জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ ২০টি পদ শূন্য। অ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে, আল্ট্রা ও ইসিজি মেশিন বিকল: স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
সিরাজুস সালেকীন সিফাত, সখীপুর (টাঙ্গাইল) থেকে : টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে চিকিৎসকসহ ২০টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও এক্স-রে, আলট্রাসোনোগ্রাফি, ডায়াথার্মী, সাকার ও ইসিজি মেশিন নষ্ট। হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও দুইমাস ধরে বিকল। এ অবস্থায় হাসপাতালেরর ভেতরে স্বাস্থ্যসেবা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অবেদনবিদ), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ও সহকারী সার্জন (হোমিও) ও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকের চারটি পদ, জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্সের পাঁচটি পদ, প্রধান সহকারীর একটি পদ, হিসাবরক্ষণ ও ক্যাশিয়ারের দুটি পদ, জুনিয়র ম্যাকানিক একজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (কার্ডিওগ্রাফার) একটি পদ, ওয়ার্ড বয়ের একটি পদ ও এমএলএসএসের পাঁচটি সহ শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরেই ২০টি পদ শূন্য রয়েছে।
এদিকে গত এক মাস ধরে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটির চারটি চাকাই অকেজো হয়ে পড়ায় জরুরি রোগীদের হাসপাতালে আনা নেওয়ায় বিষয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্বজনেরা। প্রায় দেড় বছর ধরে এক্স-রে মেশিন নষ্ট হওয়ায় রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে ক্লিনিকের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আলট্রাসোনোগ্রাফি, ডায়াথার্মী, সাকার ও ইসিজি মেশিন দুই বছরের অধিক সময় ধরে নষ্ট থাকায় গরিব রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে।
গত শনিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ফজলুল হক (৪৫) নামের এক কৃষক হাত ভেঙে হাসপাতালে এসেছেন। তাঁকে চিকিৎসক দুটি এক্স- রে দিয়েছেন। মেশিন নষ্ট থাকায় বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে গিয়ে এক্স-রে করাতে তাঁর ৭০০টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ( রেডিওগ্রাফার) এস এম আমিরুল ইসলাম জানান, এক বছর তিনমাস ধরে এক্স-রে মেশিন নষ্ট। মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায় কমপক্ষে ১০টি চিঠি দেওয়া হয়েছে আর ১০০বার ফোন করা হয়েছে, তাতেও কোন কাজ হয়নি। তিনি বলেন, ১৫ মাস ধরে আমি কাজ ছাড়াই বেতন নিচ্ছি।
গাইনি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, তাজমিরা সুলতানা নামের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) তিনি কর্র্তৃপক্ষকে না জানিয়েই গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালের অনুপস্থিত রয়েছেন। অস্ত্রোপচার কক্ষের জ্যেষ্ঠ সেবিকা নুরজাহান আকাতার এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই আপার অনুপস্থিতিতে ৫০টি সিজার অপারেশন হয়েছে। আপার দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাফিউল করিম খান নিজেই। রাফিউল করিম জানান, অনুপস্থিত থাকায় গাইনি চিকিৎসক তাজমিরাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাজরিমা সুলতানার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
ওই বিভাগের এক রোগীর নাম হাসিনা। বুধবার তাঁর সিজার অপারেশন হয়েছে। হাসিনা জানায়, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট থাকায় গত তিন মাসে দুই হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
একই ধরনের অভিযোগ করেন মিনা আক্তার নামের এক রোগী। তিনি জানান, আমার মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার প্রকল্পের কার্ড রয়েছে। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে প্রসব পরবর্তী তিন মাস বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় মেসিনগুলো নষ্ট থাকায় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্লিনিক থেকেই করতে হয়েছে।
সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাব সহকারী মিজানুর রহমান জানান,‘ হিসাব বিভাগ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর কয়েকটি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের দাপ্তরিক কাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
অ্যাম্বুলেন্স চালক দেবাশীষ অধিকারী বলেন,‘ চারটি চাকাই অকেজো হওয়ায় দুইমাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স চলছে না। এখন সারতে ৫০ হাজার টাকা লাগবে বলে এটা আর শিগগিরই সচল হওয়ার সম্ভবনাও নেই। প্রতিদিনই রোগীর স্বজনেরা আমাকে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করে। বসে বসে বেতন না নিয়ে ভাবছি অন্যত্র চলে যাব।’
ভাÐার রক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, আট বছর ধরে হাসপাতালের জেনারেটরটি আমার ভাÐরেই পড়ে আছে।
মো. হায়দার আলী নামের এক রোগী বলেন, ‘চোখের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম কিন্তু ডাক্তার না থাকায় সেবা ছাড়াই ফেরত যেতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ওই পদটি পাঁচ বছর ধরে শূন্য আছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাফিউল করিম খান চিকিৎসকসহ জনবল সংকট ও নানা প্রয়োজনীয় যন্ত্র বিকল হওয়ায় সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিমাসেই প্রতিবেদন আকারে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে।’