বিনোদন
কাঠবিড়ালীর রিভিউনামা এবং একটি নেগেটিভ রিভিউ
ইফতেখার ইমাজঃ
সন্ধ্যায় স্পেশাল টেকনিক্যাল স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে দেখে শেষ করলাম এবছর প্রথম ছবি কাঠবিড়ালি, যা আগামী 17 তারিখ সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে।
.
পরিচালক রেদওয়ান রনি মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীকে সিনেমাটি নিয়ে বলেছিলেন এই সিনেমার মাঝে একটা সততা আছে।
আর আমার এই সিনেমা দেখার পর মনে হয়েছে সততা এবং ভালোবাসার জোরে কাঠবিড়ালি সিনেমা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিয়ামুল মুক্তা প্রমাণ করেছেন শুধুমাত্র সততা, ভালোবাসা এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে একটি সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব আর সেই জন্যে বাজেট মুখ্য বিষয় না।
পুরো সিনেমার গল্প উনি এত সুন্দর করে তৈরি করেছেন পর্দায় কোথাও ঝুলে যায়নি, কিংবা শেষে এসেও কোন তাড়াহুড়া করেননি। প্রচন্ড দক্ষতার সাথে তিনি সব কিছু ম্যানেজ করেছেন, যে পরিচালক প্রথম ছবিতে এত দক্ষতা দেখাতে পারে তার থেকে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু আশা করা যায়।
.
কাঠবিড়ালি ছবির গল্পটি আমাদের গ্রাম বাংলার খুবই পরিচিত গল্প, গ্রামবাংলার গল্প হলেও এমন গল্পের বিস্তার আমাদের ইটপাটকেলে শহরেও দেখা মিলে। গল্প পরিচিত হলেও আমরা এমন গল্প নিয়ে লোক মুখের সামনে কথা বলতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। এই ছবিটি দেখার সময় আপনার হয়তো অস্বচ্ছন্দবোধ তৈরি হতে পারে, আর এই অস্বচ্ছন্দবোধটাই এই সিনেমার গল্পের প্রাপ্তি।
.
পরিচালকের পাশাপাশি প্রতিটা অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিল খুবই ডেডিকেটেড, যেটি তাদের অভিনয়ে প্রতিমুহূর্তে প্রমাণ করেছিল।
প্রধান চরিত্রে আবির আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না, কিন্তু উনি এত সুন্দর অভিনয় করেছে আর এত সুন্দর ভাবে চরিত্রের সাথে মিশে গেছে, মনে হয়েছে এই চরিত্রটি শুধুমাত্র ওনার জন্যেই লেখা হয়েছে। সামনে উনাকে ব্যবহার না করতে পারলে এটা আমাদের দেশে পরিচালকদের একটা বড় ব্যর্থতা হয়ে থাকবে, উনাদের মত অভিনেতাদের আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দরকার।
.
স্পর্শিয়ার অভিনীত এটি মুক্তিপ্রাপ্ত তৃতীয় ছবি এবং প্রধান চরিত্রে দ্বিতীয়, খুব যত্নসহকারে নিজের অভিনয় করেছে। আবিরের সাথে জুটি হিসেবে খুব মানিয়েছে, গল্পেও খুব সুন্দর ভাবে মিশে গেছে। তবে এমন চরিত্রে আরেকটু লাইট মেকআপ হলে আমার কাছে ভালো লাগতো, আর ক্লোজআপে তার চোখের এক্সট্রা আইল্যাশ কিছুটা আমাকে বিরক্তি করলেও তারা অভিনয় সে বিরক্তি একটু কাটিয়ে দিয়েছে। সামনে বড় পর্দায তার আরো কাজ দেখার অপেক্ষায়।
.
ছোট পর্দায় নিয়মিত অভিনেতা শাওনের অভিনীত এটি প্রথম ছবি, প্রধান দুই চরিত্রের পাশাপাশি সমানতালে তার চরিত্রটি আগায়। আর তাকে দিয়েই গল্পের মোড় আসে এবং পুরোটা সময় সে নিজের সম্পূর্ণ টুকু দিয়ে অভিনয় করেছে। তার সিগারেট খাওয়ার ধরন কিংবা ডায়লগ ডেলিভারিতে সব কিছুতে নিজেকে আলাদা করতে পেরেছে।
.
খুব অল্প সময়ের জন্য অভিনেতা সজীবে কে দেখা গেলেও, উনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। এছাড়াও অন্যান্য ক্যারেক্টার আর্টিস্ট যারা ছিলেন তারা সবাই তাদের শতভাগ দিয়ে অভিনয় করেছেন।
.
সিনেমার গানগুলো ছিল খুবই দুর্দান্ত, পর্দায় গান শেষ হয়ে গেলেও গানের রেশ থেকে যায়। আর এর পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো।
.
