জাতীয়বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
নাগরপুর পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয়: স্কুল কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ
মুক্তার হাসান,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে সে¦চ্ছাচারিতা, চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ও অবৈধভাবে স্কুলের গাছ বিক্রি করে অর্থ আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই ¯ু‹লের অবকাঠামো উন্নয়নের অন্তরালে প্রতিষ্ঠানের পুরোনো কমপক্ষে ২৫টি মূল্যবান (কাঠ) গাছ কেটে বিক্রি করেছেন।
এ ছাড়া শতবর্ষী এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার এক মাত্র মাঠে পুকুর খননের নামে আগাম ১ লাখ টাকা নিয়ে স্থানীয় মুন ব্রিকসের (ইট খোলা) সাথে মাটি বিক্রির চুক্তি বদ্ধ হন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম খান।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুসে উঠে এবং স্থানীয় সকল শ্রেণী পেশার লোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে নাগরিক কমিটি গঠন করে সভাপতির অনৈতিক কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। নাগরিক কমিটির প্রতিবাদের মুখে এসময় স্কুল মাঠে পুকুর খনন থেকে পিছু হটেন সভাপতি মো. শামীম খান। শুক্রবার সরেজমিন বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটনার অনুসন্ধানে গেলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এ অভিযোগ তোলেন।
মাটি বিক্রি প্রসঙ্গে মুন ব্রিকসের মালিক মো. রতন মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চুক্তি পত্রের বাইরে অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় আমি আমার আগাম ১ লাখ টাকা ফেরত নিয়েছি। এব্যাপারে স্কুল কমিটির দাতা সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম সভাপতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের গাছ কেটে বিক্রি ও বিভিন্ন উপায়ে অর্থ আতœসাতের অভিযোগে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, ১৯১৬ সালে প্রায় ১৪ একর জমি নিয়ে উপজেলার পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন জমিদার বিন্দাবন চন্দ্র রাধা গোবিন্দর নামানুসারে পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে একই সাথে পুকুর, খেলার মাঠ ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের আবাসিক ভবনও নির্মান করা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মো. শামীম খান। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমান স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপর নজর পরে সভাপতি শামীম খানের। এর পর বেপরোয়া ভাবে গ্রাস করতে থাকে প্রতিষ্ঠানের অর্থ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পরিনত করে লুটপাটের আখড়ায়।
স্থানীয় মো. মহিউদ্দিন মোহন, ডা. নায়েব আলী, ওবায়দুর রহমান, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. আওলাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সভাপতি শামীম খান প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে বিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রাবাসের সামনে থেকে ৫টি স্কুলের পিছনের ১৭টি ও সামনের ৩টিসহ মোট ২৫টি মূল্যবান (কাঠ) গাছ বিক্রি করে যৎসামান্য অর্থ বিদ্যালয় তহবিলে দিয়ে পুরো টাকা পকেট ভারী করেন। এছাড়া তার বাহামের অশিক্ষিত এক ব্যাক্তিকে নিয়োগ কমিটিতে রেখে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সভাপতি শামীম খান স্থানীয় প্রভাবশালী ও দলীয় শেল্টারে হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। তিনি (সভাপতি) ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাকুটিয়া বাজারে স্কুলের জায়গায় তার ব্যাক্তিগত অফিস গড়ে তুলেছেন। সিমাহীন দুর্নীতি ও দাপটে অভিভাবক ও এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
নাগরিক কমিটির আহবায়ক ও পাকুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, শামীম খানের দুর্নীতির সীমা চরমে পৌছেছে। তার হাত থেকে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামীম হুদার সাথে তার সেল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা ভুল হয়েছে স্বীকার করে বলেন, পরিচালনা কমিটি রেজুলেশন করে গাছ কেটেছেন। অর্থের বিনিময়ে তার নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এব্যাপারে পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শামীম খানের সাথে তার ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে মোবাইল কেটে দেন। পূর্ব অনুমতি ছাড়া স্কুলের গাছ কাটা কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার নেই উলেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পুলক কান্তি সাহা জানান, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।