বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
ফুলবাড়ী দিবস পালন : ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসী সহ বিভিন্ন সংসগঠনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার (২৬ আগস্ট) ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ট্রাজেডির ফুলবাড়ী দিবস এর ১০ম বার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
দিবসটি পালনের জন্য তেল-গ্যাস-খনিজ স¤পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে সকাল সকাল ১০টায় নিমতলা মোড় থেকে পৌর শহরে শোক র্যালি বের করা হয়।
পরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ শেষে স্থানীয় নিমতলা মোড়ে ফুলবাড়ী শাখা তেল গ্যাস জাতীয় সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে কয়লাখনি বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, জ্বালানী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিডি রহমতউল্লাহ, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাদৎ হোসেন, গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ফ্রন্ট সভাপতি মোসরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েত সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা নূর আহমেদ বকুল, স্থানীয়দের মধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবলু, সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্ত, সদস্য হামিদুল হক, শফিকুল ইসলাম শিকদার, সঞ্জিত প্রসাদ জিতু প্রমূখ।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, দীর্ঘ ১০বছর ধরে এলাকাবাসী খনি বিরোধী আন্দোলন করছেন। খনি বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানামূখি চক্রান্ত চলছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নতুন করে আর কোন মামলা দায়ের করা যাবে না, বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত কয়লাখনি করার চক্রান্ত বন্ধ, এশিয়া এনার্জি বহিস্কারসহ তাদের সুবিধাভোগীদের গ্রেফতার এবং ৬দফা ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়নের দাবি জানান।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে এসে ফুলবাড়ীর বীর জনতাকে স্যালুট দিয়েছিলেন এবং ফুলবাড়ীবাসীকে প্রতিশ্র“তি দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি যদি ক্ষমতায় যান তাহলে ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন।
কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে আজও সেই প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন করেননি। ফলে আবারও এশিয়া এনার্জির কমিশন ভোগী দালালেরা নানাভাবে ফুলবাড়ীবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ফুলবাড়ীবাসীর ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এশিয়া এনার্জির দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এর আগে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সমাবেশে কমিটির পক্ষ থেকে ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সাইফুল ইসলাম জুয়েল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আগামী সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে ছয় দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে অক্টোবরের প্রথম থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চারটি উপজেলা, ইউনিয়নগুলোতে প্রতিবাদী সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পথসভা ও গ্রাম কমিটি গঠন করা হবে। ২৫ অক্টোবর উপজেলা ঘেরাও ও উপজেলা পরিষদে অবস্থান ধর্মঘট করা হবে।
এরমধ্যেও দাবি আদায় না হলে ২১ নভেম্বর ফুলবাড়ীর লোকজনকে নিয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান ধর্মঘট, ২১ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীতে অর্ধদিবস হরতাল এবং ওইদিন আগামী দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে পৌর মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সম্মিলিত অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৯টায় শোক র্যা লী বের করা হয়।
র্যালি শেষে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হয়। পরে সম্মিলিত অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য সচিব শেখ সাবীর আলীর সভাপতিত্বে স্থানীয় উর্বশী সিনেমা হলের সামনে খনি বিরোধী এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সম্মিলিত অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠনের আহবায়ক পৌর মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক সহ সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও দোকান কর্মচারি শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবটি পালন করা হয়।
উলেখ্য, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় স¤পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে দিনাজপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করে জনগণ।
এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন বিডিআর (বিজিবি) নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আল-আমিন, তরিকুল, সালেকীন নামে তিন তরুণ এবং আহত হন দু’শতাধিক আন্দোলনকারী।
৬ দফা চুক্তির মধ্যে ছিল এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার, দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ, নিহতদের স্মৃতিসৌদ্ধ নির্মাণ, গুলি বর্ষণে দায়ীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি ও আন্দোলনকারী জনগনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ধরনের মামলা প্রত্যাহার।