এ সিনেমার আর একটি প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এই সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি, খুবই সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি হয়েছে। খুব সুন্দর গ্রাম বাংলা ফুটে উঠেছে অনেকদিন পরে বড় পর্দায়, তবে এরিয়াল কিংবা ড্রোন শট গুলি সুন্দর ফ্রেমিং হলেও খুবই লো রেজুলেশন এর ছিল, তবে সেটি খুব বেশি সমস্যা করনি গল্পে।
.
অবশেষে বলতে চাই প্রতিবছর আমরা স্বপ্ন দেখি এই বুঝি আমাদের সিনেমার চেহারা পাল্টে গেল, তবে এখন পর্যন্ত যা বুঝা যাচ্ছে মনে হয় ২০২০ সাল আমাদের দেশের চলচ্চিত্র পরিবর্তনের অন্যতম ভূমিকা হিসেবে রাখবে। আর সেটির যাত্রা শুরুর এ কাঠবিড়ালি দিয়ে, এই সিনেমাটি আরবান দর্শক যেমন উপভোগ করবে একই সাথে আমাদের গ্রাম বাংলার দর্শক আরো বেশি উপভোগ করবে। খুব চাইবো এমন সিনেমা যেন গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে যাক।
সকলের কাছে আশা করব আগামী 17 তারিখ আপনার পার্শ্ববর্তী সিনেমা হলে গিয়ে এই সিনেমাটি উপভোগ করবেন, trust me you will loved it and you won’t regret.
এস রাব্বিঃ নেগেটিভ রিভিউঃ ‘কাঠবিড়ালী‘
রেটিংঃ ২/১০
সেই কতদিন হলো মন খুলে একটা বাংলা সিনেমার প্রশংসা করি না।
নিয়ামুল মুক্তা পরিচালিত সিনেমাটার নাম ‘কাঠবিড়ালি‘ পেয়েছে আজ।
ট্রেইলরের পরে ‘সুন্দর কন্যা‘ কিংবা ‘পতি’ গান দেখে শুরু থেকে রাজ্যের আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো। তবে নতুন পরিচালক, সদ্যই সিনেমায় পা রাখা স্পর্শিয়া এবং একেবারে নতুন মুখ আসাদুজ্জামান আবীরসহ নানা কারণে ঠিক তেমন ভরসা শুরুতে আসেনি।
কিন্তু সিনেমা শেষে ষোলকলা পূর্ণ হলো, আমার প্রেডিকশনে ২০২০ হবে বাংলা চলচ্চিত্রের ঘুরে দাঁড়াবার বছর, এবং বছরের শুরুতে প্রথম পালক যোগ করল ‘কাঠবিড়ালি‘।
লিড রোলে আবীর কি যে অসাধারণ পারফর্মেন্স করেছে তা সিনেমা হলে একবার দেখলেই বুঝতে পারবেন। অভিনয়ে ম্যাচিউরিটির মাপকাঠিতে স্পর্শিয়ার এখন পর্যন্ত সেরা অভিনয় কাঠবিড়ালিতে, আমার মতে। ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ শাওন, সিনেমায় কি দুর্দান্ত..আহা! সজিব ভাই অসাধারণ.. সাথে ক্যারেক্টার আর্টিস্ট যারা ছিলেন, প্রত্যেকেই সর্বোচ্চটা দিয়েছেন, সেরা পারফর্ম করেছেন।
ট্রেলারে, গানে যারা পারপাটি প্রেমের গল্পের আঁচ করেছেন, তারা সিনেমা দেখতে বসে ধাক্কা খাবেন বার বার। কাঠবাড়ালি যতটা না প্রেমের গল্প, গ্রামীন গল্প তারচেয়েও বড় প্রতিশোধের গল্প,
আত্মদ্রোহের গল্প!
