বিনোদনসর্বশেষ নিউজ
ওয়াজের মধ্যে অনেক হুজুররে দেখতেছি ভুল তথ্য দেয়ঃ ফারুকী
বিনোদন প্রতিবেদকঃ সম্প্রতি লালমনিরহাটে কোরান শরীফ অবমাননার গুজবে ঘটে যাওয়া জুয়েল হত্যাকান্ডের ঘটনায় উত্তাল সান্মাজিক গণমাধ্যম। ঠিক সেই মুহূর্তে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্ট্যাটাস তিনি দিয়েছেন ওয়াজ মাহফিলের বিধি বিধান কী সেসব জানতে চেয়ে।
গত ৩১ অক্টোবর ফারুকীর দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘একজন ডাক্তারকে চিকিৎসা করতে হইলে লাইসেন্স নিতে হয়! ভুল চিকিৎসা করলে তার বিচার হয়। এমন কি রাজনীতি করতে হইলেও নিবন্ধন করতে হয়! সিনেমা বানাইলে সেন্সর পাশ করতে হয়! কিন্তু ওয়াজের ক্ষেত্রে বিধান কি? যে ওয়াজ করতেছে তার ধর্মীয় জ্ঞান, মানবিক বোধ এইগুলা যাচাই করবে কে? সব হুজুরের এলেম বা মানবিক বোধ তো এক না!
ওয়াজের মধ্যে অনেক হুজুররে দেখতেছি ভুল তথ্য দেয়, জঘন্য ভাষায় ঘৃণা ছড়ায়, মিসোজিনি ছড়ায়, বিধর্মী বা তাদের দৃষ্টিতে ইসলাম বিরোধীদের পারলে সেখানেই শেষ করে দেয়! কথা হইলো, এই রকম ওয়াজে মানুষ বিগড়াইলে তার বিধান কী?
একবার ভাবেন, যে ছেলেটা ওয়াজে যায় এটা ভেবে যে হুজুর যা বলতেছে সেটাই ঠিক, ও ওখান থেকে কি শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছে! তারপর সেই শিক্ষার আলো সে যখন সমাজে ছড়াবে তখন সেই সমাজের চেহারা তো লালমনিরহাটের নারকীয় ঘটনার মতোই হবে!’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আরেকটা কথা, এই যে কথায় কথায় কারো মৃত্যুদন্ড চাওয়া, কাউরে কতল করতে চাওয়া এটা ফৌজদারি অপরাধ কিনা! ২০১০-য়ে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার রিলিজের পর যখন আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে মানব বন্ধন করতেছিলো একটা গ্রুপ (সম্ভবত হিজবুত তাহরীরের কিছু শিক্ষক এটার সাথে জড়িত ছিলো) এবং দাবী করতেছিলো আমার মৃত্যুদন্ড দিতে হবে, তখন আমি এক লইয়ার বন্ধুরে জিজ্ঞেস করছিলাম “এটা কি আমার বিরুদ্ধে ভয়োলেন্স ইনসাইট করা হচ্ছে না?” তখন সে আমারে বলছিলো, “তুমি তো জানোই, দোস্ত, দেশের নামে, ধর্মের নামে, জাতির নামে ভায়োলেন্স ইনসাইট করলে এটাকে বেশিরভাগ সময়ে মহৎ কাজ হিসাবে দেখা হয়।”
আমার মনে হয়, লালমনিরহাটের ঘটনারে আমরা একটা লাস্ট সিগন্যাল হিসাবে নিতে পারি সমাজটারে ঠিক করার। আমি মোটামুটি ফেয়ারলি ধার্মিক পরিবারে বড় হইছি! ফলে ওয়াজ মাহফিল প্রচুর শুনতে হইছে ছোটবেলায়! আমি মনে করতে পারতেছিনা ঐসব ওয়াজ মাহফিলে আজকের মতো ঘৃণা, বিদ্বেষ, কতল করার আহবান শুনছি কিনা! রাষ্ট্রকে এইগুলা বিবেচনায় নিতে হবে!
এবার সংশ্লিষ্ট আরেকটা বিষয়ে কথা বলতে চাই যাতে আমরা বুঝতে পারি আমরা আর কোথায় কোথায় ভুল করছি! আপনি যখন একজন অপরাধীর ক্রসফায়ার চাইবেন, তখন নিজের অজান্তেই মবরাজত্বের পক্ষে ভোট দিলেন যেখানে ভালো মানুষকেও ক্রসফায়ার দেয়া যাবে! মবরাজত্বে ক্রসফায়ার ভালো কাজ, অবিশ্বাসীকে খুন করা ভালো কাজ! আমরা সেই মবরাজের বাসিন্দা হইছি বেশ কিছুকাল ধরেই! এটার রাশ এখনই টানা জরুরী!
আর আমার লিবারেল বন্ধুদের ভাবতে বলবো, আমাদের কোন কোন ভুলে উগ্রবাদীদের লোক রিক্রুট সহজ হইছে, আমাদের কোন কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ দিয়া আমরা তাদেরকে শক্তিশালী করছি, সংগঠিত হইতে সাহায্য করছি! তার মানে বলতেছিনা, তাদেরকে বিনা চ্যালেন্জে ছেড়ে দেয়া উচিত! বরং আমি উল্টাটা বলতেছি! যখন তারা বলবে, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না! আমরা তাদের চ্যালেন্জ করবো এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পক্ষে কাজ করবো! তারা যখন বলবে, মেয়েরা চাকরী করতে পারবে না, আমরা তাদের চ্যালেন্জ করবো! অর্থাৎ যা কিছু আমাদের জাগতিক অগ্রগতির পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, তাকে আমরা চ্যালেন্জ করবো! কিন্তু একই সাথে একটু প্রাগমাটিকও আমাদের বোধ হয় হওয়া জরুরী! কোন যুদ্ধটা আমরা করবো আর কোনটা করবো না, কোন বল ব্যাটে খেলবো আর কোনটা ছেড়ে দিবো, এইটা বোঝাটা মনে হয় আমাদের দরকার! আমাদের পিচটার বাস্তব অবস্থাও মাথায় রাখা দরকার! মনে রাখা দরকার সব পিচে একইরকম ভাবে ব্যাট করা যায় না!
লালমনিরহাটের ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমুলক বিচার হউক! ভবিষ্যত লালমনিরহাট কান্ড থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাক! মবরাজ নিপাত যাক!’