বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
টাঙ্গাইলে মৌচাষে অভাবণীয় সাফল্য : ঘুচছে বেকারত্ব
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে, নিউজরুমবিডি.কম: টাঙ্গাইল জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এবারে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষা থেকে মধু আহরণের জন্য মৌ-চাষীরা বক্স স্থাপন শুরু করেছেন। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বক্স স্থাপন করা হয়েছে। একটি বক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে মধু পাওয়া যাবে চার কেজি করে। মৌচাষ করে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন চাষীরা, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে সরিষা ক্ষেতে মধু আহরণের জন্য বক্স স্থাপন করেছে। জেলার প্রায় সব উপজেলায় চলছে এ কার্যক্রম। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের ভায়েটা, বড়বাশালিয়া, দেলদুয়ারের বান্ধাবাড়ী,ও মগড়া গ্রামে একশটি করে, হটিবাড়িতে প্রায় ৪০টি ও গালা ইউনিয়নের গালা গ্রামে ১১৫টি মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। সদরের হুগড়া ইউনিয়নের হুগড়া বাজার এলাকার চকে প্রায় ৫০টি বক্স স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে এসব এলাকায় এরকমই চিত্র দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক আবুল হাশিম, জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলাম সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল সদরের উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল জলিল মোলা, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা মৌচাষীদের মধু সংগ্রহের কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক আবুল হাশিম বলেন, এখন পর্যন্ত ৩ হাজার বক্স স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের টার্গেট ৬ হাজার বক্স স্থাপন করা। সরিষা ফুল দুই মাস থাকে। প্রতি সপ্তাহে একটি বক্সে চার কেজি মধু পাওয়া যায়। এক কেজি মধুর দাম ৩০০ টাকা। ৬ হাজার বক্স স্থাপিত হলে এখান থেকে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে পারবে মৌচাষীরা। অন্য দিকে মধু আহরণে বেকারত্ব দূর হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মধু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। মৌবক্স বসানোর কারণে পরাগায়নে সুবিধা হবে। এর ফলে সরিষার উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেড়ে যাবে। আমরা কৃষকদের মধু চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর ইউনিয়নের গালা, বড়বাশালিয়া, ছোটবাশালিয়, হটিবাড়ি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার মধুচাষীরা সরিষা থেকে মধু আহরণের জন্য বক্স স্থাপন করেছেন।
হটিবাড়িতে সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ দেখতে গেলে কথা হয় মৌচাষী ও প্রশিক্ষক শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি সরিষা থেকে মধু আহরণের জন্য বেসরকারি সংস্থা সিএমইএস এর মাধ্যমে মৌচাষীদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকি। অনেক বেকার যুবক মৌচাষে এগিয়ে আসছে। এতে বেকারত্ব দূর হচ্ছে। আমি ২০০০ থেকে ২৫০০০ শতাংশ জমিতে সরিষা থেকে মধু আহরণ করছি। বিভিন্ন উপজেলায় এ কাজ করি। আমি ১২ বছর ধরে এ কাজে নিয়োজিত।’
ছোট বাসালিয়ার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সরিষা ক্ষেতে ১২০টি বক্স স্থাপন করেছি। সরিষা থেকে মধু আহরণ আমরা ছয় মাস করি। অন্য ছয় মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাওয়ায়ে মৌমাছিদের রাখা হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু আহরণের উপযুক্ত সময়।’
তিনি আরো বলেন, ‘খরচ বাদে আমার ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। আমি টাঙ্গাইল ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় সরিষা থেকে মধু আহরণ করে থাকি। মধু আমরা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করি। যে কেউ ইচ্ছা করলে সরিষা থেকে মধু আহরণ করে লাভবান হতে পারেন।’