পরিচালক নিয়ামুল মুক্তাকে স্যালুট, প্রথম কাজেই বাজিমাত। সিনেমায় বাজেট যে ইস্যু না প্রমাণ করেছেন আপনি, প্রমাণ করেছে ‘কাঠবিড়ালি‘। চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি, সকলের পারফর্মেন্স, যাবতীয় আয়োজন ছাপিয়ে গিয়েছে এই সিনেমার গল্প! যারা এখন পর্যন্ত আমার এই লেখা পড়ছেন, Just Go for the কাঠবিড়ালি, Strongly recommended…
You will be amazed, you will feel the rawness, realism and finally a movie to remember named “কাঠবিড়ালি”
অর্জিনাল রেটিংঃ ৮/১০
রুম্মান রশীদ খানঃ
সত্যি বলতে, ‘কাঠবিড়ালী’ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র প্রত্যাশা ছিল না। দেশের ছবি দেখি, দেখতে হয়-এজন্যই আজ পরিবার নিয়ে টিকেট কেটে দেখতে এসেছিলাম। তবে…..শেষ দৃশ্য নেমে যাবার পর আমার ভেতর যে অজস্র অনুভূতি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল, তার সত্যিকার অর্থে কোনো ভাষা নেই।
এতটকু বলতে পারি, ‘কাঠবিড়ালী’ ছবির প্রতিটি ফ্রেমে আমি একটি টিমওয়ার্ক পেয়েছি। একজন নির্মাতার সততা, সাহস পেয়েছি। কাহিনী ও সংলাপে এতটা সাহস খুব একটা দেশীয় ছবিতে দেখা যায় না। যথাযথ বাজেট পেলে কী খেল’টাই না দেখাতে পারতেন পরিচাল; নির্মাতা নিয়ামুল মুক্তাকে সিনেমা দেখার আগে কখনো দেখিনি। আজ হল থেকেই বেরিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। এমন নির্মাতাদেরই তো সিনেমার পর্দায় দাপিয়ে বেড়ানো উচিত। হাসতে খেলতে কী একটা ছন্দময় সাহসী কবিতা দেখিয়ে দিলেন আমাদের, দেখবার আগে বিলক্ষণ ধারণা করতে পারিনি।
চিত্রগ্রহণ দেখে মনে হচ্ছিল এ ধরনের ছবির-ই আন্তর্জাতিক নানা ফেস্টিভ্যালে প্রতিনিধিত্ব করা উচিত। আমার দেশ, আমার বাংলা, আমার গ্রাম-কী সুন্দর ! কী জীবন্ত !!! আবহ সংগীত, গান, আলোর খেলা-কোনো কিছুই এখানে কৃত্রিম নয়।
আর অভিনয়শিল্পীরা? সবাই ভুলে গেছেন তাদের মূল পরিচয়। সবাই এখানে একেকটা চরিত্র। স্পর্শিয়াকে এতটা মায়াময়, এতটা দাপটের সাথে অভিনয় করতে কখনো দেখিনি। শাওন-রীতিমত বিস্মিত করেছেন। আবীর’কে দেখে শুরুতে ভাবছিলাম তাকে এ ছবিতে নেয়ার দরকারটা কি ছিল? আর শেষে এসে ভেবেছি তার মত অভিনেতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। শিল্পী সরকার অপু, হিন্দোল রায়, সজীব সবাই ভীষণরকম বিশ্বাসযোগ্য, সাবলীল।
Take a bow Mr Niamul Mukta and team for giving us one of the best film of recent time. Thank You !!!
‘কাঠবিড়ালি’র কথা- সৈয়দ নাজমুস সাকিব
একটি সিনেমাতে আমি সবার আগে যা খুঁজি, সেটি হচ্ছে নির্মাতার সততা। শুনলে হয়ত অনেকের হজমে কষ্ট হতে পারে, জাস্ট এই একটা কারণে রোহিত শেঠিকে আমার ভাল্লাগে কারণ নিজের ইন্টারভিউতে তিনি স্বীকার করে নেন- আমি এন্টারটেইনিং সিনেমা বানাতেই আসছি, আমি গাড়ি উড়াতেই আসছি। লাঞ্চবক্স টাইপ সিনেমা আমার খুব পছন্দের হলেও আমার সেটা বানানোর সামর্থ্য নেই, আমি সেটাই বানাই যেটাতে আমি বিশ্বাস করি।
বলা বাহুল্য, অনেক সিনেমাতেই আমি নির্মাতার সততা পাইনা। দেশীয় সিনেমার কথা বললে সেই পাওয়ার পরিমাণটা সম্ভবত সবচেয়ে কম। অনেকদিন পর সেই কম পরিমাণটা কিছুটা বাড়ল একটি বাংলাদেশি সিনেমা দেখে যার নাম- কাঠবিড়ালি। পরিচালনা করেছেন নিয়ামুল মুক্তা।
সিনেমার ফার্স্ট হাফ দেখে ভাবছিলাম গ্রামের সহজ সরল একটি প্রেমের গল্প নিয়েই শেষ হবে সিনেমাটি। সেকেন্ড হাফে হুট করে গল্প প্রবেশ করল রহস্য-থ্রিলার জোনে। আর ফিনিশিং অনেকটাই অপ্রত্যাশিত! এই গল্প গ্রামে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, তবে এইভাবে এই গল্প বোধকরি এর আগে কোন দেশীয় পরিচালক বলেননি। এখানেই কাঠবিড়ালি হয়ে ওঠে আলাদা সিনেমা, একান্তই নিয়ামুল মুক্তার নিজের সিনেমা। আর নিয়ামুল মুক্তা হয়ে ওঠেন একজন সৎ নির্মাতা।
সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে কলাকুশলী প্রত্যেকের প্রাণবন্ত অভিনয়! স্পর্শিয়া, শাওন, সজিব, হিল্লোলদা- সবাই চমৎকার। লিড রোলে অভিনয় করেছে নিজের ক্যাম্পাসের ছোট ভাই আবির। জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে পড়তে মুক্তমঞ্চে আমি আবিরের অভিনীত মঞ্চ নাটক দেখে মুগ্ধ হতাম, আর আজ সে নিজের প্রথম সিনেমা দিয়ে আমাকে মুগ্ধ করল। কে বলবে এটা তার প্রথম সিনেমাতে অভিনয়? সিনেমা শেষে মনে হচ্ছিল, লিড রোলে আবিরই পারফেক্ট। গ্রামের লোকেশন চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে এই সিনেমাতে। এরিয়েল শটগুলো চমৎকার ছিল।গানগুলো খুব শ্রুতিমধুর, মাটির গন্ধ আছে। কালার গ্রেডিং মনঃপুত হয় নি।
নিয়ামুল মুক্তা এর আগে কোন নাটক, শর্টফিল্ম বানাননি। রেদোয়ান রনির এডি ছিলেন। অনেকদিন কাজের পর শুরুতেই সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন- এটা শোনার পর রেদোয়ান রনি শুরুতেই ‘না’ করেছিলেন। গুরুর কথা না শুনে ২০১৭ এর মার্চে গোপনে নিজের গ্রামে এই সিনেমার শুটিং শুরু করেন মুক্তা। এরপরে একবার টাকা শেষ হয়, শুটিং বন্ধ হয়। এরপরে আবার টাকা জমানো, আবার অল্প করে শুটিং আর অবশেষে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তি! এতটা সময় হাল ছেড়ে না দিয়ে এই যে নিজের গল্পটাকে নিজের মত করে বলে যাওয়ার যে যুদ্ধ, সেটি পর্দায় দর্শক হিসেবে দেখতে পেয়ে তৃপ্তি লাভ করেছি। নিঃসন্দেহে এই যুদ্ধে মুক্তা জয়ী। আশার কথা হচ্ছে- খুব শীঘ্রই তিনি তার দ্বিতীয় সিনেমার কাজ শুরু করবেন। আশা করি এবার আগের চেয়ে একটু হলেও বেশি বাজেট পাওয়া একজন প্রযোজককে নিয়ে তিনি নিজের গল্পকে আরও চমৎকারভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরবেন!
কাঠবিড়ালি দর্শক হিসেবে আপনার সময় আর অর্থ ডিজার্ভ করে। বছরের শুরুতে এমন চমৎকার একটি সিনেমা উপহার দেয়ার জন্য কাঠবিড়ালি টিমকে অভিনন্দন!
রূপসী বাংলার এক কাঠবিড়ালীর গল্প – রহমান মতি
‘দাও ফিরে অরণ্য, লও এ নগর’ কবির এ বাণী আমাদের ভাবায়। আমরা আধুনিকতার জোরে যতই নগর সভ্যতার কথা বড়মুখ করে বলি না কেন আমাদের ভেতর গ্রামীণ চেতনা কাজ করে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে গ্রামেই ছুটে যাই কিংবা যাই সবুজের কাছাকাছি। দেশীয় চলচ্চিত্রের নাগরিক নির্মাণের আধিপত্য থেকে বেরিয়ে নতুন বছরের প্রথমেই দেখা মিলল নিটোল গ্রামীণ গল্পের ছবি ‘কাঠবিড়ালী।’
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় রূপসী হয়ে ওঠা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন এ ছবিতে জীবন্ত হয়ে থাকল।
২০২০ সালের প্রথম মানসম্মত সুনির্মিত ছবি ‘কাঠবিড়ালী।’ পরিচালক নিয়ামুল মুক্তা-র প্রথম ছবি। নিজের সিগনেচার রেখে নিজেকে চিনিয়েই নির্মাণ করলেন প্রথম ছবি।
‘কাঠবিড়ালী’ নামটি শুনলে মূলত চোখে ভাসবে গাছে গাছে ছুটে চলা দুরন্ত এক প্রাণির ছবি। চঞ্চল হয়ে ছুটে বেড়ানোই তার কাজ। কিন্তু গ্রামের ষোড়শী মেয়ের বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে যখন তাকে বলা হবে ‘কাঠবিড়ালী’ নামটি পাবে বিশেষত্ব। ছবির নাম নির্বাচন তাই সৃজনশীল।
কত মেয়ের গল্প ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে। তার মধ্য থেকে একজনের গল্প উঠে এসেছে এ ছবিতে। ‘ছবির সব চরিত্র কাল্পনিক’ জাতীয় লাইন যখন নিয়ম রক্ষার খাতিরে বলা হয় তারপরেও কারো না কারো সাথে মিলে যায় কারণ জীবনের গল্পই তো ছবিতে থাকে। ‘কাঠবিড়ালী’-র গল্পও তাই।
– আপনি বড় হইবেন কবে? আমার যে সংসার করতে ইচ্ছা হয়
( স্পর্শিয়াকে সামনে বসিয়ে)
– বউ, এই যে বাজার রান্না করো
– রান্না কেমন হইছে
– রান্না মজা হইছে
– আমার জন্য কি আনছ? স্বর্ণের দুল?
