বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
দেলদুয়ারে সিএনজি চালকদের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ: আঞ্চলিক সড়কগুলো যানচলাচলের অনুপযোগী
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে, নিউজরুমবিডি.কম: সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় দেলদুয়ারের সবকটি আঞ্চলিক সড়কের সিএনজি চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারন মানুষ। সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে সিএনজি ও অটোরিক্সা চালকরা অধিক ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছেন। দেলদুয়ারের আঞ্চলিক সড়ক গুলোতে বাস চলাচল বন্ধ ও সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া নিয়ে চালকরা সম্পূর্ণই নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। এর ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। তবে সাধারন মানুষের ভোগান্তি নিরসনে উপজেলা প্রশাসন থাকলেও কার্যত তাদের কোন ভুমিকা দেখা যাচ্ছেনা।
অধিক ভাড়া আদায়ে যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, সিএনজি চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে শ্রমিক নেতাদের কাছে অভিযোগ করলে হেনস্থা হতে হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
অপরদিকে উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক গুলোর বেহাল অবস্থা। খানাখন্দে পরিণত হয়েছে সবকটি রাস্তা। যানচলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন গুলো। বছরে দু’একবার নিম্নমানের ইট বালু খোয়া দিয়ে নামমাত্র রাস্তা সংস্কার করা হলেও স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি সড়কের। ঝুকি নিয়ে এ সড়কে চলাচলের কারণে কিছু বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। সড়কের এ অবস্থার কারণে যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রী, তেমনিই পোহাচ্ছেন যানবাহনের চালকরা বলে জানান পরিবহন চালকরা।
সুত্র মতে, দেলদুয়ারে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের অধীনে এবং প্রায় ৩৭ কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে। এদের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তা হচ্ছে দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল ১২ কিলোমিটার, টাঙ্গাইল-এলাসিন ১৪ কিলোমিটার, ও পাকুল¬া-এলাসিন ১১ কিলোমিটার। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের অধীনে সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তা হচ্ছে দেলদুয়ার-লাউহাটী ১১.৮ কিলোমিটার, লাউহাটী পাকুল্যা ১২ কিলোমিটার, দেলদুয়ার-ছিলিমপুর ৭ কিলোমিটার ও দেলদুয়ার – নাল্ল¬াপাড়া সড়কটি প্রায় ৫ কি.মি। সবগুলো রাস্তাই এখন দূর্ভোগের দৃষ্টান্ত হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ রাস্তাগুলোর সংস্কারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন ভুমিকা লক্ষ করা যাচ্ছেনা।
দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন, ব্যাংক, এনজিও ও সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মকর্তা টাঙ্গাইল শহরে অবস্থান করেন। তারা সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় দেলদুয়ারে যাতায়াত করেন। ফলে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি তাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গত ৫ অক্টোবর উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলাসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশ বক্তাই সরকার নির্ধারিত ভাড়া বাস্তবায়নের জন্য দাবি জানান। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে শ্রমিক নেতা ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে দ্রুতব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে উপজেলা প্রশাসনের কোন বৈঠক হয়েছে কিনা সঠিক করে কেউ তা বলতে পারছেনা।
জানা যায়, দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল,দেলদুয়ার-পাকুল্লা,দেলদুয়ার-লাউহাটী,দেলদুয়ার-নাল্লাপাড়া,দেলদুয়ার-ছিলিমপুর,টাঙ্গাইল-এলাসিন,এলাসিন-লাউহাটী,লাউহাটী-পাকুল্লা ও পাথরাইল-করটিয়াসহ সব কয়টি আঞ্চলিক সড়কে সিএনজি ও অটোরিক্সা চলাচল করে। চালাকরা বিভিন্ন অযুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছেন। কখনো রাস্তা ভাঙ্গা,কখনো গ্যাসের দামবৃদ্ধি, কখনো যন্ত্রপাতি ও অফিস খরচ বৃদ্ধির কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চালক বলেন, শ্রমিক নেতারাই অফিস থেকে ভাড়া ঠিক করে দেন। ভাড়া বৃদ্ধি হলে তাদের চাঁদার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। আগে দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল সড়কে টাঙ্গাইলে ১০ টাকা চাঁদা আদায় করলেও এখন ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাঁদার পরিমাণও দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল ১৪কিঃ মিঃ সড়কে ভাঙ্গা রাস্তা ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অযুহাতে ১শ ২৫ থেকে বাড়িয়ে ১শ ৫০ টাকা আদায় করা হলেও বর্তমানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে আদায় করা হচ্ছে ১শ ৭৫ টাকা। দেলদুয়ার-পাকুল্লা ৬কিলোমিটার রাস্তায় ১শ টাকা ভাড়ার বিপরিতে ১শ ২৫ টাকা, দেলদুয়ার-লাউহাটী সাড়ে ১১কিলোমিটার সড়কে ১শ ২৫ টাকা থেকে বর্তমানে আদায় করা হচ্ছে ১শ ৫০ টাকা। নলশোঁধা-করটিয়া সড়কের দূরত্ব মাত্র ২ কিঃমিঃ সেখানেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। এ অবস্থায় সরকারি বেসরকারি ও সাধারন মানুষদের মাস শেষে মোট আয় থেকে গাড়ী ভাড়া বাবদ মোটা অংকের টাকা গুনতে হচ্ছে। যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের ব্যয় সংকুলান কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। এর আগে ভাড়া কমানোর দাবিতে স্থানিয় জনতা পাথরাইল-টাঙ্গাইল সড়ক প্রায় দুই ঘন্টা অবরোধ করে রাখে।
দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাধারন সম্পাদক এস.এম ফেরদৌস আহামেদ জানান, মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল এবং ইউ.এনও মহাদয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা সম্মিলিত ভাবেই বিষয়টি দেখব।
অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে কোন অভিযোগ বা কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে ইউ.এনও মোঃ সাইদুজ্জমান জানান, আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে নাই। আপনারা অভিযোগ দেন আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা তো আর ঐ গাড়ীতে চলিনা। আমি পরীক্ষার হলে আছি পরে কথা বলবো।
উপজেলার বিশিষ্ট জনেরা বলছেন, অভিযেগের আশায় না থেকে সাধারন মানুষের দূর্ভোগের কথা ভেবে উপজেলা প্রশাসন আন্তরিকতার সাথে উদ্দ্যোগ নিলে অতিরিক্ত ভাড়ার কবল থেকে রক্ষা পাবে সাধারন মানুষ।