বাংলাদেশ

ধর্ষিতা গেলেন বিচার চাইতে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলেন দেহব্যবসায়ী

 rep
নিজস্ব প্রতিবেদক;নিউজরুমবিডিঃ ধর্ষণের বিচারপ্রার্থী এক কলেজছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী বানিয়েছেন ধুবড়িয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। পরিষদের প্যাডে ছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার নিরীহ কৃষক বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে ৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বার সমিতির কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রী লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। বন্ধ হয়ে গেছে তার কলেজে যাওয়া।জানা যায়, ওই কৃষকের মেয়েকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে জুয়েল রানা। বিয়ের প্রস্তাবও দেয় সে; কিন্তু ছাত্রীর বাবা প্রস্তাবে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয় জুয়েল রানা। গত বছরের ১২ জুলাই সে বন্ধুদের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি ব্রিজের কাছ থেকে ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে।

জুয়েল রানা ওই ছাত্রীকে তার আত্মীয়ের বাড়িতে তিন দিন আটকও রাখে। কিন্তু ছাত্রী কৌশলে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে তার বাবা-মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে ছাত্রীর বাবা ধুবড়িয়া গ্রামের মাতুব্বরদের বিষয়টি জানিয়ে এর বিচার দাবি করেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য তালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করে আসছিলেন মাতুব্বররা।

এ কারণে ধর্ষিতার বাবা গত বছরের ১ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হল- সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে মো. জুয়েল রানা (২২), ধুবড়িয়া গ্রামের হায়েদ আলীর ছেলে শিপন (২৬), রিপন (২৩), উফাজ (৪২) ও একই গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে রিয়াজ মিয়া (২১)।

আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। সিআইডি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর আসামিরা আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

আসামিরা ধুবড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার পথ বের করে। চেয়ারম্যান ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে ভিকটিমকে দেহ ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে আসামিদের পক্ষে প্রতিবেদন তৈরি করে ডিসি, এসপি ও বার সমিতির কাছে জমা দেন।

মামলায় সিআইডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘কলেজছাত্রীর বাবা একজন হতদরিদ্র কৃষক। তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান নিয়ে জীবনযাপন করছেন। ওই কৃষকের মেয়ে এসএসসি পাস করে একটি কলেজে লেখাপড়া করে আসছে। স্কুলে পড়ার সময় ছাত্রীর সঙ্গে জুয়েল রানার পরিচয় হয়। জুয়েল ছাত্রীকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলে সে প্রত্যাখ্যান করে। এ কারণে জুয়েল এ ঘটনা ঘটায়।’

কলেজছাত্রীর বাবা জানান, চেয়ারম্যান আমার পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে গ্রাম থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। জানতে চাইলে ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘এলাকার লোকজন বলেছে তাই প্রতিবেদন দিয়েছি।’

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এস আকবর খান বলেন, ‘আদালত কর্তৃক দোষী না হওয়া পর্যন্ত কাউকে মাদক ও দেহ ব্যবসায়ী বলার এখতিয়ার কারও নেই। চেয়ারম্যান যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের শাস্তি হওয়া উচিত।’

নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ জানান, চেয়ারম্যান কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সঠিক নয়। ওই পরিবারের নামে মাদক ও দেহ ব্যবসার বিষয়ে এলাকায় ও থানায় কোনো অভিযোগ নেই।

এ মামলার আসামিরা মেয়ের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এবং আসামিরা পলাতক আছে। মেয়েটির পরিবারের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

Tags

Related Articles

Close