– আমার কি আর সেই সামর্থ্য আছে? তোমার জন্য এক টুকরো ভালোবাসা আনছি
স্পর্শিয়া-আবীরের চমৎকার রসায়নের চিত্র এটি। দুটি ছেলেমেয়ের নিষ্পাপ ভালোবাসার সাক্ষী যেন আকাশ ভরা সূর্য তারা। তারা হেসেখেলে বোড়ায়, প্রেমে ডুবে যায় একান্তে, মাথার উপর দিয়ে ট্রেন যায় আর তারা পুলের নিচে যুগল হয়ে যায়। এত ভালোবাসা কি সফল হবে না! নাকি জীবন তাদের জন্য রেখেছে অন্যকিছু!
পরিচালক ছবিকে বুদ্ধিমত্তার সাথে সাজিয়েছেন। প্রথমার্ধ্বের নিটোল প্রেমকাহিনীর সাথে বিরতির পরের দুর্দান্ত থ্রিলার ছবির গল্পকে স্ট্রং করেছে। প্রথমার্ধ্বের সবুজ গ্রামজীবনের সাথে বিরতির পরে রাতের দৃশ্যের সাথে ভয়, টেনশন, থ্রিলিং-এর যে সম্পর্ক তিনি বুঝিয়েছেন এটা প্রশংসনীয়। রেদওয়ান রনি-র সহকারী ছিলেন পরিচালক নিয়ামুল মুক্তা ‘কাঠকুড়ালী’-র গল্পের প্যাটার্ন সাজানোর কাজে সেই ছাপ আছে। নির্মাণে আরো সচেতন তিনি। তাঁর নির্মাণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক পয়েন্ট আউট করে বলা যাক –
১. প্রেম ও বিশ্বাসের গভীরতা এবং দূরত্ব দেখিয়েছেন।
২. বন্ধুত্বের ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই দিকই তুলে ধরেছেন।
৩. দিন ও রাতের ভিন্ন মিনিং তুলে ধরেছেন গল্পের প্রেক্ষাপটে। কখনো কখনো দিনেই নেমে আসতে পারে রাতের অন্ধকার যদি জীবন জটিল হয়ে যায়। এটা ছিল চমৎকার অবজারভেশন।
৪. সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন। যেমন – শৈশবের বিভিন্ন উপকরণ, নারিকেলের খোলে করে টেলিফোন বানিয়ে প্রেমের কথা বলা, মার্বেল খেলা, কুস্তি, গ্রামের মেলায় জিলাপী খাওয়া ঘূর্ণি ওড়ানো, রুমালে প্রেমিক প্রেমিকার নাম সেলাই করা, যাত্রা দেখানো, বিয়েবাড়ির গেট তৈরি, খুর্মা বিতরণ ইত্যিদি।
৫. প্রথম দৃশ্যেই ছবির আকর্ষণ তৈরি করতে পেরেছেন আর শেষ দৃশ্যটি পুরস্কার পাবার যোগ্য।
৬. গল্পকে এনজয় করতে তিন-চারটা শক্ত টুইস্ট রেখেছেন। দর্শককে কনফিউজড করতে পারবেন এটা বলা যায়।
৭. ক্লাইমেক্সের দৃশ্যায়ন ও সংলাপ স্ট্রং।
৮. মূল চরিত্রের পরিণতির সাথে অন্যান্য চরিত্রকে পরিণতি দিয়েছেন লজিক্যালি।
৯. যৌনশিক্ষার অভাব চলচ্চিত্রে আমাদের এখানে আছে। এ ছবিতে গল্পের ডিমান্ডে আছে এবং অ্যাডাল্ট করেই দেখিয়েছেন পরিচালক।
১০. ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, দৃশ্যধারণ (ড্রোন) প্রশংসনীয়। বিশেষ করে পুকুরে এক নাগাড়ে ডুব দেয়ার লং শটের সাথে মানুষের সাইকোলজি (রাগ, ঘৃণা) দেখানোটা ইউনিক ছিল।
দর্শকভেদে বিরতির পর ছবির থ্রিলিং মেজাজে তারতম্য থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু এনজয় করার মতো অবশ্যই ছিল।
