গ্রামে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতো মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আগদিঘুলিয়া বাজার, সাধন একাডেমি, ৪টি কালীমন্দির, একটি শশ্মান এবং শতশত একর আবাদী জমি। হুমকির মুখে পড়েছে বোরহান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, কেদারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি পোষ্ট অফিসসহ প্রায় দুইশতাধিক পরিবারের বসতবাড়ী। দ্রæত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে সরকারী বেসরকারী স্থাপনাসহ প্রায় দুই শতাধিক বসত বাড়ী। সাধন একাডেমির পরিচালক অরুন চৌধুরী জানান, ৫৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ন নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে তার প্রায় দের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
অপর ক্ষতিগ্রস্থ আনন্দ সাহা জানান, তার ৪টি দোকান ঘরসহ বসতবাড়ী হারিয়ে তিনি নিস্ব হয়ে পড়েছেন। আগদিঘুলিয়া গ্রামের কানাই মন্ডল, সুবল মন্ডল, রতন মন্ডল, অন্তর মন্ডল, বংশি সাহা, নারায়ন সাহা ও হুটু শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘরবাড়ী, আবাদী জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এখন পর্যন্ত সরকারি এমনকি বেসরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা আমরা পায়নি।
এদিকে ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম এমপি শুক্রবার মোকনা ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে তিনি ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পূলক কান্তি চক্রবর্তীর সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চলতি মাসের সমন্বয় সভায় আলোচনা করে এব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।