আন্তর্জাতিকখেলাধূলা

‘প্রতিশোধে’র ম্যাচে টাইগারদের জয়

টস জিতে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

শুরুতেই স্বাগতিকদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তামিম ও সৌম্য। উমেশের করা ষষ্ঠ ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান নেন তামিম। ৫.৪০ থেকে রান রেট বেড়ে হয় ৭.৫০; এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তামিম-সৌম্যকে। উমেশের সেই ওভারের পর তামিম নিজেকে একটু সামলে রাখলেও অতিথি বোলারদের ওপর চড়াও হন সৌম্য। তাতেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো শতরানের উদ্বোধনী জুটি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে সৌম্যর (৫৪) রান আউটে। তার ৪০ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি সাজানো ৮টি টি চার ও একটি ছক্কায়।

ষোড়শ ওভারে বৃষ্টির বাধায় এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার আগেই অর্ধশতকে পৌঁছান তামিম। ওয়ানডেতে এ নিয়ে মাত্র পঞ্চমবার একই ম্যাচে অর্ধশতক পেলেন বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

ষোড়শ ওভারে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় বাংলাদেশের রান রেট ছিল আট ছুঁই ছুঁই। আবার খেলা শুরু হওয়ার পর অশ্বিনের ৫ ওভারের এক স্পেলে তামিম, লিটন দাস ও মুশফিকের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।

৬০ রান করা তামিম এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে আউট হন। একইভাবে আউট হন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিক। আর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন অভিষিক্ত লিটন।

১২৩ রানে ১ উইকেট থেকে ১৪৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়া বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সাকিব ও সাব্বির রহমানের ব্যাটে। তাদের ৮৩ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। জাদেজার বলে সাব্বির বোল্ড হলে ভাঙে ১৪.২ ওভার স্থায়ী জুটি। ৪১ রান করা সাব্বিরের ৪৪ বলের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।

এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি সাকিব (৬৮ বলে ৫২ রান)। অর্ধশতকে পৌঁছে উমেশ যাদবের বাজে একটি বলে জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।

নাসির ২৭ বলে ৩৪ রানে আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের তিনশ’ রানে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা জাগে। তবে শেষ ওভারগুলোয় বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান না থাকার পরও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে তারা।

শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ২১ রান করেন মাশরাফি। তার দৃঢ়তায় ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিনশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ।

ভারতের পক্ষে ৫১ রানে ৩ উইকেট নেন অফস্পিনার অশ্বিন। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন উমেশ ও ভুবনেশ্বর।

বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৩০৭ রানের জবাবে ৪৬ ওভারে ২২৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত।

শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে রোহিত শর্মার ৯৫ রানের জুটিতে শুরুটা ভালো হয় ভারতের। তাসকিন আহমেদের বলে ধাওয়ানের গ্লাভস ছুঁয়ে আসা বল গ্লাভসবন্দি করেন মুশফিক। তাতেই ভাঙে ১৬ ওভার স্থায়ী জুটি। পরের ওভারে বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে দিয়ে ভারতকে বড় একটা ধাক্কা দেন তাসকিন।

পরের ওভারে আবার আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। নাসিরের দুর্দান্ত এ ক্যাচে ফিরে যান অজিঙ্কা রাহানে।
রান নিতে গিয়ে বোলার মুস্তাফিজকে ধাক্কা দেওয়া মহেন্দ্র সিং ধোনি বেশিক্ষণ টেকেননি। বোলিংয়ে এসেই তাকে বিদায় করেন সাকিব আল হাসান।

বিনা উইকেটে ৯৫ থেকে ১২৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ভারত তাকিয়ে ছিল সুরেশ রায়না ও রবিন্দ্র জাদেজার দিকে। তাদের ৬০ রানের জুটিতে লড়াইয়ে থাকে অতিথিরা।

পাওয়ার প্লের তৃতীয় ওভারে (৩৭) বোলিংয়ে এসে মুস্তাফিজ আনন্দ শত গুন বাড়িয়ে দিতে রায়না ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফেরান পরপর দুই বলে।

পরের ওভারে ফিরে জাদেজাকে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করে নিজের পঞ্চম উইকেট নেন মুস্তাফিজ।

শেষ পর্যন্ত ৫০ রানে ৫ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজই বাংলাদেশের সেরা বোলার।

অধিনায়ক মাশরাফির বলে মোহিত শর্মার বল গ্লাভসবন্দি করে পঞ্চম ডিসমিসালেল কৃতিত্ব দেখান মুশফিক। এরপর সাকিব উমেশ যাদবকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের চতুর্থ জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ৩০৭ (তামিম ৬০, সৌম্য ৫৪, লিটন ৮, মুশফিক ১৪, সাকিব ৫২, সাব্বির ৪১, নাসির ৩৪, মাশরাফি ২১, রুবেল ৪, তাসকিন ২, মুস্তাফিজ ০*; অশ্বিন ৩/৫১, ভুবনেশ্বর ২/৩৭, উমেশ ২/৫৮, জাদেজা ১/৪৮, মোহিত ১/৫৩)

ভারত: ৪৬ ওভারে ২২৮ (রোহিত ৬৩, ধাওয়ান ৩০, কোহলি ১, রাহানে ৯, রায়না ৪০, ধোনি ৫, জাদেজা ৩২, অশ্বিন ০, ভুবনেশ্বর ২৫*, মোহিত ১১, উমেশ ২; মুস্তাফিজ ৫/৫০, তাসকিন ২/২১, সাকিব ২/৩৩, মাশরাফি ১/৫০)

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)

Related Articles

Close