অর্চিতা স্পর্শিয়া নামভূমিকায় ছবির প্রাণ। নিজেকে নতুন করে চেনানোর মতো অভিনয়টা করে গেছে। তার ক্যারিয়ার সামনে আরো উজ্জ্বল। নতুন মুখ আসাদুজ্জামান আবীরও ইম্প্রেসিভ। শেষের আধঘণ্টায় নিজেকে ঢেলে দিয়েছে প্রথমদিকের ক্যাজুয়ালি অভিনয়ের তুলনায়। নায়কের চোখের ব্যবহার দর্শককে কানেক্ট করতে দেরি করাতে পারে তবে তার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। এ দুজন ছবির সহকারী পরিচালকের কাজও করেছে এবং এটা বাড়তি যোগ্যতা ছিল তাদের। সৈয়দ জামান শাওনের অভিনয়ও প্রশংসনীয়। শিল্পী সরকার অপুর তুলনা তিনি নিজে। আজগর চরিত্রের অভিনেতা কিছুটা লাউড অ্যাকটিং করাতে ওভারঅল একইরকম ছিল। একজন অভিনেতার মুখে ‘ছেলেমেয়েকে ভালো রাখা মা-বাবার দায়িত্ব, দেশের পুলিশের নয়’ সংলাপটি ভালো ছিল।
ছবির গান ‘সুন্দর কন্যা’ বেস্ট। গানের কথা, গায়কীতে বাউল ধাঁচ আকর্ষণীয়। ‘পতি’ শিরোনামের গানটি একটু ভিন্ন।
আর হ্যাঁ, আমাদের দেশ যে কতটা সুন্দর ‘কাঠবিড়ালী’ ছবি আরেকবার প্রমাণ করল।
রেটিং – ৮/১০
নিয়ামুল মুক্তা- এই নামটা গতকালের আগে কখনও শুনিনি – সাইদুজ্জামান আহাদ
‘কাঠবিড়ালী’ দেখতে দেখতে একটা কথা শুধু মাথায় ঘুরছিলো- কি দিন আসছে, স্পর্শিয়ার অভিনয়ও মুগ্ধ হয়ে দেখা লাগে! অভিনয়ের প্যারামিটারে আসাদুজ্জামান আবির বা শাহরিয়ার সজীবরাও দারুণ, কিন্ত আমি অবাক হয়েছি শাওন ছেলেটাকে দেখে। দারুণ অভিনয় করেন এই তরুণ, খুবই ন্যাচারাল এক্সপ্রেশান, জড়তা ছিল না কোথাও। ডায়লগ ডেলিভারিও আরোপিত নয়, সংলাপগুলো ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসে, জিভের ডগা দিয়ে কষ্ট করে উচ্চারণ করতে হয় না।
নিয়ামুল মুক্তা- এই নামটা গতকালের আগে কখনও শুনিনি। উনি ভদ্রলোক নাকি ভদ্রমহিলা সেটাও জানতাম না। ‘কাঠবিড়ালী’ সিনেমার পরিচালক তিনি, গল্প বলার ধরণটা চমৎকার। তার যে জিনিসটা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে, সেটা হচ্ছে নিজের নির্মাণের প্রতি তার সততা। দর্শক কোন দৃশ্য কীভাবে নেবে, সেন্সর কতটুকু কেটে ফেলে দেবে এসব সাত-পাঁচ না ভেবে তিনি গল্পটাকে এগিয়ে নিয়েছেন স্বাধীনভাবে। নির্মাতার স্বাধীনতাটা এজন্যে দরকার, খুব বেশি করেই দরকার। সিনেমাটার পেছনে ভারী কোন নাম থাকলে এটা সম্ভব হতো না বোধহয়।
গ্রামীন পটভূমির সাদামাটা রোমান্টিক গল্পটা যে হুট করেই অন্য একটা ধরণে রূপ নেবে সেটা কল্পনা করার কোন অবকাশ মুক্তা একদমই রাখেননি। গল্পটা মোড় নেয়ার আগ পর্যন্ত এরকম কিছু মাথায়ও আসেনি। সিনেমা শেষ হওয়ার অনেক আগেই নিজেরা বলাবলি শুরু করেছিলাম, এই লোকের সাহস আছে! সেই সাহসের নমুনা নিয়ামুল মুক্তা সিনেমার শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছেন, অন্যের চাহিদার সঙ্গে আপোষ করেননি, যে গল্পটা তিনি বলতে চেয়েছেন, সেখান থেকে বিচ্যুত হননি একটুও। কাউকে খুশি করার পথে না হেঁটে তিনি বরং নিজেকে খুশি করতে চেয়েছেন, সেটাই আমাকে তৃপ্ত করেছে বেশি।
এই সিনেমায় অনেকদিন পরে গ্রামের আবহটা পেলাম, ‘মাটির প্রজার দেশে’র পরে এই প্রথম। বাংলা সিনেমা থেকে তো গ্রাম হারিয়েই গেছে বলতে গেলে! ক্যামেরার কাজ কিছু জায়গায় ভালো, কিছু জায়গায় বিলো এভারেজ। ড্রোন শটের আধিক্য চোখে লেগেছে, একসময় তো মনে হচ্ছিলো ড্রোনের ব্যাটারির চার্জ ফুরাচ্ছিলো না বলে জোর করেই ড্রোনের ওপরে ক্যামেরা তুলে দেয়া হচ্ছিলো বোধহয়! কালার গ্রেডিং ভালো লাগেনি, সেটা অবশ্য পর্দার কারণেও হতে পারে।
কাঠবিড়ালী খুব বেশি মানুষ হয়তো দেখবে না, পপুলার জনরার ফিল্ম এটা না। গল্পনির্ভর সিনেমা এই দেশের দর্শক সাদরে গ্রহণ করা শুরু করেনি এখনও। তবে বছরশেষে যখন ২০২০ সালের সিনেমাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, সালতামামি হবে, তখন কাঠবিড়ালি সেখানে জায়গা করে নেবেই, আমি অন্তত নিশ্চিত এই ব্যাপারে।
মুমতাহিনা স্মৃতি
কাঠবিড়ালী ❤❤❤
নির্মাতা -নিয়ামুল মুক্তা
আমি সিনেমা সম্পর্কে এতো কিছু বুঝি না। কিন্তু এই সিনেমাটা আমার অনেক ভালোবাসার অনেক আদরের। 😇
আজকে “স্টার সিনেপ্লেক্সে” “কাঠবিড়ালী”র ফাস্ট ডে ফাস্ট শো টা দেখলাম।😁
এছবির ভিজ্যুয়াল, ভাষা, সংলাপ প্রমাণ দেবে এটি গ্রামীণ পটভূমিতে তৈরি। সিনেমার ক্যামেরার কাজ, ব্যাকগ্রাউন্ড সাউইন্ড, গান, সবকিছুই গল্পের সাথে খুব সুন্দর মিলেছে। সিনেমাটার ড্রোন শট গুলো ছিলো অসাধারণ। গ্রাম বাংলার অপরূপ একটা সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে এখানে।💚
সিনেমার মূল চরিত্র আবির ভাইয়া (হাসু) অসাধারণ অভিনয় আর স্পর্শিয়া আপুকে(কাজল) গ্রামীন মেয়ের চরিত্রে দেখে চোখে কেমন যেনো আরাম লেগেছে।সবার অভিনয় আমার চোখে যথেষ্ট ভাল লেগেছে।💜
ছবিতে আমি খুব ভালো করে খুঁজেছি দেখেছি পুরো ছবিটাই মায়ায় ভরপুর, এটা একটা অন্যরকম মায়া।🖤
সত্যিই সিনেমাটিতে একটা সততা আছে।💛
যেহুতু এটা নতুন সিনেমা এবং আমাদের ভালোবাসার সিনেমা তাই গল্প সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলবো না।সবাই সিনেমাটা হলে এসে দেখবেন।😍
অনেকেই নিজেকে খুঁজে পাবেন এই ছবিতে😋
রেটিংঃ ৯.৫/১০
এর আগে কখনো রিভিউ লিখিনি। লেখার ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
রিভিউ – কাঠবিড়ালি (২০১৯) – নাফিস সাদিক তূর্য
মেয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো – “আচ্ছা আমি যদি কখনো তোমাকে সন্তান দিতে না পারি, যদি আমার শরীর জৌলুশ হারায়, যদি আমি এখনকার মত সুন্দরী না থাকি, তাহলে কি তুমি আমাকে ভালোবাসবে?
ছেলেটা চুপ ছিলো দীর্ঘক্ষণ । নিস্তব্ধতা ভাঙ্গলো ছেলেটিই… ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা আমার যদি বাকি জীবন পকেটে টাকা না থাকে, যদি নিজের ঘর না থাকে, তাহলে কি তুমি আমাকে ভালোবাসবে?
প্রথম প্রেম হলে হয়ত আবেগের বশে দুজনই চট করে বলে দিতে পারতো, হ্যাঁ ভালোবাসবো… কিন্তু বাস্তবতা তেমন ছিলো না। এবার মেয়েটিও স্তব্ধ হয়ে ছিলো। মানুষ মাত্রই সর্বদাই স্বার্থপর চরিত্র।
” কাঠবিড়ালি ” সাধারণ গ্রাম্য প্রেমের গল্প হবে ভেবেছিলাম। ছেলেটাকে উষ্কখুষ্ক, সাধারণ, সরল একটা পরিচয় দেয়ার যে প্রচেষ্টা পরিচালক করেছে, সেটায় পরিচালক মোটামুটি সফল। ছেলেটি যেমন নিজের সম্পত্তি অন্যের কব্জায় দিয়েও কিছু ভাবে নি, তেমনি প্রচন্ডভাবে পানিতে নেমে নিজের মস্তিষ্ক পরিষ্কারের দৃশ্য নায়ককে এক অন্য পরিচয় দিয়ে ফেলে। আবার গ্রামের মানুষের খোঁজখবর নেয়ার মাধ্যমে নায়কের মাঝে চমৎকার সরলতা এবং ভালোবাসা ফুটে ওঠে…
মেয়ের গল্পও প্রায় একই, অসচ্ছল পরিবারের সদস্য হয়েও নায়িকা সহজসরল এই ছেলের সাথে জীবন চলতে শুরু করে। এর পিছনে ছিলো ছেলের অসম্ভব সরল প্রেম, আর মেয়ের মুগ্ধতা… ছেলের ফিরে যাওয়ার পথে চেয়ে মুগ্ধ হতে থাকা মেয়েটা স্বপ্ন দেখতে থাকে সংসারের। একদিন সংসারের স্বপ্ন তার বাস্তব হয়।
জীবন বদলায়। স্বপ্ন গুলো রঙ্গিন হয়। সরলতায় মুগ্ধতা কমে যেতে থাকে। প্রচন্ড ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরা মানুষকেও পানসে লাগে নিজের শারিরীক আকাঙ্খার কাছে। জীবনের অর্থগুলো বদলাতে থাকে। পূর্বের এক হাত ধরে মুগ্ধ হওয়া সংসার আর ভালো লাগে না। ভালোবাসার মানুষের হাতের চেয়ে শরীরের ভালোবাসাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা মোটেও “কাঠবিড়ালি” এর গল্প না, বরং আমাদের সমাজের নিত্য নতুন আকাঙ্খায় ডুবে থাকা যুবক-যুবতীর গল্প।
এই লেখার শুরু করেছিলাম দুইটি ছেলে মেয়ের প্রশ্ন দিয়ে। প্রশ্ন গুলোও কাঠবিড়ালির নয়। প্রশ্নগুলো আমাদের ডিজিটাল সমাজের। ভালোবাসা আর শারিরীক চাহিদার মাঝে তফাত করতে না পারা মানব-মানবী সম্পর্কে জড়িয়ে ভালোবাসা বিক্রি করে। শারিরীক চাহিদা প্রয়োজনীয়, কিন্তু সেটা যদি প্রিয় ভালোবাসার মানুষের গুরুত্বের চেয়ে অধিক হয়ে যায়, না ভালোবাসাই ভালো। এরচেয়ে এই শহরে পতিতালয় বাড়ুক, মিথ্যে প্রেমের স্বপ্নে চুরমার না হোক এই সমাজের কেউ।। সস্তায় বিকানো ভালোবাসার চেয়ে আক্ষরিক ভাবেই পতিতালয়ে ভালোবাসার মূল্য বেশি… যদি সম্পর্ক এত সস্তায় বিকানোর প্রয়োজন হয়, ভালোবাসার কথা বলে আর মুগ্ধতা না আসুক, মুগ্ধতা আসুক পতিতালয়ের কোনো রুমে…
এই লেখা শেষ করছি আমাদের কাঠবিড়ালি গল্পের নায়কের বিষন্ন এক ডায়ালগের মাধ্যমে…
“মানুষের প্রিয় বস্তুও নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের ফেলে দিতে হয়…”
ঠিক যেমনি ফেলে দিতে হয় ভালোবাসা নামের নষ্ট মানুষদের…
মুভি- কাঠবিড়ালি (২০১৯)
ডিউরেশন – দুই ঘন্টার কিছু কম… (শিওরটা জানি না)
ব্যক্তিগত রেটিং- ৭/১০
মতামত : দেখার মতই ছবি… নতুন বছরের ভালো একটা চমক… দৃশ্যায়ন গুলো যথেষ্ট ভালো ছিলো, যদিও একই দৃশ্য কয়েকবার ব্যবহার করে পরিচালক কষ্ট কমিয়েছেন। তবে বোরিং লাগে নি… শুরুর দিকে অসম্ভব রকমের রোমান্টিকতা ছিলো, পরিচালক অসম্ভব সুন্দর ভাবে সফট পর্ন হিসাবে চালিয়ে দিতে পারেন… গফ নিয়ে সিনেমা দেখা শুরু করলে স্কিনের বাইরেও আলাদা আর্ট ফিল্ম শুরু হওয়ার সম্ভবনা আছে। শেষের দিকে সামাজিক বাস্তবতায় খারাপ লাগা আছে। সমাজের পুরুষ পতিতা আর নারী পতিতা উভয়ের বাস্তব চিত্র দৃশ্যায়নে পরিচালক সফল।